অতিরিক্ত গ্যাস হলে কি খাওয়া উচিত এবং কি উচিত না

পেটের সমস্যা আমাদের প্রত্যেকের রয়েছে। সাধারণ অবস্থায় আমরা কোন খাবার খেলে গ্যাস উৎপন্ন হবে, এটা আসলে খাবার হজম হওয়ার একটা প্রক্রিয়া। একটি সুস্থ শরীরের জন্য সাধারণভাবে গ্যাসের মাত্রা থাকা প্রয়োজন ২০০ মিলিলিটারের কম। শরীরের এই সাধারন গ্যাস মূলত,হাইড্রজেন, মিথেন,কার্বন ডাই অক্সাইড, অক্সিজেন এবং নাইট্রোজেন এর সমন্বয়ে গঠিত হয়। তবে আমাদের মধ্যে ব্যক্তিবেদে শরীরের ব্যাকটেরিয়া জনিত কারণে গ্যাসের মাত্রা কমবেশি হতে পারে। এই মাত্রা যদি বেড়ে যায়, হতে পারে শরীরে নানাবিধ সমস্যা। 

অতিরিক্ত

আজকের আর্টিকেলটিতে আপনাদের সাথে আলোচনা করব। শরীরের অতিরিক্ত গ্যাস কি কারনে হয়, অতিরিক্ত গ্যাস হলে কি খাওয়া উচিত এবং করণীয় কি? এগুলো সম্পর্কে। মনোযোগ সহকারী আর্টিকেলটি পড়ুন কেননা, অতিরিক্ত গ্যাসের সমস্যা আমাদের অনেকের মধ্যেই রয়েছে। 

পোস্ট সূচিপত্রঃ অতিরিক্ত গ্যাস হলে কি খাওয়া উচিত এবং কি উচিত না।

পেটে অতিরিক্ত গ্যাস হওয়ার কারণ।

পেটে অতিরিক্ত গ্যাস শরীরের জন্য খুব অস্বস্তিকার একটি জীবনযাপনের ইঙ্গিত দেয়। বিভিন্ন কারণে আমাদের শরীরের পেটে গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, দৈনন্দিন এর খাদ্য তালিকায় অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভাস। এছাড়াও আরো অনেক কারণ রয়েছে, পেটে অতিরিক্ত গ্যাস হওয়ার। চলুন তাহলে এখন আপনাদের সাথে আলোচনা করি, আমাদের পেটে অতিরিক্ত গ্যাস হওয়ার কারণগুলো কি এ ব্যাপারে। 

অতিরিক্ত তেল মশলা জাতীয় খাবারঃ

অতিরিক্ত তেল মসলা জাতীয় খাবার, পেটে অতিরিক্ত গ্যাস সৃষ্টি করার জন্য অন্যতম। খাবারে একটু বাড়তি স্বাদের জন্য আমরা, অতিরিক্ত তেল ও মসলা ব্যবহার করি। আমাদের জানা প্রয়োজন অতিরিক্ত তেল এবং মসলা খাওয়া, যে কোন মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

তেল মশলা ছাড়া আবার রান্না করে, খাবারও তৈরি করা সম্ভব না। এই ক্ষেত্রে অবশ্যই আমাদের, রান্নায় কম পরিমাণে তেল ও মসলা ব্যবহার করে খাওয়া উচিত। এতে সুস্থ থাকবেন আপনি সুস্থ থাকবে আপনার শরীর ও মন। 

অতিরিক্ত গ্যাস উৎপাদনকারী খাবার খাওয়াঃ

অতিরিক্ত গ্যাস উৎপাদনকারী খাবার খাওয়া, অতিরিক্ত গ্যাস হওয়ার সবচেয়ে অন্যতম মাধ্যম। আমাদের মধ্যে অনেকে আছে যারা জানেন না, কোন ধরনের খাবারে অতিরিক্ত পরিমাণে গ্যাস হয়। যে সকল খাবারে আমাদের পেটে অতিরিক্ত গ্যাসের সমস্যা তৈরি করে সেগুলো হল, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ব্রকলি সবজি গুল এবং ফলের মধ্যে রয়েছে আপেল ইত্যাদী। 

