স্থায়ীভাবে মুখের দুর্গন্ধ দূর করার উপায়
মুখে যদি দুর্গন্ধ থাকে , কথা বলতে লজ্জা লাগা, এটা খুবই সাধারণ ব্যাপার। কেননা সারাদিনে বিভিন্য প্রয়জনে, অনেকের সাথে অনেক ধরনের কথাবার্তা বলতে হয়। মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে, এগুলোর মধ্যে কিছু সাধারণ কারণ এবং কিছু স্বাস্থ্যগত বা গুরুতর কারণ। দীর্ঘস্থায়ী মুখের দুর্গন্ধের কারণে একজন মানুষের জীবনে নেমে আসতে পারে সঙ্গহীনতা ও একাকীত্ব। এজন্য আমাদের সকলেরই, সুস্থ সুন্দর জীবন যাপনের জন্য, মুখের দুর্গন্ধের স্থায়ী সমাধান করা জরুরি।
আজকের আর্টিকেল টিতে আপনাদের সাথে, আলোচনা করার চেষ্টা করব, স্থায়ীভাবে মুখের দুর্গন্ধ দূর করে, নিজেকে কিভাবে সতেজ রাখা যায়। চলুন কথা বাড়িয়ে জানা যাক, স্থায়ীভাবে মুখের দুর্গন্ধ দূর করার উপায় সম্পর্কে।
পোস্ট সূচিপতঃ স্থায়ীভাবে মুখের দুর্গন্ধ দূর করার উপায়
- মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানা যাক
- দাঁত মুখ ও জিব্বা পরিষ্কার না করা হলেঃ
- নির্দিষ্ট কিছু খাবারের ফলেঃ
- মুখের ভেতরটা শুষ্ক হয়ে গেলেঃ
- ধূমপান তামাকজাত দ্রব্য ও মধ্যপানের কারণেঃ
- মুখের ভিতরে কোন প্রকার অস্ত্রাপাচারের ফলেঃ
- মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার গুরুতর বা স্বাস্থ্যগত কারণ
- মুখ ও দাঁতের সংক্রমণ দেখা দেওয়াঃ
- টনসিল ও ডায়াবেটিস থেকেঃ
- কিডনি ও লিভারের সমস্যার ফলেঃ
- শ্বাসনালীর সংক্রমণ থেকেঃ
- স্থায়ীভাবে মুখের দুর্গন্ধ দূর করার উপায়
- নিয়মিত দাঁত, মুখ ও জিব্বা পরিষ্কার রাখুনঃ
- সুষম খাদ্য ও পর্যাপ্ত পানি গ্রহণঃ
- লবঙ্গ বা এলাচের ব্যবহারঃ
- মুখ ও দাঁতের যত্নে সতর্কতাঃ
- মুখের দুর্গন্ধের জন্য কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
- উপসংহার। স্থায়ীভাবে মুখের দুর্গন্ধ দূর করার উপায়
মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানা যাক।
স্থায়ীভাবে মুখের দুর্গন্ধ দূর করার উপায়, আর্টিকেল টিতে উপরে বলা হয়েছিল, মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে কিছু কারণ সাধারণ এবং কিছু কারণ স্বাস্থ্যগত। সাধারণ কারণগুলোর জন্য মুখে দুর্গন্ধ হলে, এটা প্রাথমিকভাবে, মুখ, দাঁত ও জিহ্বার যত নিলে সমাধান করা সম্ভব।
এছাড়াও যে সকল স্বাস্থ্যগত কারণ রয়েছে, এগুলোর জন্য একজন, দাঁতের চিকিৎসকের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে, সমাধান করা উচিত। স্বাস্থ্যগত বা সাধারণ কারণের জন্য নয়, দাঁত,জিব্বা ও মুখ আমাদের সকলেরই, পরিষ্কার রাখা জরুরি। চলুন তাহলে,আর্টিকেল টিতে জানা যাক, মুখের দুর্গন্ধ হওয়ার কারণগুলি কি, তা সম্পর্কে।
দাঁত মুখ ও জিব্বা পরিষ্কার না করা হলেঃ
আমাদের প্রত্যেকেরই, দাঁত মুখ, ও জীব্বা পরিস্কার করা, মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। দৈনন্দিনের খাদ্য তালিকায় যে সকল, খাদ্য খাবার খাওয়া হয়, এই খাবারগুলোর কিছু খাবার মুখের ভিতর থেকে যায়, বিশেষ করে দাঁতের ফাঁকে। এজন্য খাবার খাওয়ার পর আমাদের দাঁত ব্রাশ করে মুখ পরিষ্কার করা জরুরি।
খাবার খাওয়ার পরে আমাদের প্রত্যেকের দাঁত ব্রাশের পরে পানি দিয়ে মুখের ভেতরে সুন্দরভাবে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা প্রয়োজন। কেননা ঠিকঠাক মত মুখ ও দাত পরিষ্কার করার ফলে, মুখের ভেতরে থাকা খাবার, পচে ব্যাকটেরিয়া তৈরি করতে পারে না।
