আলু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো জানুন।
আলু, আমরা প্রায় সকলেই এই সবজিটির সাথে পরিচিত। শুধু পরিচিতই নয় আলু প্রতিটা পরিবারের সাথেই ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আলু আমাদের বিশ্বে একটি প্রধান খাদ্য হিসেবে পরিচিত। বিশ্বে আলু সর্বপ্রথম উৎপাদিত হয় মধ্য আমেরিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকার কিছু অঞ্চলে। তবে বর্তমান সময় সব থেকে বেশি পাওয়া যায় ভারত, পেরু, এবং বলিবিয়াতে।

আলু একটি সাধারন সবজি হলেও এর অনেক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন এর উপকারিতা ও রয়েছে ঠিক তেমনি কিছু অপকারিতা রয়েছে। আজকের আর্টিকেলটিতে আপনাদের সাথে আলু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে কিছু তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করব।
তাহলে চলুন, কথা না বাড়িয়ে জেনে নেয়া যাক আলুর উপকারিতা, ও অপকারিতা সম্পর্কে। মনোযোগ সহকারে আর্টিকেলটি পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্রঃ আলু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা।
- আলুতে কোন ধরনের পুষি উপাদান পাওয়া যায়।
- আলু খাওয়ার উপকারিতা।
- শরীরের ওজন বৃদ্ধিঃ
- হজম শক্তি বাড়াতেঃ
- ত্বকের জন্য ভালোঃ
- ক্যান্সার প্রতিরোধে আলুর গুনাগুনঃ
- হৃদরোগের উপকারিতায়ঃ
- কিডনিতে পাথর ও চুলের জন্যঃ
- রক্তচাপ কমায়ঃ
- আলুর অপকারিতা।
- উপসংহার।
আলুতে কোন ধরনের পুষি উপাদান পাওয়া যায়।
আমি আগেই বলেছি, আলু আমাদের বিশ্বের প্রায় সকল পরিবারের কাছেই, সুপরিচিত এবং সুস্বাদু একটি সবজি। এটা শুধু খেতেই সুস্বাদু নয়, আলুতে রয়েছে নানা ধরনের ঔষধি গুনাগুন। আলুতে সবথেকে বেশি পরিমাণে স্টার্চ থাকে, একে আবার কার্বোহাইড্রেটের ভান্ডার হিসেবে ও বিবেচনা করা হয়। আলুতে সঠিক পরিমাণে ক্যালরি পাওয়া যায়, এবং খুব কম পরিমাণে প্রোটিন পাওয়া যায়।
প্রতি ১০০ গ্রাম আলুতে প্রায় ১.৬% প্রোটিন, ২২.৬% কার্বোহাইড্রেড, ০.৪% খনিজ এবং ৯৭% ক্যালোরি থাকে। তবে আলু কখনোই খোসা ছরিয়ে খাওয়া উচিত নয়, কারণ আলুর সবথেকে বেশি পুষ্টি রয়েছে খোসার নিচের অংশে। আলুর খোসায় পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন ও খনিজ পদার্থ থাকে। এক কথায় বলতে গেলে আলুর চেয়ে ৭ গুণ বেশি ক্যালসিয়াম এবং ১৬ গুণ বেশি আয়রন থাকে আলুর খোসাতে।
আলু খাওয়ার উপকারিতা।
উপরে আমরা আলুর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানতে পারলাম। তাছাড়া আলু আমাদের দৈনন্দিন এর খাদ্য তালিকায় সবার শীর্ষে থাকে। তাই অবশ্যই এর উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো আমাদের জানা প্রয়োজন। তাহলে জেনে নিন আলুর উপকারিতা গুলো কি কি?
