তলপেটে নাভির নিচে ব্যাথা কমানোর উপায়

পেটে ব্যাথা আমাদের অনেকেরই কমন একটা সমস্যা, পেটে ব্যথার বিভিন্ন ধরন রয়েছে। এদের মধ্যে তলপেটে নাভির নিচে ব্যথাও অন্যতম। তলপেটে নাভির নিচে ব্যথা হওয়ার, কারণগুলির মধ্যে যেমন, সাধারণ কারণ রয়েছে,ঠিক তেমনি গুরুতর কারণেও, তলপেটের নাভির নিচে ব্যাথা হতে পারে। তলপেটের নিচে ব্যথা, নারীদের ক্ষেত্রেও কমন একটি সমস্যা। আমাদের কারো যদি, তলপেটে ব্যথা থাকে, তাহলে অবশ্যই  এই রোগ মুক্তির উপায় বের করতে হবে, ঘাবড়ে গেলে চলবে না।

পেটে

আজকে আপনাদের সাথে আলোচনা করব, তলপেটে নাভির নিচে ব্যথা কমানোর উপায় এবং ব্যথা হওয়ার কারণ সম্পর্কে। মনোযোগ সহকারে আর্টিকেলটি পড়ুন। কেননা, সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা এবং সুস্থ জীবন যাপনের জন্য, অবশ্যই আমাদের রোগ মুক্তির সঠিক নিয়ম অবলম্বন করতে হবে।

পোস্ট সূচিপত্রঃ তলপেটে নাভির নিচে ব্যাথা কমানোর উপায়

 তলপেটে নাভির নিচে ব্যথা হওয়ার কারণ, পুরুষের ক্ষেত্রে। 

তলপেটে ব্যথা হওয়ার নানা রকমের কারণ হতে পারে। এর মধ্যে সাধারণ যে কারণগুলো রয়েছে সেগুলো হলো, গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য, হজমের সমস্যা ইত্যাদি। যে সকল গুরুতর সমস্যা রয়েছে সেগুলো হল, এপেন্ডিসাইড, মূত্রনালীর সংক্রমণ, মূত্রথলিতে পাথর, নাভিতে হার্নিয়া, ইত্যাদি সমস্যার কারণে তলপেটে নাভির নিচে ব্যথা হতে পারে। এখন তলপেটে নাভির নিচে ব্যাথা হওয়ার কারণ, এক এক করে বিস্তারিত যানার চেষ্টা করি।

গ্যাস এবং বদ হজম থেকেঃ

গ্যাস এবং বদ হজম থেকে, তলপেটে নাভির নিচে ব্যথা হতে পারে। হয়তো আমরা অনেকেই এই ব্যথার কবলে অনেক সময় পড়েছি। এই সমস্যাটা সাধারণত, খাবারের হজম প্রক্রিয়াটা দুর্বল হওয়ার কারণে হয়ে থাকে। 

সংক্রমনের কারণেঃ

আমাদের পাকস্থলী ও অন্ত্রের মাঝেমধ্যে, সংক্রমণের কারণে তলপেটে নাভির নিচে ব্যাথা হয়। পাকস্থলীরে এসব সংক্রমন দেখা দিলে, তলপেটে ব্যথা, খিচুনি, পেট ফাঁপা ভাব এবং ডায়রিয়ার মতন সমস্যাও হতে পারে। 

কোষ্ঠকাঠিন্য ও মানসিক চাপঃ 

কোষ্ঠকাঠিন্য অর্থাৎ, টয়লেট সম্পূর্ণরূপে না হওয়া সমস্যা। কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা মূলত একটি বেদনাদায়ক সমস্যা। শরীরে এই কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে হতে পারে তলপেটে অস্বস্তিকর ব্যথা। কেননা, মলমুত্র জমে, কোষ্ঠকাঠিন্যের এই ব্যথা দেখা দেয়। এগুলো আসলে সাধারণত, তলপেটে নাভির নিচে সাধারণ ব্যথার কারণ। 

