জয়তুন তেল ব্যবহারের নিয়ম

আমাদের প্রত্যেকেরই দৈনন্দিন জীবনের সাথে, কোন না কোন তেল জড়িত। আমাদের প্রত্যেক পরিবারের দৈনন্দিনের রান্নার কাজে, তেল প্রয়োজন, এবং আমরা সেই তেল খেয়েও থাকি। বাজারে নামিদামি তেলের ব্রান্ডের সাথে, জয়তুন তেল অর্থাৎ অলিভ অয়েল নামেও এক ধরনের তেল পাওয়া যায়। হয়তো অনেকেই জয়তুন তেল খেয়ে থাকি, তবে এই তেল খাওয়ার পাশাপাশি, চুল ও ত্বকের যত্নেও ব্যবহার করা যায়, তা হয়তো আমরা অনেকে যানি না। আমাদের শারীরিক সুস্থতা, চুল ও ত্বকের পুষ্টি যোগাতে ভালোই ভূমিকা পালন করে জয়তুন বা অলিভ অয়েল। 

জয়তুন

আজকের এই পোস্টটিতে আপনাদের সাথে আলোচনা করার চেষ্টা করব জয়তুন তেলের ব্যবহার সম্পর্কে। জয়তুন তেলের ব্যবহারের উপকারিতা, আমরা কত ভাবে উপভোগ করতে পারি, এ ব্যাপারে খুঁটিনাটি জানার চেষ্টা করব, মনোযোগ সহকারে পড়ুন। 

পোস্ট সূচিপত্রঃ জয়তুন তেল ব্যবহারের নিয়ম

জয়তুন তেলের পুষ্টিগুন সম্পর্কে যানা যাক

জয়তুন শব্দটি আরবি শব্দ, ইংরেজিতে বলা হয় অলিভ অয়েল। মধ্য আমেরিকাতে সবচেয়ে বেশি জয়তুন ফল উৎপাদিত হয়। আমাদের মধ্যে অনেকেই জয়তুন কে, জলপাইয়ের সাথে তুলনা করে। তবে জলপাই এবং জয়তুন দুটি দেখতে একই রকম হলেও, দুটির বৈজ্ঞানিক নাম ভিন্ন। এছাড়া এই দুটি ফলের মধ্যে সাধের ও গঠনগত কিছু পার্থক্য রয়েছে। যাই হোক আমাদের জানা দরকার জয়তুন তেলের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে। জয়তুন তেল আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে, খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

জয়তুন তেলে, ক্যালোরির পরিমাণ রয়েছে অনেক বেশি, এই তেলে, স্বাস্থ্যকর মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণও অনেক বেশি। জয়তুন বা অলিভ অয়েল তেলে ভিটামিন ই, ভিটামিন কে, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফ্যাটি অ্যাসিড ও অ্যামাইনো এসিডের মত পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান। এছাড়াও এই তেলে খনিজ উপাদান রয়েছে, আয়রন, পটাশিয়াম ও ফসফরাস। আমাদের শারীরিক সুস্থতা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে, জয়তুন বা অলিভ অয়েল তেলের এই সকল পুষ্টি উপাদানের গুরুত্ব বুঝতেই পারছেন। 

জয়তুন তেল ব্যবহারের নিয়ম  

আজকের আর্টিকেলটির মূল বিষয়, জয়তুন তেল ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে। আর্টিকেল টিতে ইতিমধ্যে, জয়তুন তেলের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দেওয়া হয়েছে। আপনাদের হয়তো বুঝতে বাকি নেই, এই সকল পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। জয়তুন তেলের পুষ্টিগুণ সম্পূর্ণরূপে পাওয়ার জন্য, আপনি চাইলে এই তেল খেতে পারেন, ত্বকে ব্যবহার এবং চুলের যত্নেও ব্যবহার করতে পারেন। চলুন তাহলে এখন আমরা, এর ব্যবহার গুলি, খাওয়ার নিয়ম এবং উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নি।

জয়তুন তেল যেভাবে খাওয়া যায়ঃ

জয়তুন তেলের পুষ্টিগুণ পেতে এটাকে সরাসরি খেতে পারেন। এজন্য চাইলে আপনি প্রতিদিন এক থেকে দুই চামচ তেল গিলে খেয়ে ফেলতে পারেন। তবে খালি পেটে খেলে এর উপকারটা খুবই ভালো পাওয়া যায়। প্রতিদিন সকালে অল্প পরিমাণে তেল উস্ন গরম পানির সাথে লেবুর রস মিশেও খাওয়া যেতে পারে। চাইলে সালাদের সাথেও ১ থেকে ২ চামচ তেল মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এছাড়াও অন্যান্য খাবার যেমন পাচতা, স্যুপ বা ভাজাপোড়া কোন কিছুর সাথে মিশে খাওয়া যেতে পারে।যদি আপনার ইচ্ছা হয় পাউরুটির সাথে মিশেও জয়তুন তেল বা অলিভ অয়েল খাওয়া যায়। 

