সকালে পান্তা ভাতের উপকারিতা যানুন।

পান্তা ভাতের প্রচলন বহুকাল আগে থেকেই, তবে বর্তমান সময়ে শহরাঞ্চলে পান্তা ভাতের প্রচলন নেই বললেই চলে। কিন্তু গ্রাম অঞ্চলের মানুষদের কাছে পান্তা ভাত একটি ইমোশনের নাম। গ্রামঞ্চলের প্রতিটি পরিবারেরই সকালের নাস্তা হিসেবে পান্তা ভাত খেয়ে থাকে। এক কথায় বলতে গেলে এটি একটি সুস্বাদু এবং মজাদার খাবার। অনেকের তো আবার সকালের নাস্তায় পান্তা ভাত না হলে চলেই না। 

panta



 আমরা হয়তো অনেকে জানি আবার অনেকেই জানিনা, পান্তা ভাতের উপকারিতা ও পুষ্টিগণ সম্পর্কে। এক্ষেত্রে আমরা যারা সকালে নাস্তা পান্তা ভাত খেয়ে থাকি। তাদের অবশ্যই পান্তা ভাতের উপকারিতা ও গুনাগুন সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। আজকের এই আর্টিকেলটিতে আমরা আলোচনা করব। সকালের নাস্তায় পান্তা ভাতের উপকারিতা ও গুনাগুন সম্পর্কে। কথা না বাড়িয়ে চলুন জেনে নেয়া যাক, সকালের নাস্তায় পান্তা ভাতের উপকারিতা ও গুনাগুন সম্পর্কে। 

পোস্ট সূচিপত্রঃ সকালের নাস্তায় পান্তা ভাতের উপকারিতা।

পান্তা ভাত আসলে কি। 

পান্তা ভাত আসলে কি? অনেকের কাছে মনে হয় পান্তা ভাত আসলে বাসি ভাত। পান্তা ভাত বলতে বাসী ভাত বলে ভুল করবেন না। আমাদের দেশের বেশিরভাগ মধ্যবিত্ত ফ্যামিলি সকালের নাস্তা হিসেবে পান্তা ভাত খেয়ে থাকে। পান্তা ভাত হলো, রাতে খাবার পরে অবশিষ্ট যে ভাত থেকে যায়, সেটাকে পানি দিয়ে সংরক্ষণ করে সকালে খাওয়ার জন্য রেখে দেওয়া হয়। যাতে করে ভাত নষ্ট না হয়ে যায়, এটাকেই পান্তা ভাত বলে। পান্তা ভাত খাওয়ার প্রচলনটা গরমের সময় একটু বেশি দেখা যায়। অযথা বাসি ভাত বলে খাবারের অসম্মান করা যাবে না। মাথায় রাখবেন বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য আমাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর ভাত হলো আমাদের দেশের প্রধান খাদ্য। 

পান্তা ভাতের পুষ্টিগুণ। 

আমরা অনেকেই পান্তা ভাত খেয়ে থাকি। হয়তো আমরা  অনেকেই জানি আবার, অনেকেই জানিনা পান্তা ভাতের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে। চলুন আজকে জেনে নেই পান্তা ভাতের উপকারিতা ও পুষ্টিগুন সম্পর্কে। আমরা সাধারণত যে ভাত খাই তার থেকেও পান্তা ভাতের পুষ্টিগুণ অনেকাংশে বেশি। পান্তা ভাতে বিভিন্ন প্রকার মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট থাকে। এগুলো হল, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক, পটাশিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন বি-৬, ইত্যাদি। 

পান্তা ভাতে সাধারণ ভাতের থেকেও, বেশি পুস্টি উপাদান থাকে। কেননা প্রতি ১০০ মিলিগ্রাম সাধারণ ভাতে ৩.৫ মিলি গ্রাম আয়রন থাকে তবে একই পরিমাণ পান্তা ভাতে ৭৩.৯ মিলিগ্রাম আয়রন পাওয়া যায়। সাধারণ ভাতের থকে পান্তা ভাতে যেমন আয়রন বেশি পাওয়া যায় ঠিক তেমনি ক্যালসিয়াম বেশি পাওয়া যায়। কেননা প্রতি 100 গ্রাম সাধারণ ভাতে  ২১ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং পান্তা ভাতে ৮৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। এভাবে সকল উপাদানের পরিমাণই পান্তা ভাতে একটু বেশি পাওয়া যায়।    