এপেন্ডিসাইড এর ব্যথাঃ 

এপেন্ডিসাইডের ব্যথা অনেক সময় অনেকের হয়ে থাকে।এপেন্ডিসাইটির ব্যথা, তলপেটে ব্যথার গুরুতর কারণ এর মধ্যে অন্যতম। পেটে এপেন্ডিসাইড এর ব্যথা দেখা দিলে, প্রাথমিক অবস্থায় নাভির চারপাশে ব্যথা শুরু হয়। পরে আস্তে আস্তে তলপেটে ডান দিকে ছড়িয়ে পড়ে। এই ধরনের ব্যাথা দেখা দিলে, দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। 

মূত্রথলিতে পাথর হওয়াঃ

আমাদের মধ্যে যদি কারো, মূত্রথলিতে পাথর হওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। তাহলে তলপেটে নাভির নিচে, ব্যথা দেখা দিতে শুরু করে। এছাড়াও মূত্রনালির সংক্রমনের কারণেও, তলপেটে ব্যথা হতে পারে। এটাও তলপেটে নাভির নিচে ব্যথা হওয়ার গুরুতর, কারণের মধ্যে বিবেচিত। তাছাড়াও নাভিতে যদি হার্নিয়া দেখা দেয় তাহলে, নাভি চারপাশের পেশী দুর্বল হয়ে তলপেটে ব্যথা হওয়ার মত সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। 

আরো পড়ুনঃ ১০৩ ডিগ্রি জ্বর হলে করনীয় গুল কি? 

তলপেটে নাভির নিচে ব্যাথা হওয়ার কারণ, নারীদের ক্ষেত্রে

উপরে আমরা, পুরুষের ক্ষেত্রে তলপেটে নাভির নিচে ব্যথা হওয়ার যে সকল কারণগুলো জেনেছি। সাধারণ কারণ এবং গুরুতর কারণ, যেগুলো রয়েছে। এগুলোর কারণে, নারীদেরও সাধারণভাবে তলপেটে নাভির নিচে ব্যথা হতে পারে। তবে এর বাইরেও নারীদের জন্য, বেশ কিছু কারণ রয়েছে নাভির নিচে ব্যথা হওয়ার, সেগুলো হল। 

পেটে

মাসির চক্রের ব্যথাঃ 

মাসির চক্রের এই ব্যথা, প্রত্যেকটা নারী নিত্যদিনের সঙ্গী বললেই চলে। যখন নারীদের, শরীরে মাসিক চক্রের সমস্যা দেখা দেয়। তখন তাদের তলপেটে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের ব্যথা একটি স্বাভাবিক ঘটনা। তবে অনেক সময় এই ব্যথার ধরন অনেক তীব্রভাবে হতে পারে। 

PID- পেলভিক ইনফ্লামেটরি ডিজিজের ব্যথাঃ

PID পেলভিক ইনফ্লামেটরি ডিজিজের ব্যথা নারীদের সাধারণত, জরায়ু, ডিম্বাশয় বা ফেলোপিয়ান ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে তৈরি হয়। এই সময় নারীদের তলপেটে তীব্র ব্যথা হতে পারে। অনেক সময় এই ব্যথার সাথে তীব্র জ্বর ও অন্যান্য উপসর্গ দেখাও দিতে পারে। 

প্রেগনেন্সি গত ব্যাথাঃ

নারীদের তলপেটে প্রেগনেন্সি গত ব্যথা অর্থাৎ গর্ভাবস্থায়, তলপেটে যে ধরনের ব্যথা হয়ে থাকে। নারীদের গর্ভাবস্থায় প্রথম দিকে, ডিম্বানু জরায়ুতে স্থাপিত হওয়ার সময়, হালকা খিচুনী এবং ব্যথা হওয়াটা স্বাভাবিক। অনেক সময় জরায়ুর এই ডিম্বাশয়ের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকেও তলপেটে ব্যথা হতে পারে। তাছারাও, তল পেটে ব্যথা হওয়ার খুটিনাটি নানা ধরনের কারণ থাকতে পারে। 