শরীরের ওজন বৃদ্ধিঃ
অনেক সময় আমরা অনেকেই চিকন স্বাস্থ্য নিয়ে অনেক চিন্তা করে থাকি।আলুতে থাকা কম প্রোটিন এবং বেশি পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট, শরীরের ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। কেননা কার্বোহাইড্রেট আমাদের শরীরের ওজন বাড়ানোর সহায়ক। আপনি যদি চিকন স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত থাকেন এবং আপনার শরীরের ওজন বাড়াতে চান। তাহলে অবশ্যই আপনার দৈনন্দিন এর খাদ্য তালিকায় পরিমান মত আলু রাখবেন।
যে সকল মানুষ কুস্তিগীর এবং বডি বিল্ডার রয়েছে, তাদের খাদ্য তালিকার সবথেকে বড় একটি অংশ হলো আলু। আপনি যদি জিম করে থাকেন তাহলে জিমে যাওয়ার ৩০ মিনিট আগে একটি সিদ্ব আলু খাবেন। কেননা এটি আপনাকে শারীরিক শক্তি জোগাতে বেশ ভুমিকা রখে।
হজম শক্তি বাড়াতেঃ
আমাদের পাকস্থলীর খাবারের হজম শক্তি বাড়াতেও আলুর ভুমিকা রয়েছে। কেননা আলুতে থাকা কার্বোহাইড্রেট যা সহজে হজম করে এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। সেদ্ধ আলু রোগি এবং শিশুদের জন্য অনেক ভাল খাবার বলে গণ্য করা হয়,কেননা এটি কঠিন খাবার হজম করে এবং শরীরের শক্তি যোগায়।
ত্বকের জন্য ভালোঃ
আলু ত্বকের জন্য বেশ কার্যকর, আলুতে থাকা ভিটামিন সি এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এর পাশাপাশি আলুতে আরো রয়েছে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, এবং জিংক এর মত খনিজ উপাদান যা আমাদের ত্বকের জন্য বেশ উপকারী। এছাড়াও কাঁচা আলুতে মধু মিশিয়ে ত্বক ও মুখের একটি সুন্দর ফেসপ্যাক তৈরি করা যায়। এবং হাতের চারপাশে যে কালো দাগ থাকেন, এই কালো দাগ পরিষ্কার করার জন্য আলুর ভূমিকা রয়েছে।
ক্যান্সার প্রতিরোধে আলোর গুনাগুনঃ
আলুর ঔষধি গুনাগুন গুলো আমাদেরকে ক্যান্সার প্রতিরোধেও সহায়তা করে থাকে। আলু বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে এদের মধ্যে লাল এবং বাদামি আলুতে রয়েছে ফ্লাভনয়েড অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন এ যা আমাদের শরীরের ক্যান্সার কোষ গঠনে বাধা প্রধান করে থাকে।
এছাড়াও ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি এর উচ্চমাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর বৈশিষ্ট্য থাকায় আলু ক্যান্সারের বিধ্বংসী প্রভাব থেকে আমাদের শরীরকে সুরক্ষা প্রদান করে থাকে।
হৃদরোগের উপকারিতায়ঃ
আলুতে ভিটামিন, খনিজ এবং অন্যান্য পুস্টির পাশাপাশি, এতে রয়েছে ক্যারটিনয়েড, লুটেইন, যেক্সাথিন নামক উপাদান যা আমাদের হৃদপিন্ড এবং অন্যান্য অভ্যন্তরীণ অঙ্গ গুলির জন্য অনেক উপকারী।
এছাড়া ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীরা আলু খেলে, খুব সহজেই শরীরের শক্তি ফিরে পেতে পারেন।
কিডনিতে পাথর ও চুলের জন্যঃ