জয়তুন তেল খেলে যে সকল উপকার পাওয়া যায়ঃ 

জয়তুন তেলের ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কের আর্টিকেলটিতে, বলা হয়েছে জয়তুন তেল খাওয়া যায় ত্বকে ব্যবহার করা যায় এবং চুলেও ব্যবহার করা যায়। জয়তুন বা অলিভ অয়েল তেল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে, ইতিমধ্যেই বলা হয়েছে। জয়তুন তেলের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে  উপরে বলা হয়েছিল। জয়তুন তেলে থাকা এই সকল পুষ্টি উপাদান আমাদের যে সকল শারীরিক উপকারিতা করে সেগুলো এখন জানার চেষ্টা করি।

জয়তুন

  

  • শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য, জয়তুন বা অলিভ অয়েল খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই তেলে থাকা পুষ্টি উপাদান প্রাকৃতিক সংক্রমণ প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। জয়তুন তেল শরীরে প্রয়োজনীয় শক্তি যোগায় এবং স্টামিনা বাড়াতে সাহায্য করে। 
  • জয়তুন তেলে থাকা পুষ্টিকর ফ্যাট এবং ফাইবার পাকস্থলীর হজম ক্ষমতা উন্নতি করতে কাজ করে। আমরা সকলেই জানি ফাইবার আমাদের হজম ক্ষমতা বাড়াতে কতটা ভূমিকা রাখে। শুধু হজম ক্ষমতায় বাড়ায় না যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য এই তেলে থাকা স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা সমাধানও কাজ করে। 
  • হৃদরোগের ঝুঁকিও জয়তুন তেল বা অলিভ অয়েল কমায়। বহু গবেষণায় দেখা গেছে, জয়তুন তেলে থাকা মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট যা শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্র বাড়িয়ে দেয়। যার কারনে নিয়মিত খাদ্য তালিকায় জয়তুনের তেল রাখলে, এটি হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে দিতে পারে। 
  • অন্যদিকে কিছু গবেষণায় এটাও দেখা গেছে, জয়তুনের তেল নিয়মিত ব্যবহারের ফলে, এটি ক্লোন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতেও ভালো কাজ করে। অন্যদিকে শরীরের হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য, অলিভ অয়েল বা জয়তুন তেলে পর্যাপ্ত পুষ্টি উপাদান মেলে। 
  • লিভারের স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও জয়তুন তেলের ভূমিকা রয়েছে। যদি নিয়মিত জয়তুন তেল খেতে থাকেন, তাহলে এই পুষ্টিগুন সম্পর্কে নিজেই উপলব্ধি করতে পারবেন। আমাদের বার্ধক্য প্রতিরোধ করার জন্যও জয়তুন তেলে পর্যাপ্ত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। 
  • অন্যদিকে এই তেল ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, আমরা জানি অতিরিক্ত ওজনের ফলে, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের সমস্যা শরীরে দেখা দিতে পারে। জয়তুনের তেল আপনি যদি সরাসরি খেতে চান রান্না ছাড়া, তাহলে অবশ্যই একজন চিকিৎসার পরামর্শ নিয়ে নিবেন। 

ত্বকের যত্নে জয়তুন তেলের ব্যবহারঃ

আমরা প্রত্যেকেই কমবেশি ত্বকের যত্ন করে থাকি। হয়তো আমরা অনেকেই জানি না জয়তুনের তেল ত্বকে, ব্যবহারের ফলে অনেক ভালই ফলাফল পাওয়া যায়। জয়তুন তেল ত্বকে ব্যবহারের ফলে এটি সূর্যের ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রাশি থেকেও ত্বকে রক্ষা করে থাকে। জয়তুনের তেল ত্বকে ব্যবহারে ফলে উপকারিতাগুলো জানা যাক।

  • শরীরের ত্বকে জয়তুন তেলের ব্যবহারের ফলে, এটি ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে ত্বককে নরম এবং আদ্র রাখতে কাজ করে। নিয়মিত ব্যবহারের ফলে জয়তুন তেল আমাদের ত্বক মশ্চারাইজিং করত কাজ করে থাকে। 
  • উপরে বলা হয়েছিল জয়তুনের তেল খেলে, এটি বার্ধক্য বা বয়সের ছাপ কমাতে কাজ করে। অন্যদিকে এটি যদি ত্বকেও ব্যবহার করা হয়, তধলে বার্ধক্য বা বয়সের ছাপ কমাতে কাজ করে সেই সঙ্গে বলি রেখাও কমায়। ত্বকের যত্নে উপাকার পাওয়ার জন্য, সাধারণ তেল বা মশ্চারাইজার এর মত ব্যবহার করলেই হবে। 
  • সূর্যের অতি বেগুনি রাশি থেকে, ত্বককে অনেকটাই রক্ষা করতে পারে জয়তুনের তেল। নিয়মিত এই তেল  ব্যবহারের ফলে, এটি আমাদের ত্বক নরম, মসৃণ এবং উজ্জ্বল করে তোলে। শরীরের ত্বকের ক্ষতিকর টিস্যু মেরামতেও জয়তুন তেলের ভূমিকা রয়েছে। 
  • নারীদের গর্ভকালীন, পেটের দাগ কমাতেও জয়তুন তেল নিয়মিত ব্যবহার করা যেতে পারে। জয়তুন তেল বা অলিভ অয়েল, ত্বকের চর্ম রোগের সমস্যা সমাধানও ভুমিকা পালন করে থাকে। বিভিন্ন ধরনের চর্ম রোগে এখনও জয়তুনের তেলের, সুবিধা অনেকেই নিচ্ছেন। 

