থানকুনি পাতার উপকারিতা,অপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম

থানকুনি পাতার সাথে, আমাদের দেশের মানুষেরা খুবই পরিচিত, বিশেষ করে গ্রাম অঞ্চলের মানুষেরা। গ্রামের অনেক, জায়গাতেই আগাছার মত জন্মে থাকে এই থানকুনি পাতা। থানকুনি পাতা মূলত এক ধরনের ভেষজ উদ্ভিদ। এটাকে আগাছা  ভেবে মোটেও ভুল করবেন না। কেননা থানকুনি পাতার ব্যবহার গ্রাম অঞ্চলে সেই বহুকাল আগে থেকেই। আমাদের দেশ সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে লুকোচ চিকিৎসায় এখনো থানকুনি পাথার ব্যবহার হয়। ইউনানী ও আয়ুর্বেদীয় ঔষধ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই তানকুনি পাতা। 

পাতা

এক কথায় বলা চলে থানকুনি পাতা আমাদের জন্য সৃষ্টিকর্তার দেওয়া বড় নেয়ামত। তাছাড়া চাইলে এটা যেকোনো মুহূর্তে সংগ্রহ করা সম্ভব। আজকের আর্টিকেলটিতে আপনাদের সাথে আলোচনা করব, থানকুনি পাতার উপকারিতা, অপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। কথা না বাড়িয়ে চলুন জেনে নেওয়া যাক, আজকের আর্টিকেল টির মূল বিষয় সম্পর্কে। 

পোস্ট সূচিপত্রঃ থানকুনি পাতার উপকারিতা,অপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম।

থানকুনি পাতার পুষ্টি উপাদান।  

আমাদের মধ্যে যারা গ্রাম অঞ্চলে বসবাস করি, সকলের কাছে থানকুনি পাতা পরিচিত। উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের ভাষায় থানকুনি পাতার, বৈজ্ঞানিক নাম Centella asiatica। তবে আমরা হয়তো অনেকেই এর পুষ্ট উপকারিতা সম্পর্কে জানিনা, চলুন জেনে নেই আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার এক অন্যতম হাতিয়ার, থানকুনি পাতার পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে। 

থানকুনি পাতা একটি ঔষধি ভেষজ উদ্ভি, এটা আমরা এখন সকলেই জানি। এই থানকুনি পাতায়, রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি, অ্যামাইনো এসিড, বিটা ক্যারোটিন, ফাইবার, প্রোটিন, ভিটামিন এ ও রয়েছে। এছাড়াও ধানকুনি পাতায় আরো রয়েছে, ক্যালসিয়াম, আয়রন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর যৌগ ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ইত্যাদি পুষ্টি উপাদান রয়েছে। সামান্য কিছু পরিমাণে প্রোটিন পাওয়া যায় থানকুনি পাতায়, যা আমাদের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে পারে।

থানকুনি পাতায় যে সকল উপকারিতা পাওয়া যায়।

থানকুনি  পাত একটি ঔষধি ভেষজ উদ্ভিদ এবং এর পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি। এটা বুঝতে পেরেছি, থানকুনি পাতা যে সকল পুষ্টি উপাদান রয়েছে এগুলো আমাদের আমাদের শারীরিক স্বুস্থতার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক থানকুনি পাতা যে সকল উপকারিতা গুলো পাওয়া যায় সেগুলো কি কি।

শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধ করেঃ

থানকুনি পাতা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক অংশে বৃদ্ধি করে। কেননা থানকুনি পাতায় থাকা, ভিটামিন সি ও খনিজ আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং কোষের বৃদ্ধি ও মেরামতের ভুমিকা রাখে। এছাড়াও ভিটামিন এবং খনিজ আমাদের শরীরের বিভিন্ন রাসায়নিক প্রক্রিয়াকে সচল রাখে, যার কারণে শক্তি উৎপন্ন হয়। 

