চীনা বাদামের উপকারিতা ও জানুন।

চিনা বাদাম, এটা শুধু একটি নাম নয়, এটা সময় কাটানোর একটা মাধ্যমও। অনেক সময় আমরা হয়তো কোথাও ঘুরতে গেলে আবার কোথাও বসে সময় কাটালেই, প্রয়োজন পড়ে দশ বিশ টাকার সস্তা এই বাদামের। আপনি হয়তো জানেন না,এই চিনা বাদামের উপকারিতা  ও গুণগণ সম্পর্কে। চিনা বাদামের এতটাই উপকারিতা আপনি যদি জানেন তাহলে প্রতিদিনই আপনি বাদাম খেতে চাইবেন। চিনা বাদামে আছে , আমিষ, চর্বি ও ফাইবার বা আশসমৃদ্ধ। চিনা বাদামের যে চর্বি রয়েছে তার বেশিরভাগই,, গুড ফ্যাট ''। এই ধরনের চর্বি আসলে আপনার কোলেস্টেরলের মাত্র কমাতে সহায়তা করবে। এছাড়া এতে আছে ম্যাগনেসিয়াম,, ফোলেট,, ভিটামিন ই,, কপার,, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট,, ও আরজিনাইন।

cina

আমরা অনেক অনেক সময় মনে করে থাকি, চিনা বাদাম আসলে কম দামি বলে, আখরোট বা কাজুবাদাম এর মত পুষ্টি উপাদান নাই। তবে সত্যিটা হল চিনা বাদামের পুষ্টি উপাদান দামি বাদামের মতই। তাহলে কথা না বাড়িয়ে চলুন জেনে নেওয়া যাক চীনা বাদামের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে। 

হৃদপিণ্ড ভালো রাখে ।

অতিরিক্ত পরিমাণে অসম্পৃক্ত চর্বি বা আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকায় আখরোট ও বাদাম আমাদের হার্টের হেলদি খাবার হিসেবে পরিচিত। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, দামি বাদামের মতো চিনা বাদামও হৃদ স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ভালো। চীনা বাদাম কোলেস্টরেলের মাত্রা কমিয়ে হৃদরোগ প্রতিরোধ করে। আমাদের শরীরের অনেক সময় ছোট ছোট আকারে রক্ত জমাট বাদে। এগুলা রোধ করে চিনা বাদাম এবং আপনার হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুকি কমায়। তাই বলা যায় হৃদপিন্ডের জন্য যথাযথ পুষ্টি দিয়ে থাকে চিনা বাদাম।

ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়। 

চিনা বাদামে গ্লাইসেমিক কম থাকে। যার কারনে চিনা বাদাম খেলে আপনার রক্তের শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পাবে না। অন্য আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, যে সকল নারী চীনা বাদাম খায়। তাদের টাইপ ২ নামের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি অনেকাংশেই কমে যায়। 

ওজন কমানোর জন্য বেশ ভালো। 

চিনা বাদাম সম্পর্কে আমরা এতক্ষণে অনেক কিছুই জানলাম। চিনা বাদামের প্রচুর ফাইবার থাকায় এটি দীর্ঘ সময় পর্যন্ত আমাদের পেট ভরিয়ে রাখে। এই বাদামের, মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পরিমাণে প্রোটিন পাওয়া যায় এই। যারা ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না এবং অতিরিক্ত পরিমাণে খেয়ে থাকে, তাদের জন্য এটি কার্যকরী ভূমিকা রাখে। চীনা বাদামের এই প্রোটিন খুদা নিয়ন্ত্রণ করে এবং অতিরিক্ত খাওয়া কমায়। ফলে শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে। যুক্তরাষ্ট্রের দ্য জার্নাল অফ নিউট্রিশন এ প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার আপনাকে ক্যালোরি বাড়াতেও  সহায়তা করতে পারে। 

শরীরে প্রদাহ কমায়। 

চিনা বাদাম সম্পর্কে আগেই অনেক কিছু বলেছি। এতে কি পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায় সে ব্যাপারে আপনারা ইতিমধ্যে জানতে পেরেছেন। চিনা বাদামের প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকায়, এটি আমাদের শরীরে প্রদাহ কমাতে অনন্য ভূমিকা রাখে। শরীরে প্রদাহ মানেই রোগের লক্ষণ দেখা দেওয়া, চিনাবাদামের ফাইবার রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। একই সঙ্গে আপনার পাচনতন্ত্রকে খাবার পরিপাকে সহায়তা করে। 