নির্দিষ্ট কিছু খাবারের ফলেঃ
নির্দিষ্ট কিছু খাবার কেমন, পেঁয়াজ রসুন ও মশলা জাতীয় খাবারের কারণে মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে। এই সকল খাবারে দূর্গন্ধ হওয়ার প্রধান কারণ হল, এতে থাকা সালফার যৌগ। এই ধরনের খাবারের এই সালফার যৌগ হজমের পর রক্ত প্রবাহে মিশে, এরপরে ফুসফুসের মাধ্যমে বাইরে বেরিয়ে যায়, এবং দুর্গন্ধের সৃষ্টি করে। এই ধরনের খাবারে যদি আপনার মুখে দুর্গন্ধের সমস্যা, অনুভব হয় তাহলে পুদিনা পাতা তুলসী পাতা, চিবাতে পারেন। মুখ পরিষ্কার রাখার জন্য ব্রাশ করা, মুখ ভালোভাবে ওয়াশ করার ক্ষেত্রে, কোনমতেই অবহেলা চলবে না।
মুখের ভেতরটা শুষ্ক হয়ে গেলেঃ
মুখের ভেতরটা শুষ্ক হয়ে গেলে, মুখে দুর্গন্ধ দেখা দেওয়ার সমস্যা, হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেশি। কেননা আমাদের মুখ পরিষ্কার রাখার জন্য, মুখের ভেতরে লালা থাকা জরুরি। মুখের ভিতর লালা আমাদের মুখ পরিষ্কারের প্রাকৃতিক পরিষ্কারক হিসেবে কাজ করে। মুখের ভিতর পর্যাপ্ত লালার অভাব দেখা দিলে, ব্যাকটেরিয়া দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে, যার জন্য অল্প সময়ের মধ্যে প্রচুর মুখে দুর্গন্ধ দেখা দেয়। ঘুমের মধ্যে যারা নাক ডাকে তাদের ক্ষেত্রে, এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। কেমন নাক ডাকার সময় মুখ খোলা থাকে, যার কারণে লালা খুব তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়।
ধূমপান তামাকজাত দ্রব্য ও মধ্যপানের কারণেঃ
ধূমপান তামাকজাত দ্রব্য ও মদ্যপনের কারণে মুখে দুর্গন্ধ দেখা দেওয়া খুবই কমন ব্যাপার। এই ধরনের বদ অভ্যাসের ব্যক্তির, মুখের লালা সুস্ক হয়ে যায়, ফলে এই দূর্গন্ধের সৃষ্টি হয়। ধূমপান তামাকজাত পন্য ও মদ্যপানে, শুধু লালাই শুকিয়ে যায় না, এগুলো মুখের ভিতরে, স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া নষ্ট করে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার প্রভাব অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়।
এছাড়াও ধূমপান তামাকজাত পণ্য সেবনে, এগুলো আমাদের মাড়ি ও দাঁতের ক্ষয় বাড়িয়ে দিতে পারে, যা মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার গুরুতরো কারণের দিকে ধাবিত করে। এক কথায় ধূমপান তামাকজাত দ্রব্য ও মদ্যপান সালফার যৌগ তৈরি করে যার কারণে দুর্গন্ধ ছড়ায়।
মুখের ভিতরে কোন প্রকার অস্ত্রাপাচারের ফলেঃ
মুখে কোন প্রকার অস্ত্রাপাচার করলে, বা মাড়ি থেকে দাঁত উঠিয়ে ফেললে, দুর্গন্ধের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে এই গন্ধ হওয়ার বিশেষ কারণ হলো, ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ দেখা দেওয়া। আপনার যদি মুখে অস্ত্রাপাচারের পর, অস্ত্রাপাচারের জায়গায়, পুজো বা ব্যথা হয় তাহলে, এই দুর্গন্ধের সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য, অস্ত্র পাচারের পর এই ধরনের সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন। এছাড়াও মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে, আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা জরুরী।
মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার গুরুতর বা স্বাস্থ্যগত কারণ