হজম শক্তির উন্নতি করেঃ

হজমে সমস্যায় ভোগেন, এমন মানুষের সংখ্যা আমাদের দেশে খুঁজলে অনেক মিলবে। আমাদের পাকস্থলীর হজমের কার্যক্ষমতা কম হলে, শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয় যেমন, পেট ফাঁপা, বমি ভাব এবং গ্যাসের সমস্যাও হয়। তবে আপনার হাতের কাছে যদি থাকে থানকুনি পাতা, তাহলে তো চিন্তার কোন কারণ নেই।

কেননা প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা কম করে হলেও থানকুনি পাতা রাখলে, মিলবে পাকস্থলীর হজমের সমস্যা। হজমের সমস্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি, থানকুনি পাতা আমাদের, মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তিও বৃদ্ধি করে।

আরো পড়ুনঃ কিডনি ভাল রাখতে কোন খাবার গুলা খাব। 

ত্বকের সমস্যার সমাধানে কাজ করেঃ 

ত্বক সুন্দর আমাদের সকলেরই পছন্দ, এই ত্বকের যত্নেও থানকুনি পাতার রয়েছে ভূমিকা। আমাদের মধ্যে যাদের ত্বকের আদ্রতা কমে গেছে, কোমলতা নষ্ট হয়েছে। কিংবা শরীরের কোন কোন জায়গায় বলিরেখার মত সমস্যা দেখা দিয়েছে, তারা অবশ্যই নিয়মিত থানকুনি পাতা খাবেন। কেননা থানকুনি পাতায় থাকা, অ্যামাইনো এসিড, ফ্যাটি এসিড এবং ফাইটো ক্যামিক্যাল।

আমাদের শরীরের ত্বকের আদ্রতা ও কমলতা বজায় রাখে, সাথে বলি রেখার মত, সমস্যাও দূর করে এবং তককে উজ্জ্বল করতে সহায়তা করে। তাছাড়াও মুখের ব্রণ এবং শরীরের কোন জায়গায় ক্ষত সারাতে বেশ উপকারী এই থানকুনি পাতা। 

উচ্চ রক্তচাপ ও অনিতদ্রা কমায়ঃ

উচ্চ রক্তচাপ আমাদের শরীরের জন্য যেকোনো সময় বিপদ ডেকে আনতে পারে। এই উচ্চ রক্তচাপের কারণে, দেখা দিতে পারে অনিদ্রার মত সমস্যা। থানকুনি পাতার পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরের উচ্চ রক্তচাপ এবং অনিদ্রায় সমাধান দিয়ে থাকে। তাছাড়া ধানকুনি পাতা আমাদের শরীরের লিভারের কার্যক্ষমতা উন্নত করে এবং বিষাক্ত উপাদান দূর করে দেয়। 

বিভিন্ন ধরনের ব্যথার উপশম কমায়ঃ 

বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ব্যথার সমস্যা অনেকেরই হয় যেমন,বাতজনিত ব্যথা, হাড়ের ব্যাথা ইত্যাদি। এক্ষেত্রে থানকুনি পাতা প্রদাহ বিরোধী হিসেবে কাজ করে, ফলে মুক্তি পাওয়া যায় শরীরের ব্যথা জনিত সমস্যা থেকে। 

গ্যাস এবং আলছার জনিত সমস্যা সমাধানে কাজ করেঃ

গ্যাস এবং আলছারের সমস্যা আমাদের অনেকের রয়েছে। এই সমস্যা সমাধানে আমরা থানকুনি পাতা সেদ্ধ করে সেই রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে সকালে, খেলে মিলবে গ্যাস এবং আলসারের সমস্যা। 

চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ

সামান্য একটু বয়স বাড়লে, চুল পড়ার সমস্যা অনেকেরই দেখা দেয়। তবে থানকুনি পাতা আমাদের চুল পড়া রোধ করতে এবং মাথার ত্বক সুস্থ রাখতে ভূমিকা রাখে। এই কাজ করে থাকে থানকুনি পাতায় থাকা আয়রন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা মাথার ত্বকে রক্তের সঞ্চালন বৃদ্ধি করে যার ফলে নতুন চুল গজায়।

