হঠাৎ জ্বর হলে কি করা উচিত?
জ্বর হওয়া অর্থাৎ শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া। আমাদের শরীরে বিভিন্ন কারণে তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে। কখনো যদি হঠাৎ করে আপনার শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায় তাহলে আপনি কি করবেন। জ্বর আমাদের প্রত্যেকটা মানুষেরই হয়ে থাকে। তাই বুঝতেই পারছেন আমাদের শরীরে যদি জ্বর হয়। তাহলে প্রাথমিক অবস্থায় আমাদের কি করা উচিত, এটা আমাদের সকলেরই জানা প্রয়োজন।
আজকের এই পোস্টটিতে, আলোচনা করব আমাদের হঠাৎ জ্বর হলে কি করা উচিত।
পোস্ট সূচিপত্রঃ হঠাৎ জ্বর হলে কি করা উচিত?
- জ্বর হয়েছে কিনা বুঝবেন কিভাবে।
- হঠাৎ জ্বর হলে করনীয়।
- গোসল অথবা গা মুছতে হবে ঃ
- জলপট্টি বা বরফের ব্যবহার করবেনঃ
- বিশ্রাম করতে হবে ঃ
- পানি খেতে হবে ঃ
- খাবার ও পোশাকে সচেতনতাঃ
- শেষ কথা, জ্বর হলে করনিয়।
জ্বর হয়েছে কিনা বুঝবেন কিভাবে।
হঠাৎ করে যদি আমাদের শরীরে তাপমাত্রা বেড়ে যায়। তাহলে দুশ্চিন্তা না করে অবশ্যই আমাদের আগে বুঝে নিতে হবে, আসলে শরীরে জ্বর হয়েছে কি না। এর জন্য থার্মোমিটার দিয়ে অবশ্যই শরীরে তাপমাত্রা মাপিয়ে নিতে হবে।
আমাদের শরীরের তাপমাত্রা সাধারণত ৯৮.৪ ডিগ্রী ফারেনহাটের কম। তবে আমাদের এই শরীরের সাধারণ তাপমাত্রা দিনে বিভিন্ন সময় পরিবর্তন হয়ে থাকে। যেমন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর আমাদের শরীরের তাপমাত্রা কম থাকে তবে বিকেল ও সন্ধ্যার দিকে এই তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে যায়।
যদি আমাদের শরীরের তাপমাত্রা ৯৯ ডিগ্রি ফারেনহাট বা তার বেশি হয়, এবং বিকেলে ও সন্ধ্যার দিকে যদি ১০০ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তার বেশি হয়। তাহলে বুঝে নিতে হবে এটা জ্বর।
এক্ষেত্রে যদি শরীরের তাপমাত্রা ৯৯ ডিগ্রী ফারেনহাট থেকে বেড়ে ১০০ অতিক্রম করে তখন তা সামান্য জ্বর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এবং যদি ১০৩ এর কাছাকাছি যায় তখন তা মাঝারি হিসেবে ধরা হয়, এবং এর উপরে গেলে এটি উচ্চ জ্বর হিসেবে গণ্য করা হয়। তখন অবশ্যই আমাদেরকে সতর্ক হতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
হঠাৎ জ্বর হলে করণীয়।
জ্বর আমাদের যেকোনো সময় হতে পারে, জ্বর মূলত কোন রোগ নয়, এটা হল অন্য রোগের লক্ষণসমূহ। সাধারণত ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ইত্যাদি দ্বারা আক্রান্ত হলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। হঠাৎ জ্বর হলে আমাদের প্রাথমিকভাবে যে কাজগুলো করতে হবে সেগুলো হল।
গোসল অথবা গা মুছতে হবে ঃ
অনেক সময় জ্বর হলে আমরা, মনে করি গোসল করা যাবে না। তবে এটা আসলে ঠিক না, যদি আপনার জ্বর হয়ে থাকে তাহলে হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করে নিবেন। এতে করে আপনার শরীরের তাপমাত্রা কিছুটা কমবে এবং শরীর চলমান থাকবে। তবে খেয়াল রাখবেন অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করা যাবে না। এতে করে ত্বকের নিচে রক্ত জ্বলিকা সংকুচিত, হতে পারে। আবার অতিরিক্ত গরম পানি দিয়েও গোসল করা যাবে না।
