বুকের দুধ শুকিয়ে যায় কেন
একটা নবজাতক শিশুর জন্য, মায়ের বুকের দুধের গুরুত্ব, অনন্য। বাচ্চার পুষ্টি নিশ্চি ও শারীরিক সুস্থতা, বজায় রাখতে বাচ্চার চাহিদা অনুযায়ী, মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো জরুরি। তবে অনেক সময় অনেকের কাছ থেকে, একটা প্রশ্ন কমন পাওয়া যায়। বুকের দুধ শুকিয়ে যায় কেন, বুকের দুধ শুকিয়ে যাওয়ার বেশ কিছু কারণ রয়েছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মায়ে্ অসচেতনতার কারণে বুকের দুধ শুকিয়ে যায়।
এই আর্টিকেল টিতে আপনাদের সাথে আলোচনা করার চেষ্টা করব। মায়ের বুকের দুধ শুকিয়ে যাওয়ার কারণ এবং বৃদ্ধি করার উপায় সম্পর্কে। সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন, কেননা একজন মায়ের জন্য আজকের আর্টিকেলটি হতে যাচ্ছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
পোস্ট সূচিপত্রঃ বুকের দুধ শুকিয়ে যায় কেন
- নারীদের বুকের দুধ তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়া
- বুকের দুধ শুকিয়ে যাওয়ার কারণ।
- বাচ্চার চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত দুধ পান না করানোঃ
- পুষ্টিকর খাবার ও পর্যাপ্ত পানি গ্রহণ না করলেঃ
- মানসিক চাপ ও ঘুমের অভাবঃ
- ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ফলেঃ
- হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারনেঃ
- মায়ের বুকের দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি করার উপায়।
- বাচ্চার দুধের চাহিদা নিশ্চিত করতে যে সকল সতর্কতা অবলম্বন করা উচিতঃ
- উপসংহার। বুকের দুধ শুকিয়ে যায় কেন
নারীদের বুকের দুধ তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়া
একজন মায়ের নবজাতক পেটে আসার কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হয়, দুধ উৎপাদনের প্রক্রিয়া। তবে একজন মায়ের দুধ উৎপাদনে সবথেকে বেশি ভূমিকা থাকে, সন্তান প্রসবের পরের সময়টা। চলুন এক নজরে জানা যাক, একজন নারীর গর্ভকালিন সময় থেকে দুধ উৎপাদনে প্রক্রিয়া সম্পর্কে।
- একজন নারী যখন গর্ভধারণ করে, এই গর্ভধারণের কিছুদিন পর,যেমন ১৬ থেকে ২০/২২ সপ্তাহের মধ্যে, সাধারণত দুধ উৎপাদন হওয়া শুরু করে। এ সময় গর্ভাবস্থায় ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন এবং প্রোল্যাকটিনের মত হরমোন দুধ উৎপাদনকারী কোষ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। যার কারণে গর্ভঅবস্থা থেকেই, একজন মায়ের শরীর দুধ উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত থাকে।
- প্রসাবের পর, প্রথম দিকে একজন মায়ের শরীর থেকে, শালদুত নামে এক ধরনের ঘন এবং হলুদ রঙের দুধ বের হয়। এই ঘন এবং হলুদ, প্রাথমিক অবস্থায় শিশুর পুষ্টির চাহিদা পূরণের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই দুধ সাধারণত প্রসবের ২ থাকে ৫ দিন ধরে নিঃসৃত হয়। প্রথমদিকে একজন মায়ের বুকে যে দুধ থাকে সেগুলোতে প্রোটিন ও এন্টিবডিতে ভরপুর। এই প্রোটিন ও এন্টিবডি শিশুর,রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে অনন্য ভূমিকা পালন করে।