 তলপেটে নাভির নিচে ব্যথা কমানোর উপায়। 

আজকের আর্টিকেলটির মূল বিষয়, তলপেটে নাভির নিচে ব্যথা কমানোর উপায় সম্পর্কে। আমরা ইতিমধ্যে তলপেতের নাভির নিচে ব্যথা হওয়ার কিছু কারণ জেনেছে। এই কারণ গুলোর মধ্যে, আমরা লক্ষ্য করেছি কিছু সাধারণ কারণ রয়েছে এবং কিছু গুরুতর কারণও রয়েছে। এখন আপনাদের সাথে আলোচনা করব, সাধারণভাবে তলপেটে নাভির নিচে ব্যাথা হলে। ঘরোয়া উপায়ে এই ব্যথা কমানোর মাধ্যমগুলোর সম্পর্কে, চলুন জানা যাক। 

পেটে গরম শেখ দেওয়া যেতে পারেঃ 

পেটে ব্যথা যদি, পেষি কেন্দ্রিক হয়, তাহলে গরম সেক দিলে ব্যথা কমে যেতে পারে। কেননা গরম পানির সেক অথবা কাপড় গরম করে সেক দিলে, পেটের পেশী শীতল হয়, রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে, এছাড়াও পেশীর টান বা জরতা দূর করে, ব্যথা কমাতে ভূমিকা রাখে। আপনার যদি পেষি কেন্দ্রিক ব্যথা হয়ে থাকে, তাহলে আশা করা যায়, এই পদ্বতি অবলম্বন করলে, ব্যথা কমে যেত পারে। 

তলপেট ব্যথায় আদা চাও খাওয়া যেতে পারেঃ 

তলপেটে ব্যাথায় আদা চায়েরও গুরুত্ব রয়েছেত, কেননা আধা চা পেটের হজম শক্তি বাড়ায, যা নাভির নিচে ব্যাথা কমাতে, অনেকটা সাহায্য করে। এছাড়া নারীদের ক্ষেত্রে, মাসিক সংক্রান্ত ব্যথার উপশম ও বমি বমি ভাব দূর করতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখে। আমাদের মধ্যে কারো পেটে ব্যথা, থাকা অবস্থায় আদা, চা খেয়ে দেখতে পারেন। 

আরো পড়ুনঃ কিডনি ভাল রাখতে রোজ কত লিটার পানি খাবেন। 

তলপেট ব্যথায় মৌরি বীজের উপকারিতাঃ 

তলপেটে নাভির নিচের ব্যথায় মৌর বীজ যে উপকার গুলো করে সেগুলো হলো। হজম ক্ষমতা কে উন্নত করে, মৌরি বিজ আমাদের পেটে এনজাইম তৈরি করে যা পেট ফাঁপা ও বদহজম কমায়। অনেক সময়, বদহজমের কারণে পেটে গ্যাস হয়ে, পেটে ফোলা ভাব দেখা দিতে পারে। মৌরি বীজ এই গ্যাসের সমস্যা এবং নাভির নিচের পেশী শিতিল করে, যার কারনে গ্যাস ও মুক্তি মিলে। 

পেটে

এই বীজে থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান, আমাদের বিভিন্ন ধরনের পেটের সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। তাছাড়াও মৌরি অন্ত্রের  প্রদাহ কমায় এবং নারীদের মাসিকের কারণে হওয়া, তলপেটে খিচুনি জাতীয় ব্যথার উপশম করে। এই বীজ পেটের অস্বস্তি জনিত সমস্যা কেও সমাধান দেয়, কেননা এই বীজ, আমাদের শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে। 

অতিরিক্ত পানি পান করাঃ

পানি আমাদের শরীরের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ও অবিচ্ছেদ্য অংশ। যা না হলেই নয়, পেটে কোন ধরনের ব্যথাজনিত সমস্যা দেখা দিলে। অতিরিক্ত পরিমাণে পানি পান করা উচিত। আমাদের শরীরকে সতেজ রাখা গ্যাস ও কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যাকে সমাধান করার জন্য, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা উচিত। 