আপনি যদি গোসল করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ না করেন তাহলে এর বিকল্প হতে পারে। ভেজা গামছা বা তোয়ালি দিয়ে সারা শরীর মুছে ফেলা। তবে এক্ষেত্র হালকা কুসুম গরম পানির ভিতরে গামসা বা তোয়ালে ভিজিয়ে নিতে হবে।
জলপট্টি বা বরফের ব্যবহার করবেনঃ
জ্বর হলেই আমরা জলপট্টির ব্যবহার করে থাকি। যখন হালকা জ্বর হয় তখন আমরা একটা ছোট কাপড়ের টুকরা পানিতে ভিজিয়ে তারপর কপালের উপরে দিয়ে থাকি। তবে যদি তাপমাত্রা শরীরের অত্যাধিক পরিমাণে বেড়ে যায়। তাহলে বগলের নিচে বরফ ব্যবহার করতে পারেন। কেননা এই স্থানে রক্তনালী গুলো অপেক্ষাকৃত প্রশস্ত। তাই যদি ঠান্ডা প্রয়োগ করা হয় তাহলে দ্রুত শরীরের তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করবে। ১০ থেকে ১৫ মিনিট এগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে।
বিশ্রাম করতে হবে ঃ
আমাদের শরীরে যদি জ্বর হয় তাহলে অবশ্যই আমাদের বিশ্রাম করতে হবে এবং পর্যাপ্ত ঘুমোতে হবে। আমাদের শরীরকে যদি সুস্থ রাখতে চাই আমাদের তাহলে অবশ্যই কমপক্ষে রাতে আধঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন। জ্বর হলে ঘুমাতে হবে এবং বিশ্রামও করতে হবে।
পানি খেতে হবে ঃ
আমরা এতক্ষণে জেনেছি জ্বর হলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। যদি আমাদের শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায় তাহলে শরীরের পানি শূন্যতার আশাঙ্ক্ষা বাড়ে। জ্বরের সময় ক্ষুধা মন্দা ও বমি বমি ভাব হতে পারে এই দুটি শরিরের পানি সুন্যতার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। আর এই পানিশূন্যতার কারণে মাংসপেশীতে ব্যথা বা চিবানোর মতন সমস্যা হতে পারে এবং রক্তচাপ ও প্রসাব কমে যেতে পারে।
খাবার ও পোশাকে সচেতনতাঃ
জ্বর হলে সাধারণত মুখে রুচি থাকে না, তবে অবশ্যই এক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। জ্বর হলে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। অনেক বেশি পরিমাণে খাওয়া যাবে না এটি শরীরে তাপ বৃদ্ধি এবং বদহজমে সমস্যা করতে পারে।
জ্বর হলে সাধারণত শরীর ঠান্ডা থাকে এ সময় অবশ্যই হালকা গরম কাপড় পরে নেবেন। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত কাপড় পেচিয়ে রাখবেন না কেননা জ্বর হলে আমাদের শরীরের ভেতরে পর্যাপ্ত বাতাস প্রবাহিত করা প্রয়োজন। দরকার হলে ঘরের জালনা দরজা খুলে দিবেন। এছাড়াও জ্বর হলে অবশ্যই ব্যাথা নাশক ট্যাবলেট খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
শেষ কথা, জ্বর হলে করনিয়।
স্বাভাবিকভাবে শরীরে তাপমাত্রা বেড়ে এমনিতেই জ্বর হতে পারে। তবে মাথায় রাখবেন জ্বর যদি তিন দিনের অধিক স্থায়ী হয়। এর সাথে অত্যাধিক মাত্রায় মাথাব্যথা, খিচুনি, শ্বাসকষ্ট, ক্রমাগত বমি ইত্যাদি যদি কোন সমস্যা দেখা দেয়। তাহলে অবশ্যই নিকটবর্তী ও চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
জ্বর সাধারণ সমস্যা হলেও কোন কোন ক্ষেত্রে এটি বড় ধরনের রোগের কারণ হতে পারে। তাই এ ব্যাপারে সর্বদা সতর্ক থাকবেন। আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। ভালো লেগে থাকলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন।
( খোদা হাফেজ )
ভদ্রতা বজায় রেখে কমেন্ট করুন! কারন,প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url