আমাদের দৈনন্দিন এর খাদ্য তালিকায় যেসব খাবারে,প্রোটিনের পরিমাণ বেশি, সেগুল কিডনিতে পাথর হওয়ার প্রবণতা বাড়াতে পারে। যেমন,চিংড়ি, মাছ,কাঁচা কলা, কালো ছোলা, মটরশুটি, ডিম, দুধ ইত্যাদি কিছু খাবারে অত্যাধিক পরিমাণে প্রোটিন পাওয়া যায়। এই সমস্ত খাবারগুলি আবার আমাদের শরীরে ইউরিক এসিডের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। আলুতে থাকা আয়রন এবং ক্যালসিয়াম উভয়ই কিডনিতে পাথর হওয়ার হাত থেকে কিছুটা রক্ষা করে।
এছাড়া যাদের চুল ওকালে সাদা হয়ে যায় এবং চুল পড়ে তাদের জন্য এটি একটি ভালো সমাধান। আপনি যদি একটি পাত্রে কিছু পরিমাণে খোসা ছড়ানো আলো নিয়ে নেন, এবং সেটি সিদ্ধ করার পর এই পানি ফিল্টার করে। মাথায় শ্যাম্পু করার পরে, আলু সিদ্ধ করা সেই পানি দিয়ে আপনার চুলগুলি ধুয়ে ফেলুন, এটি আপনার চুলের জন্য বেশ কার্যকরী হবে। ভালো ফলাফলের জন্য দু একদিন ব্যবহার করতে পারেন।
রক্তচাপ কমায়ঃ
উচ্চ রক্তচাপ আমাদের শরীরের একটি বড় ধরনের সমস্যা। সাধারণত বদহজম, ডায়াবেটিস, মানসিক চাপ ও খাদ্যের ভারসাম অনিয়মিতর কারণে উচ্চ রক্তচাপ হয়ে থাকে। আলু আমাদের শরীরের উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে। আলুতে থাকা ভিটামিন সি এবং ফাইবারের কারণে এটিকে আপনি বদহজমের ও চিকিৎসা বলতে পারেন। আলুর ফাইবার শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় যা শরীরে ইনসুলিনের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
আ্লুর অপকারিতা।
আলু যেমন পুষ্টিকর তেমনি আমাদের সকলের কাছে খুব জনপ্রিয় একটি খাবার। তবে এর যেমন উপকারিতা রয়েছে ঠিক তেমনি কিছু অপকারিতা রয়েছে। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক অপকারিতা গুলো কি কি।
- আমাদের শরীরের পুস্টির চাহিদা মেটাতে আলু খেতে হবে। তবে আমরা যদি অতিরিক্ত পরিমাণে আলু খেয়ে ফেলি তাহলে ডায়রিয়ার মতন সমস্যা হতে পারে।
- সবুজ রঙের যে আলু রয়েছে সেটি একটু বিষাক্ত কেননা এতে ৩-৩ অ্যালকালয়েড, সোলেনিন,চ্যাকোনিন এবং আর্সেনিক থাকে। তাই সবুজ আলো খাওয়ার ব্যাপারে একটু সতর্ক থাকবেন।
- নষ্ট বা পচন ধরা আলু কখনোই খাবেন না, কেননা নষ্ট বা পচা আলু খেলে শরীরে বিষক্রিয়ার প্রভাব ফেলতে পারে।
- যে সকল রোগীরা ডায়াবেটিস এর সমস্যায় ভুগছেন তারা আলু খাওয়া থেকে অবশ্যই বিরত থাকবেন। কেননা আলু খেলে শরীরের শর্করার ভারসাম্যহীনতা ক্ষুধা হ্রাস ও ডায়াবেটিসের মত সমস্যা বাড়ায়।
- গর্ভবতী মহিলারা ভাজা আলু খাবেন, তবে কাঁচা আলু খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
উপসংহার।
আলু আমাদের খাবার তালিকায় নিত্য দিনের সঙ্গী। আমরা প্রতিনিয়ত কি খাবার খাচ্ছি তার উপকারিতা কি অপকারিতা কি কতটুক পরিমানে খেতে হবে এগুলো ভালোভাবে জেনে বুঝে খাওয়া উচিত। কেননা সচেতনতাই পারে আমাদেরকে সুস্থ রাখতে।
মনোযোগ সহকারে আর্টিকেল পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। ভালো লেগে থাকলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে ক্ষমা করে দিবেন।
( খোদা হাফেজ )
ভদ্রতা বজায় রেখে কমেন্ট করুন! কারন,প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url