- পর্যায়ক্রমে শিশুর চাহিদা অনুযায়ী, একজন মায়ের স্তনের দুধ উৎপাদন হয়। সাধারণত দুধ উৎপাদনের জন্য, একজন মায়ের স্থান থেকে পর্যাপ্ত দুধ বাচ্চাকে খাওয়ানো অত্যন্ত জরুরী। কেননা বাচ্চার চাহিদা অনুযায়ী, একজন মায়ের শরীর থেকে, দুধ উৎপাদন হতে থাকে। মা তার শিশুকে দুধ পান করালে, প্রোল্যাকটি নামক হরমোন নিঃসৃত হয়, যা প্রতিনিয়ত দুধ উৎপাদন চালাতে থাকে।
- একজন মায়ের মস্তিষ্কের সংকেত অনুযায়ী, পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে এক ধরনের হরমোন দুধ উৎপাদনে সহায়তা করে। এ সময় প্রলাক্টিন দুধ তৈরি করে, এবং অক্সিটোসিন দুধ সন্তান পর্যন্ত পৌঁছে দেয়, এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় লেড ডাউন রিফ্লেক্স।
বুকের দুধ শুকিয়ে যাওয়ার কারণ।
বুকের দুধ কমে যাওয়ার সাধারণত, বিভিন্ন কারণ রয়েছে। এর মধ্যে, যে সকল সাধারন কারন রয়েছে, এগুলোর জন্য একজন নারীর তার বাচ্চাকে ঠিকমতো দুধ পান না করালে, দুধ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা সব থেকে বেশি। চলুন তাহলে জানা যাক, আর্টিকেলটির মূল বিষয়, বুকের দুধ কমে যাওয়ার কারণগুলি সম্পর্কে।
বাচ্চার চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত দুধ পান না করানোঃ
একটা বাচ্চা পর্যাপ্ত পরিমাণে মায়ের, বুকের দুধ পাচ্ছে কিনা, এদিকে নজর দেওয়া, সকল মায়েরই উচিত। বাচ্চা যদি পর্যাপ্ত দুধ না পায়, বা সময় নিয়ে তাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে দুধ পান না করানো হয়, এটা মায়ের দুধ কমে যাওয়ার সাধারণ কারণগুলির মধ্যে অন্যতম। এছাড়াও পর্যাপ্ত দুধ পাওয়ার জন্য, স্তন পাম্প করাও জরুরী। পর্যাপ্ত দুধ উৎপাদনের জন্য, একজন মায়ের সব সময় খেয়াল রাখা উচিত, তার বাচ্চা ঠিকঠাক চাহিদা মত দুধ পাচ্ছে কিনা।
আরো পড়ুনঃ গর্ভঅবস্থায় কাঁচা কলা খাওয়ার উপকারিতা।
পুষ্টিকর খাবার ও পর্যাপ্ত পানি গ্রহণ না করলেঃ
শারীরিক সুস্থতার জন্য পুষ্টিকর খাবার ও পানি গ্রহণ করার অত্যন্ত প্রয়োজন। ঠিক তেমনি একজন মায়ের তার বাচ্চার জন্য দুধ উৎপাদন করার জন্য পুষ্টিকর খাবার ও পানি গ্রহণ করা প্রয়োজন। একজন নারীর, পর্যাপ্ত দুধ উৎপাদনের জন্য কমপক্ষে .২ থেকে ৩ লিটার পানি পান করা জরুরী। সুষম পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, কোন মতেই মিস করলে চলবে না, আপনি একজন মা হলে অবশ্যই আপনাকে চাহিদা মত, সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া জরুরী।
মানসিক চাপ ও ঘুমের অভাবঃ
মানসিক চাপ ও ঘুমের অভাব, একজন মায়ের জন্য দুধ উৎপাদন কমাতে খুবই বড় ভূমিকা রাখে। একটা নবজাতকের মায়ের জন্য মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকা উচিত। এছাড়াও মায়ের দুধ উৎপাদন ও শারীরিক সুস্থতার জন্য, পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানোর প্রয়োজন। মানসিক চাপ ও ঘুমের অভাব, না থাকলে, একজন মায়ের তার বাচ্চার জন্য শরীর পর্যাপ্ত দুধ উৎপাদনে সাহায্য করে।
ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ফলেঃ
আপনি যদি পূর্বে কোন ধরনের শারীরিক অসুস্থতার জন্য ওষুধ গ্রহণ করে থাকেন। এ ছাড়াও নবজাতক জন্ম নেওয়ার পরেও ওষুধ প্রতিনিয়ত খাওয়ার ফলে, দুধ কমে যেতে পারে। এজন্য অবশ্যই কোন ওষুধ খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া অত্যন্ত জরুরি। এছাড়াও যদি আগে থেকে শরীরের বেস্ট সার্জারি করানো হয়ে থাকে, তাহলেও দুধ উৎপাদন কমে যেতে পারে।