আরো পড়ূনঃ আলু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা জানুন।

কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে। 

কোষ্ঠকাঠিন্যের সাথে আমরা সবাই কমবেশি পরিচিত। একটু শরীর করা হলেও কোষ্ট কাঠিন্য হয়, বিভিন্ন সমস্যায় কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্য যার হয় সেই বোঝে এর যন্ত্রণ, তবে বাদামের প্রচুর ফাইবার থাকার কারণে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ ভূমিকা রাখে, একই সঙ্গে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা ও কমায়।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। 

ক্যান্সার আমাদের কাছে একটি ভয়ংকর রোগের নাম। এটি যদি আমাদের মধ্যে কারো হয় তাহলে আমরা মনে করি সেই মানুষটার জীবন শেষ। হয়তো চিকিৎসা নিতে নিতে একটা সময় সত্যিই জীবনটা শেষ হয়ে যায়।শ ক্যান্সার বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, গবেষণা প্রমাণিত হয়েছে, যে সকল বয়স্ক ব্যক্তি নিয়মিত চিনা বাদাম খেতেন,, তাদের এক ধরনের পাকস্থলীর ক্যান্সারের ঝুঁকি কম থাকে। তার নাম হলো গ্যাস্ট্রিক কার্ডিয়া  অ্যাডেনোকার্সিনোমা। এছাড়া চিনা বাদামে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার কারণে এটি ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। তাহলে বোঝাই যায়, চিনা বাদাম আমাদের শরীরের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে কতটাই কার্যকর। 

বাদাম কতটুকু পরিমাণে খাবেন। 

বাদাম হোক কিংবা যেকোনো খাবার সবকিছুই আমাদের পরিমান মত খাওয়া উচিত। অর্থাৎ একটি পুষ্টিকর খাবার এতটা পরিমাণে খাওয়া যাবেনা যেটাতে আবার ক্ষতির সম্মুখীন হয়। প্রতিটি খাবার খাওয়ার একটি সঠিক পরিমাপ রয়েছে, বাদামের ক্ষেত্র ব্যতিক্রম নয়। আপনি চাইলে প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় এক মুঠো বাদাম রাখতে পারেন। এটি আপনাকে ১৭০ ক্যালোরি সরবরাহ করবে। অর্থাৎ প্রতিদিন ৪২ গ্রাম বা ২০ থেকে ২৫ টি চিনা বাদাম  খেতে পারেন। তবে আপনার যদি উচ্চ রক্তচাপ বা অন্য কোন রোগ থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাবেন। 

চিনা বাদাম খাওয়ায় কিছু সতর্কতা। 

চীনা বাদাম আমাদের শরীরের জন্য অনেক পুষ্টির যোগান দেয়। এটা এতক্ষণে আপনারা জানতে পেরেছেন। তবে ভালো কোনো জিনিসের খারাপ দিকও থাকে, যেমনটা চিনাবাদাম এর ক্ষেত্রে রয়েছে। চাইলে সবাই চিনা বাদাম খেতে পারবে না, চিনা বাদাম খাওয়ার জন্য কিছু স্বাস্থ্য, সতর্কতা রয়েছে। চীনা বাদাম স্বাস্থ্যকর খাবার হলেও এটি কারা খেতে পারবে না সেটা জানা অত্যন্ত জরুরী।

চিনা বাদাম খেলে মাঝেমধ্যে, এলার্জি, চুলকানি অথবা বমি বমি ভাব এর লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে শুধু চিনা বাদামের দোষ দিলে হবে না যেকোনো বাদামই খাওয়ার পর যদি আপনার অস্বস্তিকর অনুভূতি তৈরি হয়। তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন, আর যাদের এই ধরনের সমস্যা রয়েছে। তারা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে চিনা বাদাম খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। 

শেষ কথা। চীনা বাদামের উপকারিতা

চিনা বাদাম সম্পর্কে অনেক কিছুই জানলাম, সকল প্রকার বাদামের মধ্যে এই বাদামের দাম অনেকটাই কম। তাই এটি খাওয়া আমাদের জন্য কোন সমস্যাই না। তবে এই বাদামের যেমন পুষ্টিগুণ রয়েছে তেমনি সবাই চাইলে এই বাদাম খেতে পারবে না। উপরে আপনি জানতে পেরেছেন কোন ধরনের সমস্যা থাকলে এই বাদাম চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া উচিত নয়।,আশা করি এই ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন।

আর্টিকেল টি মিনযোগ সহকারে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাধ। এই আর্টিকেল টি যদি আপনার ভাল লেগে থাকে তাহলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে দিবান।

                        (খোদা হাফেজ)

                                                                                                    

                                                                                                          

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ভদ্রতা বজায় রেখে কমেন্ট করুন! কারন,প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url