অতিরিক্ত

ফাস্ট ফুড জাতীয় খাবার, আশ যুক্ত খাবার এবং বাজার থেকে আমরা যে ধরনের কোল্ড ড্রিংকস কিনে খেয়ে থাকি এগুলো সাধারণত গ্যাসের সমস্যা তৈরি করে থাকে। 

তাড়াহুড়া করে খাবার খাওয়াঃ 

এই সমস্যাটাও একটা অন্যতম কারণ অতিরিক্ত গ্যাস হওয়ার। আমাদের মধ্যে অনেকে, অনেক সময় খুব দ্রুত খাবার খেয়ে থাকি। এটা কোন মতে করা উচিত নয়, কেননা খাবারের সাথে পেটে বাতাসও চলে যায়।

দ্রুত খাবার খেলে এবং বেশি করে খেলে পেটে বাতাসের পরিমাণটা বেশি চলে যায় যার কারণে অতিরিক্ত গ্যাসের তৈরি হয়। আমাদের সব সময় খাবার, সময় নিয়ে খাওয়া উচিত, কমপক্ষে ২০ মিনিট ধরে খাবার খেতে হবে। 

চুইংগাম, ক্যান্ডি ও দুধ জাতীয় খাবারঃ 

চুইংগাম চিবান এবং চকলেট খাওয়া আমাদের অনেকেরই অভ্যাস। পেটে যদি অতিরিক্ত গ্যাস হয় তাহলে, এই ধরনের খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে। এগুলো খাওয়ার সময় আমাদের পেটে অনেক বেশি পরিমাণে বাতাস ঢুকে যায়, একারণেই গ্যাসের সৃষ্টি হয়। তাছাড়া অনেক সময় দুধে ও পেটে অতিরিক্ত গ্যাসের সমস্যা তৈরি করতে পারে।

শরীরে ল্যাকটোজ ও ইনটলারেন্স থাকলে এ সমস্যা সাধারণত হয় । কারণ হজমে সমস্যা আমাদের সকলকে একরকম নয়। দুধ খেলে আপনার যদি গ্যাসের সমস্যা হয়, তাহলে এটা থেকে বিরত থাকা জরুরি।

আরো পড়ুনঃ নিয়মিত কচু শাক খেলে কি উপকার হয়।

ধূমপান কারণেঃ

ধূমপান করেন না এমন পুরুষ মানুষ আমাদের দেশে খুব কমই আছে। ধূমপান আমাদের শরীরের অতিরিক্ত গ্যাস হওয়ার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি বাড়ায়। ধূমপান করার সময়, সম্পূর্ণরূপে আমরা পেটে, সিগারেটের ধোয়ার সাথে বাতাস খেয়ে ফেলি। যেটা অতিরিক্ত গ্যাস হওয়ার একটি মুখ্য কারণ। 

তাছাড়া সিগারেট থাকা নিকোটিন আমাদের শরীরের কি ক্ষতি করে তা কারো কাছেই অজানা নয়। ধূমপানের কারণে আমাদের মৃত্যু পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে, তাই এ ব্যাপারে সাবধান থাকতে হবে।

মানসিক চাপের কারণঃ 

মানসিক চাপ অর্থাৎ দুশ্চিন্তা অনেকের মধ্যে সমস্যাটা দেখা যায়। কোন কিছু হলেই খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিয়ে, চিন্তায় দিন পার করে। এতে করেও হতে পারে পেটে অতিরিক্ত গ্যাসের সমস্যা। কেননা অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার কারণে খাবারে অনিয়ম হয়ে যায়। এবং এই অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার কারণে আমাদের হজম প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। 

অতিরিক্ত পরিমাণে খাবার খাওয়াঃ 

বেঁচে থাকার জন্য আমাদের খাবার খাওয়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, সকলেই জানি। তবে খাবার কতটুক খাওয়া প্রয়োজন, আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য। এ ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে, প্রয়োজনে তুলনা অতিরিক্ত খাবার খেয়ে ফেললে, হজমে সমস্যা হয়। যা পেট অতিরিক্ত গ্যাসের সৃষ্টি করে। তাই সব সময় খাবার পরিমাণ মতোই খাওয়ার চেষ্টা করবেন। 