চুলের যত্নে জয়তুন তেলের উপকারিতাঃ

ত্বকের মত চুলের যত্নেও আমরা অনেকেই অটুট থাকি। চুল আমাদের সকলেরই সৌন্দর্যের প্রতীক, আমাদের চুলে জয়তুন বা অলিভ অয়েল তেল ব্যবহারের ফলে,এটি চুলের যত্নের প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে পুষ্টি যোগায়। চলুন তাহলে নিচে জানা যাক, জয়তুন বা অলিভ অয়েলের তেল, আমাদের মাথার চুলে ব্যবহারের ফলে যে ধরনের উপকার মিলতে পারে সেগুলি সম্পর্কে। 

জয়তুন


  • চুলকে সিল্কি ও মশারাইজিং করার জন্য, আমরা অনেক ধরনের শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করে থাকি। তবে আমরা হয়তো অনেকেই জানিনা, চুলকে মশারাইজিং, নরম ও সিল্কি  করার জন্য, জয়তুন তেল ব্যবহার অনেক উপযোগী। 
  • মাথার চামড়ায় খুশির সমস্যায় আমরা অনেকেই অনেক সময় পরে থাকি। মাথায় খুশকি হলে চুলকানির প্রবণতায় অনেক সময় পড়তে হয়। অলিভ অয়েল বা জয়তুনের তেল ব্যবহারের ফলে, এটি মাথার চুলকানি ও খুশকি কমাতে খুবই ভালো কাজ করে। 
  • আমাদের মধ্যে যাদের মাথার চুল পড়ে, তারা নিয়মিত জয়তুনের তেল ব্যবহার শুরু করুন। হয়তো আপনার টেনশনের একটি সমাধান মিলতে পারে, মাথায় নিয়মিত জয়তুনের তেল ব্যবহারের ফলে, এটি চুল পড়া, চুল ভাঙ্গা এবং চুলের আঁকা ফেটে যাওয়া রোধ করে। একই সঙ্গে এই তেলের পুষ্টি উপাদান, নতুন চুল গজাতেও ভূমিকা পালন করে। 
  • আমাদের মধ্যে এমন অনেকে রয়েছে যারা অল্প বয়সে চুল, পেকে যাওয়ার মত সমস্যার কবলে পড়ে। মাথার চুল সাদা হয়ে যাওয়ার প্রবণতা থেকেও রক্ষা করতে পারে জয়তুনের তেল। এছাড়াও মাথার চুলকে মজবুত ঘন এবং কালো করেতে, নিয়মিত জয়তুনের  তেল ব্যবহার করতে পারেন।
  • অন্যদিকে যদি অল্প পরিমাণে তেল গরম করে, মাথার তালুসহ সম্পন্ন মাথায় কিছুক্ষণ মাসাজ করা হয়। তাহলে এটি মাথা রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে, যা চুলের বৃদ্ধিতে খুবই ভালো কাজ করে। আপনি চুলের যত্নের জন্য নিয়মিত জয়তুনের তেল ব্যবহার করতে পারেন। 

উপসংহার। জয়তুন তেল ব্যবহারের নিয়ম 

জয়তুন তেল ব্যবহারের নিয়ম, আর্টিকেল টিতে আমরা ইতিমধ্যে জয়তুন বা অলিভ অয়েল তেলের ব্যবহার সম্পর্কে জেনেছি। আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহারযোগ্য অন্যান্য তেলের তুলনায়, জয়তুনের তেলে পুষ্টিগুণ একটু বেশি মেলে। দৈনন্দিনের জীবনযাত্রায়, সকলে যদি পুষ্টিকর উপাদানের দিকে নজর দিয়ে, জীবনযাত্রায় যোগ করি, তাহলে হয়তো, সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। জয়তুন বা অলিভ অয়েল তেল, খাওয়ার উপকারিতা ত্বকে ব্যবহার এবং চুলে ব্যবহারের উপকারিতা জেনেছেন।

অতএব আমাদের প্রত্যেকেরই, এই প্রাকৃতিক পুষ্টির ভান্ডার দৈনন্দিনীর খাদ্য তালিকায় যোগ করা উচিত। যাইহোক আপনি এবং আপনার পরিবারের, সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য চাইলে খাদ্য তালিকায় এটা রেখে দিতে পারেন। জয়তুন তেল ব্যবহারে নিয়ম আর্টিকেলটি এতক্ষণ মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। 

                       (খোদা হাফেজ) 


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ভদ্রতা বজায় রেখে কমেন্ট করুন! কারন,প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url