সকালে খালি পেটে কাঠবাদাম খাওয়ার উপকারিতা

গ্রামাঞ্চলের অনেকের বাড়ির আঙিনায়, ও রাস্তার পাশে এখনো দেখা মেলে, এই কাঠবাদাম গাছের। এই বাদামের উপরটা মোটা একটা আস্তরণে ঢাকা থাকে। অনেকেই গাছের নিচ থেকে, পড়ে থাকা, বাদাম কুড়িয়ে নিয়ে, কেটে ভিতর থেকে বাদাম বের করে খেয়ে থাকে। গ্রামের সেই সাধারন মানুষগুলো, বা আমরা অনেকেই জানি না, সাধারণ এই বাদামের উপকারিতা সম্পর্কে। আমরা হয়তো এটা জানলে অবাক হয়ে যাব, সাধারণ একটি বাদাম যা রাস্তার পাশে পড়ে থাকে, তার, উপকারিতা ও গুণকুন এতটা ? 

কাঠ

যাইহোক আজকের আর্টিকেলটিতে আপনাদের সাথে আলোচনা করার চেষ্টা করব। গ্রাম অঞ্চলের সেই ঐতিহ্যবাহী, কাঠ বাদামের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে। এবং সকালে খালি পেটে এই কাঠ বাদাম খেলে যেসব উপকার, পাওয়া যাবে সে সম্পর্কে। 

পোস্ট সূচিপত্রঃ সকালে খালি পেটে কাঠবাদাম খাওয়ার উপকারিতা

কাঠ বাদামের যত পুষ্টিগুণ। 

আর্টিকেলটিতে উপরে বলা হয়েছিল, সাধারণের কাঠবাদামের পুষ্টিগুণ এতটাই, যা আমরা জানলে অবাক হয়ে যাব। তাহলে চলুন জানা যাক কাঠ বাদামের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে। কাঠবাদামের প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট রয়েছে। আরো রয়েছে ফাইবার, ভিটামিন ই, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস। কাঠ বাদামে থাকা এ সকল উপাদান আমাদের শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে উন্নত করে। 

কাঠবাদাম এ্যান্টি অক্সিডেন্ট ভরপুর, কাঠবাদাম অক্সিডেটিভ ক্ষতি থেকে আমাদের ত্বককে রক্ষা করে, এবং শরীরের ওজন কমাতেও সহযোগিতা করে। কাঠ বাদামের পুষ্টি উপাদান, সঠিকভাবে পাওয়ার জন্য, সকালে খালি পেটে খাওয়া সব থেকে উত্তম। তাহলে চলুন এখন জানি, সকালে খালি পেটে কাঠবাদাম খেলে, যে সকল পুষ্টিগুণ পাওয়া যায় সেগুলো সম্পর্কে।

সকালে খালি পেটে কাঠ বাদাম খাওয়ার উপকারিতা। 

কাঠবাদাম খুব সাধারণ একটি, বাদাম, এটা সম্পর্কে আমরা, বেশ কিছু ধারনা পেয়েছি। এই বাদাম হয়তো আমরা অনেকেই খেয়েছি, তবে পুষ্টিগুণ সকলে জানি না। সকালে খালি পেটে এই বাদাম খেলে, যে সকল উপকারিতা পাওয়া যায় সেগুলো হল। 

শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করেঃ

সকালে খালি পেটে কাঠ বাদাম খেলে, এটি আমাদের শরীরের শক্তি যোগাতে সাহায্য করে। কেননা কাঠবাদামে রয়েছে প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, এছারা অন্যান্য যে পুষ্টি উপাদানগুলো রয়েছে, এগুলো আমাদের শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখে। সেই সঙ্গে এই কাঠ বাদামে থাকা ম্যাগনেসিয়াম আমাদের, শারীরিক ক্লান্তি দূর করতে কার্যকারী। যারা কাঠ বাদাম খেয়ে থাকেন, তারা অবশ্যই সকালে খালি পেটে খাওয়া শুরু করুন।

আরো পড়ুনঃ কিডনি ভাল রাখতে যে সকল খাবার গুলা খাবেন। 

পাকস্থলীর হজম শক্তি উন্নত করেঃ 

সাধারণ এই বাদাম, আমাদের পাকস্থলির হজম ক্ষমতাকেও  উন্নত করে। সাধারণভাবে যদি এটি  সকালে খাওয়া হয়, তাহলে এর ফলাফলটা সবথেকে ভালো পাওয়া যায়। আমরা সকলে জানি, ফাইবার আমাদের হজম ক্ষমতাকে উন্নত করে। বাদামে থাকা এই ফাইবার, আমাদের হজম ক্ষমতাকে উন্নত করে যার কারণে, কোষ্ঠকাঠিন্যের মতন সমস্যা থেকে সমাধান পাওয়া যায়। 

মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও স্মৃতিশক্তি উন্নত করেঃ

কাঠবাদাম আমাদের মস্তিষ্কের জন্য অনেক কার্যকারী ভূমিকা পালন করে। এই বাদামে থাকা রিবোফ্লাভিন ও ক্যারোটিনের মত পুষ্টি উপাদান,  যা আমাদের মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এছাড়াও এই বাদাম, আমাদের স্মৃতিশক্তি বাড়াতে এবং মানসিক চাপ কমাতেও ভূমিকা রাখে। কাঠবাদাম থেকে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখা স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে হলে। প্রতিদিন মিনিমাম, ৪ থেকে ৬ টি কাঠ বাদাম ভিজিয়ে  খেতে হবে, তাহলে এর ফলাফল, ভালো পাওয়া যায়।

শরীরে ওজন নিয়ন্ত্রণ করেঃ

কাঠবাদাম আমাদের শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে ও সাহায্য করে। কেননা এই বাদামে, থাকা প্রটিন ও ফাইবার এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট আমাদের অনেক সময় পেট ভরিয়ে রাখতে সাহায্য করে। যার কারনে খুদার, পরিমাণ কমে যায়। তবে এক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা ও রয়েছে, আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি কাঠবাদাম ক্যালোরির  একটি উৎস। তাই এটি পরিমাণের বাইরে খাওয়া উচিত না, অতিরিক্ত খেলে ওজন বেড়েও যেতে পারে। এক্ষেত্রে অবশ্যই ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখতে হলে কাঠবাদাম পরিমাণ মতোই খাওয়া জরুরী। 

ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ 

হ্যাঁ আপনি ঠিক শুনেছেন, প্রতিদিন সকালে খালি পেটে কাঠবাদাম খেলে। আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে এবং, ব্রন মুক্ত থাকবে। কেননা, এই কাঠবাদামে থাকা ভিটামিন ই, ম্যাগনেসিয়াম এবং এন্টঅক্সিডেন্ট আমাদের ত্বকের ভেতর থেকে পুষ্টির যোগান দেয়। এর কারণে ত্বকের আদ্রতা বজায় থাকে, রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়,  যার কারনে ত্বক মসৃণ ও মশ্চারাইজ করে। এছাড়াও কাঠবাদামের তেল মালিশ করলে ও ফেসপ্যাক হিসেবে ব্যবহার করলেও ত্বকের প্রদাহ কমিয়ে শুষ্কতা রক্ষা করে। 

হাড় ও দাঁতের উন্নতি ঘটায়ঃ 

সাধারণ এই কাঠ বাদামের পুষ্টিগুণ আমাদের হাড় ও দাঁতের উন্নতিও ঘটায়। কেননা কাঠবাদামে থাকা ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাশের মতন গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, আমাদের হাড়কে শক্তিশালী করে। এবং হাড়ে খনিজের ঘনত্ব বাড়ায় তার সাথে দাঁতকেও শক্তিশালী করে। নিয়মিত কাঠ বাদাম খেলে, অস্টিওপড়ছিস এর মত হাড়ের রোগ, থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এক কথায় বলা চলে, আমরা যদি নিয়মিত কাঠবাদাম খাই। তাহলে আমাদের শরীরের পুরো কঙ্কালতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে অনন্য ভূমিকা রাখতে পারে। 

ডায়াবেটিস ও ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ঃ 

কাঠ বাদামে থাকা পুষ্টি উপাদান, শরীরে কোলন ক্যান্সারের মতন অসুস্থতার ঝুকি কমায়। কেননা কাঠবাদামের নির্দিষ্ট পরিমাণ ফাইবার থাকে। যা আমাদের শরীরকে ডি-টক্সাইড করতে সাহায্য করে। এবং এই বাদামে ভিটামিন ই এবং ফ্লাভনয়েড রয়েছে যা স্তন ক্যান্সারও নিয়ন্ত্রণ করে। 

কাঠ

সকালে খালি পেটে কাঠবাদাম খেলে, ডাইবেটিস নিয়ন্ত্রণে ও সহায়তা করে। কেননা কাঠবাদামে থাকা ম্যাগনেসিয়াম, যা আমাদের শরীরের রক্তে সরকরার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। আমাদের মধ্যে যারা ডায়াবেটিস টাইপ ২ রোগী রয়েছেন তাদের জন্য, এটি বেশ উপকারী হতে পারে, তবে অবশ্যই পরিমাণ মতন খেতে হবে। 