অন্যান্য কারণ যেগুলো রয়েছেঃ  

  • আর্টিকেল টিতে উপরে বলা হয়েছিল যে, ব্যক্তিভেদে আমাদের এক, একজনের গ্যাসের মাত্রা বেশি হতে পারে। শরীরে যদি ব্যাকটেরিয়া গত সমস্যা থাকে তাহলে এটা দেখা দেওয়ার সম্ভবনা বেশি। 
  • এছাড়াও অনেকের হজম গত সমস্যা রয়েছে পেটে, খাবার খাওয়ার পরে হজম হতে অনেক সময় লাগে। যা পেটে ক্ষুধা লাগার পরিমাণ কমায় এবং পেট ফাঁপার মতো সমস্যা সৃষ্টি করে। এটা সাধারণত সাস্থগত, অবস্থার কারণে হয়ে থাকে।  
  • আমাদের কোন কারনে শরীর অসুস্থ হলে, অনেক সময় ডাক্তারের শরণাপন্ন হই। এবং সুস্থতার জন্য বিভিন্ন ধরনের ওষুধ খেয়ে থাকি। সকল ওষুধের মধ্য, এমন অনেক ওষুধ রয়েছে এগুলোর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণে পেটে অতিরিক্ত গ্যাসের সৃষ্টি হতে পারে। যেমন, যেকোন ক্যালসিয়ামের ওষুধ খেলে পেটে গ্যাসের সৃষ্টি হয়। 

পেটে অতিরিক্ত গ্যাস হলে যে সকল খাবার খাওয়া উচিত। 

আজকের আর্টিকেলটির মূল বিষয় হলো, অতিরিক্ত গ্যাস হলে কি খাওয়া উচিত এবং কি উচিত না। উপরে আমরা অতিরিক্ত গ্যাস হওয়ার বেশ কিছু কারণ জানতে পেরেছি। আমাদের কারো যদি পেটে অতিরিক্ত গ্যাসের সমস্যা থাকে, তবে অবশ্যই অস্বস্তিকর জীবন যাপন না করে, উপড়ে উল্লেখিত খাবার গুলো এড়িয়ে চলা উচিত। এবং অতিরিক্ত গ্যাসের সমস্যা হলে কি খাওয়া উচিত, এ ব্যাপারে জানা যাক।

অতিরিক্ত

আদাঃ

আদা শরীরের জন্য প্রদাহ বীরধি হিসাবে কাজ করে। আদা আমাদের শরীরের পাকস্থলী গ্যাস্ট্রিক রসের পরিমাণ বাড়ায়, যা খুব দ্রুত হজমে সহায়তা করে। আদা খেলে পেটের পাকস্থলীর খাবার নাড়াচাড়া দেয়, ফলে পেটে অতিরিক্ত জমে থাকা বর্য বেরিয়ে যায়র

আদার এন্টি ব্যাকটেরিয়াল গুণাবলীর কারণে আমাদের পেট ফাঁপা এবং, পেটে গ্যাসটিক সংক্রান্ত সমস্যা সমাধান করে। পেটে অতিরিক্ত গ্যাসের সমস্যা থাকলে অবশ্যই নিয়মিত আদা খাওয়া শুরু করুন।

জিরাঃ

রাতে ঘুমানোর আগে সামান্য পরিমাণ কিছু জিরা নিয়ে, ভালোভাবে ধুয়ে এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। সকাল বেলা ঘুম থেকে ওঠার পরে এই, জিরা ভেজানো পানি খেয়ে ফেলুন। ক্রমান্বয়ে কয়েকদিন এই নিয়ম চালিয়ে যেতে থাকুন। অল্প দিনের ভিতরে দেখতে পাবেন আপনার হজম সমস্যা দূর করতে পেরেছেন। 

শাসাঃ

আমাদের দৈনন্দীনের, খাদ্য তালিকায় শশা সবজি হিসেবে পরিচিত। সাধারণত শশায় প্রায় ৯৫% পানি থাকে, বলা যায় শসা পানির বড় একটি উৎস। শশায় থাকা পানি আমাদের শরীরের আদ্রতা বজায় রাখে, এবং এর ফাইবার ও প্রোটিন আমাদের হজম ক্ষমতা উন্নত করে। যার কারনে দূর হয় কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা।

শসা খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা রয়েছে, আমরা যদি অতিরিক্ত পরিমাণে শসা খেয়ে ফেলি। বিশেষ করে রাত্রে, তাহলে উল্টো গ্যাসের সমস্যা, পেট ফাঁপা ও হজমে সমস্যা বাড়তেও পারে। এক্ষেত্রে বেশি খাওয়া থেকে সবসময় বিরত থাকবেন। 