থানকুনি পাতার অপকারিতা। 

আজকের আর্টেজের বিষয় থানকুনি পাতার উপকারিতা, অপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। আমরা ইতিমধ্যে বেশ কিছু উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারলাম। একটা কথা, আমরা সকলেই জানি, যার উপকারিতা রয়েছে তার অপকারিতা রয়েছে। চলুন জেনে নেই থানকুনি পাতা খাওয়ার অপকারিতা গুলো কি কি। 

পাতা

  • আমাদের খাদ্য তালিকার লিস্টের, যে কোন খাবারই পরিমাণ মতো খাওয়া উচিত। থানকুনি পাতাও বেশি খেলে, পেটের সমস্যা সমাধানের জায়গায় আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। এবং অতিরিক্ত সেবনের কারণে মাথা ঘুরানোর মতো সমস্যাও হতে পারে। 
  • আমাদের মধ্যে যাদের লিভারের সমস্যা রয়েছে, তারা চাইলে ধানকুনি পাতা খেতে পারবেন না। লিভারের সমস্যা থাকলে থানকুনি পাতা খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। 
  • গর্ভবতী মায়েরা, গর্ভাবস্থায় থানকুনি পাতা না খাওয়াই ভালো। যদিও এর কোন প্রভাব সম্পর্কে চিকিৎসকেরা পর্যাপ্ত কোন তথ্য দেয়নি। তারপরও চিকিৎসক দের মতে, গর্ভবতী মায়েদের থানকুনি পাতা খাওয়া থেকে বিরত থাকাই ভাল।
  • যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা হয়েছে, নিয়মিত ডায়াবেটিসের ওষুধ খেতে হয়। তারা কোনভাবেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া থানকুনি পাতা খাবেন না। কেননা এটি শরীরে রক্তের শর্করা মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে, যা ডায়াবেটিসের সমস্যা আরো বারিয়ে তুলতে পারে। 

থানকুনি পাতা খাওয়ার নিয়ম। 

আমরা ইতিমধ্যে থানকুনি পাতা খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এখন আমরা জানবো থানকুনি পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। 

  • খুব সাধারণভাবে, থানকুনি পাতা সকালে খালি পেটে চার থেকে পাঁচটি চিবিয়ে খেতে পারেন। তবে এর জন্য অবশ্যই আপনার থানকুনি পাতা ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। 
  • থানকুনি পাতা আমরা শাক হিসাবে, ভাজি করেও খেতে পারি। তেল, পিয়াজ,রসুন, মরিচ ইত্যাদী, সাধারণত যেভাবে আমরা অন্যান্য শাক ভাজি করে খেয়ে থাকি ঠিক সেইভাবে। এছাড়াও থানকুনি পাতার বড়া সালাদ এবং অন্যান্য যেকোনো তরকারি সাথে ও খেতে পারি। 

শেষ কথা। থানকুনি পাতার উপকারিতা, অপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম। 

থানকুনি পাতা সম্পর্কে আমরা ইতিমধ্যে অনেক তথ্য জানতে পেরেছি। কিভাবে থানকুনি পাতা খাব, থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো কি কি ইত্যাদি সকল বিষয়ে জেনেছি। থানকুনি পাতা দামে খুবই সস্তা, তাছাড়া ও গ্রাম অঞ্চলের আনাচে-কানাচে এগুলো পাওয়া যায়। আমাদের সকলের উচিত, প্রতিনিয়ত পরিমান মত থানকুনি পাতা খাওয়ার, অভ্যাস করা। কেননা পুষ্টির চাহিদা যোগান দেওয়ার জন্য থানকুনি পাতা যে ভূমিকা রাখে, তা এখন আমাদের কাছে অজানা নয়। 

আশা করি, আপনারা সকলে থানকুনি পাতা খাওয়ার অভ্যাস করবেন। কেননা আমাদের শারীরিক সুস্থতায় প্রাকৃতিক চিকিৎসার গুরুত্ব সব থেকে বেশি। এতক্ষণ মনোযোগ সহকারে আর্টিকেলটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে দিবেন। 

                             ( খোদা হাফেজ )


 





এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ভদ্রতা বজায় রেখে কমেন্ট করুন! কারন,প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url