পান্তা ভাতের ক্ষেত্রে একটা কথা না বললেই নয়। আমরা যদি পান্তা ভাত লাল চাল দিয়ে তৈরি করি। তাহলে এর পুষ্টি উপাদান সাদা চালের পান্তা ভাতের চেয়ে অনেকাংশই বেশি। কেননা চালের ক্ষেত্রে সাদা চালের চেয়ে লাল চালের পুস্টি উপাদান বেশি।

পান্তা ভাত আসলেই অনেক স্বাস্থ্যকর। 

পান্তা ভাত ব্যাপারটা আমাদের কারো কাছে একটু অন্যরকম মনে হলেও এটি আসলে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যকর একটি খাবার। চলুন জেনে নেই পান্তা ভাতে যে সকল স্বাস্থ্য উকারিতা গুলো রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে। 

  • পান্তা ভাতে একপ্রকার ল্যাকটিক অ্যাসিড ব্যাকটেরিয়া রয়েছে যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এই ল্যাকটিক ব্যাকটেরিয়া সাধারণত দইয়ের ভেতরে থাকে। পান্তা ভাত প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার তাই আমাদের অন্তের রোধ করে। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে পারে পান্তা ভাত। 
  • যাদের হজম শক্তি দুর্বল, খাবার খেলে হজম হতে সময় লাগে। এদের জন্য পান্তা ভাত আদর্শ খাবার বললে ই চলে। কেননা পান্তা ভাত শরীরের হজম শক্তি বাড়ায় এবং খাবার দ্রুত হজমে সহায়তা করে। 
  • পান্তা ভাত খুব ঠান্ডা খাবার, এটি আমাদের শরীরকে ঠান্ডা রাখার পাশাপাশি গ্যাস্ট্রোইন টেস্টাইনাল সমস্যা নিরাময় এবং প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে থাকে। 
  • ত্বকের ক্ষেত্র পান্তা ভাতের ভূমিকা রয়েছে। নিয়মিত পান্তা ভাত খেলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। এবং আমাদের মাথার চুলের ক্ষেত্রেও পান্তা ভাতের ভূমিকা রয়েছে। 
  • আমরা যারা পানি শূন্যতার সমস্যায় ভুগেছি।  তাদের জন্য পান্তা ভাত আদর্শ খাবার। কেননা পান্তাভাতে পানির পরিমাণ বেশি থাকায়, এটি শরীরের পানি শূন্যতার সমস্যা সমাধান করে। 
  • আমাদের শরীরের ক্লান্তি দূর করার জন্য পান্তা ভাত অনন্য। কেননা পান্তা ভাতে ভিটামিন বি ১২ উপাদান রয়েছে। তাই এটি শরীরের ক্লান্তি কমায় শরীরকে সতেজ রাখে এবং দুর্বলতা নিরময় করে। 
  • প্রতিনিয়ত ঘুমের পরিমাণ যাদের কম হয়ে থাকে তারা নিয়মিত পান্তা ভাত খেতে পারেন। এতে করে ঘুমের না হওয়া সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। পান্তা ভাত খেলে একটু ঘুমের পরিমাণ বেশি বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। 

পান্তা ভাত খাওয়ার উপকরন।

গরম ভাত আমরা যে সকল উপাদানের সাথে খেয়ে থাকি। এর ভিতর থেকে সামান্য কিছু উপাদান বাদে সকল উপাদানের সাথে পান্তা ভাত খাওয়া যায়। যেমন সবার আগে বলতে গেলে ইলিশ মাছ, শুটকি মাছ, যেকোন মাছ ভাজি, যে কোন সবজি ভাজি ইত্যাদি বিভিন্ন কিছুর সঙ্গে খাওয়া হয়। এতে করে এর পুষ্টিগুণ অনেকাংশে বেড়ে যায়। 