আরো পড়ুনঃ চীনা বাদামের উপকারীতা জানুন এখানে।

পাকা কলা ও পেঁপে খাওয়াঃ

পাকা কলা ও পেঁপে আমাদের গ্যাসের সমস্যার জন্য কার্যকরী। পাকা কলা, পটাশিয়াম, ফাইবার, ভিটামিন  কার্বোহাইড্রেটের ভাল একটা উৎস। কলায় থাকা ফাইবার আমাদের পাকস্থলীর হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। অনেক সময় দেখা যায় আমরা, পেট ফাঁপা পেটের ব্যথা পেট গরম হয় ইত্যাদি সমস্যায় পরী। এগুলা সমাধানও কলার অবদান রয়েছে। এছাড়াও কলা আমাদের মানসিক অবস্থা নিয়ন্ত্রণে রাখে। 

এবারে পেঁপের কাছে আসা যাক, পাকা পেঁপেতে থাকা এনজয় আমাদের, হজম ক্ষমতা উন্নত করে, যেটা গ্যাসের সমস্যা দূর করতে বেশ কার্যকর। তবেই আমাদের খেয়াল রাখতে হবে পাকা পেঁপে হোক কিংবা পাকা কলা পরিমাণের চেয়ে বেশি খাওয়া ঠিক না। 

উষ্ণ গরম পানি ও ফাইবার যুক্ত খাবারঃ

হজম ক্ষমতা উন্নতির জন্য আমাদের শরীরে ফাইবারের গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের কারো পেটে অতিরিক্ত গ্যাস হলে অবশ্যই ফাইভার সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। এদের মধ্যে সবুজ শাকসবজি ফল ও শস্য জাতীয়, যে কোন খাবার খেলেই হবে।

এছাড়াও পানি আমাদের সকলেরই খেতে হয়, পানি ছাড়া জীবন অচল। তবে যদি থাকে পেটে গ্যাস তাহলে অবশ্যই পানি, সব সময় উষ্ণ গরম করে খাওয়ার চেষ্টা করবেন। কেননা উষ্ণ গরম পানি আমাদের শরীরের পচন যন্ত্র এবং গ্যাসের সমস্যা রোধ করতে পারে।

শেষ কথা। অতিরিক্ত গ্যাস হলে কি খাওয়া উচিত, কি উচিত না। 

অতিরিক্ত গ্যাসের সমস্যা হলে আমাদের কি করণীয়তা হয়তো আর, আমাদের বলতে বাকি নেই। অবশ্যই যে সকল খাবার খেলে আমাদের কাছে সমস্যা বাড়তে পারে, সেগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এবং দেশের সমস্যায় যে সকল খাবার আমাদের খাওয়া উচিত সেগুলো খেতে হবে। সমস্যা কি খাওয়া উচিত কি খাওয়া উচিত না সে ব্যাপারে উপরে আলোচনা করেছি। গ্যাস সমস্যাটাকে শরীরে বাসা বাঁধতে দেওয়াটা ঠিক না। গ্যাসের কারণে আমাদের শরীরে নানাবি সমস্যা হয়, কেননা গ্যাস আমাদের শরীরের মূল শক্তির উৎসটাকেই নষ্ট করে ফেলে। 

আমাদের মধ্যে কেউ যদি, অতিরিক্ত গ্যাসের সমস্যায় ভুগি তাহলে, অতিরিক্ত গ্যাসের সমস্যায় কি খাওয়া উচিত এবং কি খাওয়া উচিত না, এগুলো অবশ্যই মেনে চলতে হবে। কেননা গ্যাসের সমস্যা ওষুধ আমাদের সাময়িক সুস্থতা দিলেও। স্থায়ীভাবে কোন সমাধান দিতে পারে না। যশোর সমস্যা সমাধানের একমাত্র উপায় হলো খাদ্য অভ্যাসে পরিবর্তন আনা। যাইহোক, মনোযোগ সহকারে আজকের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে দিবেন। 

                               ( খোদা হাফেজ )  






 


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ভদ্রতা বজায় রেখে কমেন্ট করুন! কারন,প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url