স্থায়ীভাবে মুখের দুর্গন্ধ দূর করার উপায় আর্টিকেলটিতে উপরে ইতিমধ্যেই, মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার সাধারণ বেশ কিছু কারণ সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার বেশ কিছু গুরুতর বা স্বাস্থ্যগত কারণও রয়েছে। শরীরে বেশ কিছু বড়সড়ো রোগের ইঙ্গিত হতে পারে মুখের দুর্গন্ধ। এখন তাহলে জানা যাক, মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার গুরুতর বা স্বাস্থ্যগত কারণ সম্পর্কে।
মুখ ও দাঁতের সংক্রমণ দেখা দেওয়াঃ
মুখ ও দাঁতের সংক্রমণ দেখা দেওয়ার ফলে, মুখে দুর্গন্ধ হওয়া, গুরুতর কারণ এর মধ্যে সবচেয়ে অন্যতম। মুখ ও দাঁতের সংক্রমণ দেখা দিলে, মাড়িতে পুজ হওয়া এবং মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার সমস্যা দেখা দেয়। কেননা এ সময় দাঁত ও মারিতে প্লাক নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার স্তর জমে, মারি এবং দাঁতের ক্ষয় এবং দুর্গন্ধের সৃষ্টি করে। এছাড়াও মুখের ভিতর কোন ঘা, এবং দাঁত তোলার পরেও এই সংক্রমণের দেখা দিতে পারে।
আরো পড়ুনঃ কি খেলে আলসারের সমস্যায় সমাধান পাওয়া যায়।
টনসিল ও ডায়াবেটিস থেকেঃ
টনসিলের সমস্যা ও অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের ফলে, মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে। যখন টনসিলের সমস্যা হয়, তখন টনসিলের কোণে খাবার এবং ব্যাকটেরিয়ার কারণে ছোট ছোট পাথর তৈরি হয় যার ফলে এই দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়। এই প্রক্রিয়ার ফলে যে সমস্যা সৃষ্টি হয়, এটাকে বলা হয় ব্যাকটেরিয়া জনিত টনসিলাইটিসের দুর্গন্ধ।
অন্যদিকে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, মুখে দুর্গন্ধ তৈরি করার ক্ষেত্রে খুব ভালো ভূমিকা রাখে। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে, ডায়াবেটিস মেলিটাস নামক রোগ হয়। কেননা এই সময় মুখের ভেতরের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং মুখ শুকিয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। এই সমস্যার ফলে রক্তের কিটোন ফল এবং অ্যাসিটোনের মতো গন্ধ মুখ থেকে বের হতে পারে।
কিডনি ও লিভারের সমস্যার ফলেঃ
শরীরের কিডনি ও লিভারের সমস্যার ফলেও, মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার মত সমস্যা দেখা দেয়। কিডনি আমাদের শরীর থেকে, ক্ষতিকারক ইউরিয়া নামক বর্জ্য বের করে দেয়। এই বর্জ্য শরীর থেকে নিষ্কাশন সঠিকভাবে না হলে, নিঃশ্বাসের সাথে ও মুখ থেকে এক ধরনের অ্যামোনিয়ার মত দুর্গন্ধ হতে পারে।
এছাড়াও লিভার আমাদের শরীর থেকে, টক্সিন নিষ্কাশন করে বের করে দেয়। লিভার যদি এই কাজটি সঠিকভাবে না করে, ফ্যাটি লিভারের মত সমস্যা দেখা দেয়। এবং এই জমা টক্সিনের থেকে কিছু টক্সিন রক্তে জমা হয়ে, নিঃশ্বাসের সাথে বেরিয়ে যায়। তখন যে গন্ধের সৃষ্টি হয় এটাকে চিকিৎসকেরা হেপাটিকাস নামক বিশেষ এক ধরনের গন্ধ বলে।
শ্বাসনালীর সংক্রমণ থেকেঃ
শাসনালীতে সংক্রমণ দেখা দিলে যেমন সর্দি, কাশি বা ফ্লুর মত সমস্যায় মুখে দুর্গন্ধ দেখা দিতে পারে। ঠান্ডা লাগার পরে, অনেক সময় সর্দি-কাশির সাথে গলায় স্রেষ্মা, সহ কফের সৃষ্টি হয়। তখন অনেক সময় দেখা যায় এই শ্লেষ্মা, গলার উপরের দিকে প্রবাহিত হয়, যার কারনে এই দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়। একটা কথা মাথায় রাখবেন, মুখের দুর্গন্ধ সমস্যা হওয়া ঘুমের অভাবেও হতে পারে।