কলা খাওয়া যেতে পারেঃ 

পেটে ব্যাথা কমাতে কলারও গুরুত্ব রয়েছে, আমরা সকলেই জানি কলায় ফাইবারের মত পুষ্টি উপাদান রয়েছে, যা আমাদের হজম ক্ষমতা কে উন্নত করে। এছাড়াও কলাতে থাকা পটাশিয়াম আমাদের শরীরের, সোডিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, যার কারনে গ্যাস ও ফোলা ভাব দূর হয়। এছাড়াও সহজে হজম হবে এমন হালকা খাবার খাওয়া উচিত। 

উপরে সকল প্রকার তলপেটে নাভির নিচে, ব্যথা কমানোর যে সকল উপায় সম্পর্কে আমরা জানতে পেরেছি। এগুলো শুধু তলপেটে নাভির নিচে ব্যথা কমায় না, বরং পেটে যেকোনো সাধারন, ব্যাথার সমস্যাকে সমাধান দিয়ে থাকে, তবে এগুলো অবশ্যই  ব্যাথার সাধারন কারন হতে হবে।

তলপেট ব্যথায় কখন চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।

তল পেট ব্যথা হওয়ার বিভিন্ন কারণ আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি। তার সাথে এটাও জানাচ্ছি তলপেট ব্যথা হলে সাধারণ অবস্থায় ঘরোয়া ভাবে করনীয় গুলো কি। এখন আমরা জানবো, তলপেটে  ব্যথায় কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। 

  • আপনার তলপেট ব্যথা শুরু হওয়ার থেকে, ঘরোয়া প্রতিকার পর্যন্ত যদি এই ব্যথা না কমে। যদি ব্যথার তীব্রতা বাড়তে থাকে, এক্ষেত্রে বসে থাকলে চলবে না।  
  • তলপেটে ব্যথার সাথে যদি, শরীরে জ্বর দেখা দেয়, বমি বমি ভাব হয় এবং গুরুতর লক্ষণ দেখা দেয়। এছাড়াও ব্যথা যদি পেটে ডান দিকে ছড়িয়ে পড়ে, এপেন্ডিক্স এর লক্ষণ দেখা দেয়। 
  • অনেক সময় আমাদের, তলপেট ব্যথার কারণে প্রশাবে সমস্যা দেখা দেয়। যা মূত্রনালীর  সংক্রমণ বলে বিবেচিত হয়, এই ব্যথা মূত্রনালীতে পাথর হওয়ার সংক্রমণ থেকেও হতে পারে। 
  • সর্বশেষ, যদি কোন গর্ভবতী মায়ের তলপেটে ব্যথা অনুভব হয়, এবং এই ব্যথা তীব্রতা যদি বেড়ে যায়। গর্ভ অবস্থায় কোন অবস্থাতেই অবহেলা করলে চলবে না, খুব দ্রুতই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।  

শেষ কথা। তলপেটে ব্যথা কমানোর উপায় সম্পর্কে 

তলপেটে নাভির নিচে ব্যথা হওয়ার কারণ, এবং তলপেটে নাভির নিচে ব্যথা কমানোর বেশ কিছু উপায় সম্পর্কে আমরা জেনেছি। আমরা এটাও জেনেছি তলপেটে ব্যথা বা পেটে ব্যথার সাধারণ কারণও থাকতে পারে, গুরুতর কোন কারণেও হতে পারে। তাই আমাদের অবশ্যই, ব্যথা হওয়ার কারণ নির্ধারণ করে, এর যথাযথ চিকিৎসা নেওয়া উচিত।তবে ঘরোয়া ভাবে যদি এই ব্যথার প্রতিকার করা যায়, সেটাই হবে ,সব থেকে উত্তম মাধ্যম। 

তবে আপনার কিংবা আপনার পরিবারের, কারো যদি এই ব্যথার পরিমাণটা তীব্র হয়, তার সঙ্গে গরুতর লক্ষণ দেখা দেয়। তাহলে অবশ্যই বসে থাকবেন না, কেননা এই ব্যথা থেকে শরীরে যেকোনো বড় ধরনের অসুস্থতা দেখা দিতে পারে। মনোযোগ সহকারে এতক্ষণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে দিবেন। 

                           ( খোদা হাফেজ )




এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ভদ্রতা বজায় রেখে কমেন্ট করুন! কারন,প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url