সকালে খালি পেটে কাঠবাদাম খাওয়ার নিয়ম।

এই আর্টিকেলটিতে, উপরে আমরা সকালে কাঠবাদাম খাওয়ার, উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এরসঙ্গে কাঠবাদামে থাকা পুষ্টিগুণ সম্পর্কেও আমরা বিস্তারিত জানতে পেরেছি। পরিপূর্ণ পুষ্টিগুণ পেতে হলে এই কাঠবাদাম খাওয়ার বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে। চলুন এখন তাহলে জানা যাক, সকালেই খালি পেটে কাঠবাদাম খাওয়ার নিয়ম গুলো সম্পর্কে। 

আরো পড়ুনঃ অর্জুন গাছের ছাল ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম।


রাতে ঘুমানোর আগে, ৪ থেকে ৬টি কাঠবাদাম, সামান্য পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। সব থেকে, কাঠ বাদাম খাওয়ার উত্তম সময় হলো, সকালে খালি পেটে খাওয়া। তবে কোন মতে,অতিরিক্ত পরিমাণ খাওয়া উচিত নয়। এছাড়া অন্যান্য সময়ে যেমন, সকালে নাস্তার পরে এবং বিকেলে স্নাকস হিসেবে আপনি খেতে পারেন। তবে মাথায় রাখবেন, কাঠবাদাম কোনমতেই রাতে খাওয়া উচিত নয়, রাতে কাঠবাদাম না খাওয়াটাই ভাল।

সকালে খালি পেটে কাঠবাদাম খাওয়ার কিছু সতর্কতা।

উপরে আমরা কাঠবাদামের পুষ্টিগুণ জেনেছি, এবং সকালে খালি পেটে কাঠবাদাম খেলে যে সকল উপকার পাওয়া যায় সেগুলো জেনেছি। কাঠবাদাম, খাবার বেশ কিছু সতর্কতা ও রয়েছে। চলুন এখন তাহলে জানা যাক, কাঠবাদাম খাওয়ার সতর্কতা গুলো কি কি।  

  • যে সকল ব্যক্তিদের, আগে থেকে এলার্জি সমস্যা রয়েছে তারা কাঠ বাদাম খাওয়া থেকে একটু বিরত থাকবেন। কেননা কাঠবাদাম, শরীরের এলার্জির মাত্রা বৃদ্ধি করে। এছাড়াও অনেকের কাঠবাদাম খেলে এলার্জি সমস্যা দেখা দেয়, তারা অবশ্যই বুঝে শুনে খাবেন। 
  • যাদের কিডনির সমস্যা রয়েছে তারাও, কাঠবাদাম খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। কেননা কাঠবাদামে অক্সালেট উপাদান রয়েছে, যা কিডনির পাথর হওয়ার প্রবণতা বাড়াতে পারে। 
  • কাঠবাদামের ভিটামিন ই, রয়েছে ভিটামিন ই, আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক সময় ক্ষতিকর হতে পারে, এ ব্যাপারেও সতর্ক থাকা উচিত। 
  • কাঠবাদাম অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন, যেকোনো খাবারই অতিরিক্ত খাওয়ার শরীরের জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ক্ষতিকর হয়। তেমন,ই কাঠবাদামও অতিরিক্ত গেলে ওজন, বেড়ে যেতে পারে। কেননা কাঠবাদাম ক্যালরির একটি বড় উৎস। তাই অবশ্যই অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন, কাঠবাদাম সব সময় পরিমাণ মতোই খাবেন। 

শেষ কথা। সকালে খালি পেটে কাঠবাদাম খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে 

সকালে খালি পেটে, কাঠবাদাম খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমরা ইতিমধ্যেই বেশ কিছু তথ্য জেনেছি। আমরা সকলে হয়তো জানি, যেকোনো বাদামেই আমাদের শরীরের জন্য ভালো। এর মধ্যে কাঠবাদাম তো, সস্তাতেই আমরা পেয়ে থাকি অনেক সময়। গ্রামাঞ্চলের মানুষদের কখনোই হয়তো কাঠ বাদাম কিনে খেতে হয় না। তবে আমাদের এই বাদাম খাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। দৈনন্দিন এর খাদ্য তালিকার সকল খাবারেরই, পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। 

অবশ্যই আমাদের, সকল খাবারই বুঝে শুনে নিয়ম মত খাওয়া উচিত। যাইহোক, এতক্ষণ মনোযোগ সহকারে আর্টিকেলটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আমাদের আজকের আর্টিকেল টি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে, তাহলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে দিবেন। 

                            ( খোদা হাফেজ )

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ভদ্রতা বজায় রেখে কমেন্ট করুন! কারন,প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url