অন্যদিকে শরীরে ভিটামিন বি ১২ এর ঘাটতি দেখা দিলে, মুখের দুর্গন্ধ হওয়ার প্রবণতা রয়েছে। কেননা ভিটামিন বি ১২ এর ঘাটতি আমাদের মুখের ভেতরে ঘা তৈরি করতে পারে। এবং এই ঘা এর কারণে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ না হয়ার ফলে, মারির টিস্যু দুর্বল হয়ে যায়। এছাড়াও ভিটামিন বি ১২ এর অভাবে শরীরের রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে, যা মুখে দুর্গন্ধ তৈরি করার কারণ।
স্থায়ীভাবে মুখের দুর্গন্ধ দূর করার উপায়
আজকের আর্টিকেল টির মূল বিষয়, স্থায়ীভাবে মুখের দুর্গন্ধ দূর করার উপায় সম্পর্কে। ইতিমধ্যে আর্টিকেল টিতে আলোচনা করা হয়েছে। মুখের ভেতরে দুর্গন্ধ হওয়ার বেশ কিছু কারণ। স্থায়ীভাবে মুখের দুর্গন্ধ দূর করার জন্য, মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার সঠিক কারণও নির্ণয় করা উচিত। কেননা, মুখের দুর্গন্ধের কারণ জানলে এর সমাধানে, খুবই সুবিধা পাওয়া যায়। চলুন তাহলে জানা যাক, স্থায়ীভাবে মুখের দুর্গন্ধ দূর করার উপায় গুলো কি তা সম্পর্কে।
নিয়মিত দাঁত, মুখ ও জিব্বা পরিষ্কার রাখুনঃ
মুখের দুর্গন্ধ দূর করার জন্য, নিয়মিত দাঁত মুখ ও জিব্বা পরিষ্কার রাখা জরুরি। প্রতিদিনের খাবার খাওয়ার পরে, সময় করে সুন্দরভাবে ব্রাশ করা জরুরী। তবে অনেক জোরে, এবং অনেক বেশি সময় নিয়ে ব্রাশ করা থেকেও বিরত থাকবেন। খাবার খাওয়ার পরে সর্বোচ্চ ২ মিনিট ব্রাশ করলেই যথেষ্ট।
অন্যদিকে যদি দাঁতে ফাঁকে খাদ্য আটকে যায়, সুন্দরভাবে এই খাদ্য পরিষ্কার করতে হবে। কেননা দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা খাবারে, এক ধরনের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয়, যার জন্য খাবার পচে মুখের এই দুর্গন্ধের তৈরি হয়। আপনি চাইলে ডেন্টাল ফ্লাশ ও ব্যবহার করতে পারেন।
সুষম খাদ্য ও পর্যাপ্ত পানি গ্রহণঃ
পর্যাপ্ত পানি পান করা, শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শরীর ও মুখের স্বাস্থ ভালো রাখার জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে দুই থেকে তিন লিটার পানি পান করা জরুরী। অন্যদিকে পুষ্টিকর ও সুষম খাবার গ্রহণের ফলে, শারীরিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, যা মুখের গন্ধ প্রতিরোধী। মুখে গন্ধ দূর করতে পুদিনা পাতা চিবিয়েও খাওয়া যেতে পারে।
দৈনিক দুই থেকে তিনটি পুদিনা পাতা চিবিয়ে খেলেই যথেষ্ট। সুষম খাদ্যের মধ্যে, গাজর, শসা ও পালন শাক জাতীয় সবজির রস খাওয়া যেতে পারে, এটি মুখের গন্ধ দূর করতে কার্যকর। মুখে দুর্গন্ধ থাকলে খাওয়ার পরে চাইলে পান খেতে পারেন, কেননা পান মুখকে সতেজ রাখতে কাজ করে।
লবঙ্গ বা এলাচের ব্যবহারঃ
মুখের দুর্গন্ধের স্থায়ী সমাধানের জন্য, লবঙ্গ ও এলাচের ব্যবহার খুবই ভালো কাজ করে। মুখের দুর্গন্ধ দূর করার জন্য লবঙ্গ সরাসরি চিবিয়ে খাওয়া যেতে পারে, চাইলে চায়ের সাথে মিশিয়েও লবঙ্গ খাওয়া যায় এবং গরম পানিতে ফুটিয়ে, এরপরে উষ্ণ গরম অবস্থায় গরগরা দিলেও, এটি মুখের দুর্গন্ধ দূর করে এবং নিঃশ্বাস কে স্বতেজ করে।
আরো পড়ুনঃ তলপেতে নাভির নিচে ব্যাথা কমানোর উপায় সম্পর্কে জানুন।
এলাচের কথাও ভুলে গেলে চলবে না, এলাচ লবঙ্গের মতো চিবিয়েও খাওয়া যায়। তাছাড়াও এলাচ গুঁড়ো করে টুথপেস্টের সাথে মিশিয়ে দাঁত ব্রাশ করলে, তা দুর্গন্ধকারী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। যার ফলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয় এবং, দাঁতে থাকা কোন ক্ষত প্রতিরোধেও কাজ করে। বাজারে যদি এলাচ যুক্ত কোন টুথপেস্ট পাওয়া যায়, তাও খুব কার্যকরী।