তবে গ্রাম অঞ্চলের মানুষদের অনেক সময় দেখা যায় শুধুমাত্র পেয়াজ এবং মরিচ দিয়ে পান্তা ভাত খেতে। আমার কাছেও পেঁয়াজ এবং মরিচের সাথে পান্তা ভাত খেতে বেশ ভালো লাগে। কেননা পান্তা ভাত এমনিতেই খুব মজাদার। যে সকল উপাদানের সাথে পান্তা ভাত মিশিয়ে খেলে ভালো লাগে। সেই সকল উপাদানের শাথে পান্তা ভাত খেতে পারেন। 

পান্তা ভাত খাওয়ার কিছু সতর্কতা।

উপরোক্ত বিষয়গুলোতে আমরা পান্তা ভাতের বিভিন্ন পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানতে পারলাম। তবে পান্তা ভাত খাওয়ার কিছু সতর্কতা রয়েছে। এগুলো আমাদের সকলের জানা খুবই প্রয়োজন। তাহলে চলুন পান্তা ভাত খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণের সাথে এর কি সতর্কতা রয়েছে সেগুলো জেনে নি।

সবার আগে বলতে গেলে, পানির কথাই বলতে হয়। পান্তা ভাত তৈরি করতে যেহেতু পানি প্রয়োজন হয়। তাই অবশ্যই বিশুদ্ধ খাবার পানি ভাতের ভিতরে ব্যবহার করতে হবে। ভাত যে পাত্রে ভিজিয়ে রাখা হবে, সেই পাত্রটি অবশ্যই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং ঢেকে রাখতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে ধুলোবালি মুক্ত জায়গায় যেন রাখা হয়। 

পান্তা ভাত খেলে শরীরে একটু ঘুমের প্রভাব বেড়ে যেতে পারে। কেননা দীর্ঘ সময় ভাতকে পানির ভিতরে ভিজিয়ে রেখে তারপরে খাওয়া হয়। যাদের ঠান্ডা কাশির মতো সমস্যা রয়েছে তারা একটু পান্তা ভাত থেকে বিরত থাকবেন। 

দীর্ঘ সময় ভিজিয়ে রাখার কারণে পান্তা ভাত খেলে পেটে অনেক সময় সমস্যা হতে পারে। এক্ষেত্রে পেটে পিড়া বা ডায়রিয়ার মতন সমস্যাও হতে পারে। আমাদের মধ্যে যে সকল মানুষের ডায়াবেটিক সমস্যা রয়েছে এবং শরীরের ওজন অনেকাংশে বেশি। তারা পান্তা ভাত খাওয়া থেকে বিরত থকবেন।

শেষ কথা। পান্তা ভাত খাওয়ার উপকারিতা  সম্পর্কে। 

পান্তা ভাতের বিষয়ে আমরা ইতিমধ্যে অনেক কিছুই জানতে পারলাম। এর সঙ্গে এটাও জেনেছি যে পান্তা ভাত খাওয়ার প্রচলনটা বর্তমান সময়ে গ্রামে এখনো রয়েছে। তবে শহর অঞ্চলে এর প্রচলন নাই বললেই চলে। তবে পহেলা বৈশাখে শহরের মানুষেরা মেতে ওঠে বৈশাখ উদযাপনের জন্য। এই বৈশাখের সকালবেলা আমাদের দেশের প্রায় বেশিরভাগ মানুষই। সকালে পান্তা ভাতের সাথে ইলিশ মাছ খেয়ে থাকে তাও আবার মাটির পাত্রে।

এছাড়াও আমাদের দেশের এমন অনেক  পরিবার রয়েছে যারা।সকালের নাস্তায় প্রতিনিয়ত পান্তা খেয়ে থাকি, এক্ষেত্রে কোন সমস্যা নেই কিন্তু। সতর্কতার ব্যাপারে একটু সচেতন থাকবেন। কেননা শরীর আমাদের সুস্বাস্থ্য আমাদের, সতর্কতেও আদের থাকতে হবে। 

যাইহোক মনযোগ সহকারে পোস্টি পরার জন্য অসংখ্য ধন্যবাধ। পোস্ট টি ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। এবং ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে ক্ষমা করে দিবেন। কথা হবে অন্য কোন দিন অন্য কোন টপিক নিয়ে।

                              ( খোদা হাফেজ ) 




এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ভদ্রতা বজায় রেখে কমেন্ট করুন! কারন,প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url