মুখ ও দাঁতের যত্নে সতর্কতাঃ
মুখ ও দাঁতের যত্নে আমাদের সব সময়, সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। কেননা আমাদের শরীরের সম্পূর্ণ কার্যক্রমের মাত্রা ঠিক রাখতে, মুখ ও দাঁতের গুরুত্বের কথা, কাউকেই বোঝাতে হবে না। দাত পরিষ্কারের ক্ষেত্রে নিয়মিত ব্রাশ, সর্বোচ্চ তিন মাসের বেশি ব্যবহার করা উচিত নয়। নিয়মিত বছরে কমবেশি দু-একবার ডেনটিস্টের কাছে যেয়ে, পরীক্ষা করানো ভালো। দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকা থেকে বিরত থাকা উচিত। আপনার মাড়িতে নকল দাঁতের ব্যবহার থাকলে, সেটি প্রতিনিয়ত পরিষ্কার করতে হবে।
মুখের দুর্গন্ধের জন্য কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
- মুখের দুর্গন্ধ সাধারণভাবে যদি কমানো না যায়, নিয়মিত দাঁত ব্রাশ, মুখ ও জিহ্বা পরিষ্কার করার পরও, গন্ধ থেকে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কেননা আমাদের সকলেরই, মুখের দুর্গন্ধ হওয়ার গুরু তর বা স্বাস্থ্যগত কারণের দিকেও নজর দিতে হবে।
- এছাড়াও যদি আপনার মুখ, অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে যায়, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করার পরেও। তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ, নিয়ে ব্যবস্থা নিলে সমাধান সম্ভব হতে পারে। অন্যদিকে যদি নাক ডাকার সমস্যা থাকে, তাহলে এটা সমাধান করা আপনার জন্য জরুরী।
- মুখের দুর্গন্ধের গুরুতর কারণ এর মধ্যে, দাঁত বা মাড়িতে কোন সংক্রমণ দেখা দিলে, দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। এছাড়াও মুখের দুর্গন্ধের পাশাপাশি যদি কফ, কাশি বা শ্বাসকষ্টের মত সমস্যার সম্মুখীন হন, তাহলেও বসে থাকবেন না। দীর্ঘমেয়াদী মুখের দুর্গন্ধের ফলে, শরীরের বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন, পড়তে পারেন।
- সর্বোপরি সবথেকে বড় কথা, মুখের দূর্গন্ধ আমাদের ,সকলেরই লজ্জাজনক একটি সমস্যা। মুখের দুর্গন্ধ থেকে শুধু রেহাই পাওয়া নয়, এর সুস্বাস্থ্যের দিকে নজর ও মুখের সতেজতা ধরে রাখতে, সঠিক ব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরী। মাথায় রাখবেন মুখের দুর্গন্ধ, সাধারণ কারণ ছাড়া স্বাস্থ্যগত ও ঝুঁকিপূর্ণ কারণেও দেখা দেয়।
উপসংহার। স্থায়ীভাবে মুখের দুর্গন্ধ দূর করার উপায়
আজকের আর্টিকেল টিতে, স্থায়ীভাবে মুখের দুর্গন্ধ দূর করার উপায় সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। আমাদের প্রত্যেকেরই মুখের যত্নে অটুট থাকা উচিত। মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার অন্য আরেকটি, ছোট গুরুতর কারণ পেটে গ্যাসের সমস্যা। পেটে অতিরিক্ত গ্যাসের সমস্যা দেখা দিলে, সেই গ্যাস আমাদের মুখ থেকে নির্গত হতে পারে, এ ব্যাপার টাও মাথায় রাখা উচিত।
সতেজতার সাথে কথা বলা, সুস্থ, সুন্দর জীবনযাপনে মুখের গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। তাই সর্বদা চেষ্টা করবেন নিয়মিত, শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে। আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য, অসংখ্য ধন্যবাদ।
(খোদা হাফেজ)



ভদ্রতা বজায় রেখে কমেন্ট করুন! কারন,প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url