একজন মায়ের শরীরের পূর্বে থেকে কোন ধরনের, অসুস্থতার কারণে দুধ উৎপাদনের পরিমাণ কমে যেতে পারে। হঠাৎ করে যদি আপনার মনে হয়, কোন কারণ ছাড়াই উৎপাদন কমে যাচ্ছে, এক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরী।
হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারনেঃ
আর্টিকেল টির উপরে, দুধ উৎপাদনের প্রক্রিয়ায় যে হরমোনের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি সে ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে। শরীরে এই প্রোল্যাকটিন, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরী। এই হরমোনের ভারসাম্যহীনতা যেমন, প্রোজেস্টেরন এবং ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বেড়ে গেলে দুধ উৎপাদন প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। এছাড়াও ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন এর মত চিকিৎসায় ব্যবহৃত হরমোনো ও দুধ উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
মায়ের বুকের দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি করার উপায়।
বুকের দুধ শুকিয়ে যাওয়ার কারণ? এই আর্টিকেল টিতে মায়ের বুকের দুধ শুকিয়ে যাওয়া, বা উৎপাদন কমে যাওয়া্ বেশ কিছু তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। নবজাতক শিশুর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য, একজন মায়ের তার বাচ্চার পর্যাপ্ত দুধ সরবরাহ অত্যন্ত প্রয়োজনীয। এই ব্যাপারটা আমরা সকলেই হয়তো জানি। এজন্য অবশ্যই প্রত্যেকটা নারীর জানা প্রয়োজন, কিভাবে দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি করে, বাচ্চা সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা যায়। চলুন আর্টিকেল টিতে এখন জানার চেষ্টা করি, মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধি করার উপায় সম্পর্কে।
আরো পড়ুনঃ কোন ভিটামিনের অভাবে মুখে ব্রন হয়।
- শিশুর জন্য পর্যাপ্ত দুধ উৎপাদনের জন্য, শিশুকে ও ঘন ঘন, ও সময় নিয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে দুধ পান করাতে হবে। কেননা স্তনে পর্যাপ্ত দুধ উৎপাদনের জন্য বাচ্চার চাহিদা অনুযায়ী শরীর থেকে দুধ উৎপাদনের সিগনাল আসে।
- পর্যাপ্ত দুধ উৎপাদনের জন্য, হাত দিয়ে স্তন পাম্প করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে হাত দিয়ে পাম্প করতে অসুবিধা হলে, স্তন পাম্প করার পাম্প ব্যবহার করতে পারেদ। এটা বাচ্চার জন্য পর্যাপ্ত দুধ উৎপাদনে কাজ করে।
- স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন, এরমধ্যে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি ও ফলমূল খেতে হবে। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার,যেমন চর্বিহীন মাছ, দুধ, ডিম, মটরশুটি, মসুরাল ও দুধ দিয়ে তৈরি পণ্য খাওয়া যেতে পারে। এছাড়াও বুকের দুধের উৎপাদন বারাতে, জিরা, রসুন ও গাজরের জুস খাওয়া যেতে পারে।
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও মানসিক দুশ্চিন্তা থেকে অবশ্যই দূরে থাকা জরুরি। একজন মায়ের জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিশ্চিত করা, বাচ্চার জন্য হলেও জরুরী। কেননা সুস্বাস্থ্য শুধু একজন মায়েরই নয়, সঙ্গে তার বাচ্চারও নিশ্চিত করতে হয়। দুশ্চিন্তা থেকে সকল সময় বিরত থাকার চেষ্টা করবেন, এটা শরীর ও মন দুটোরই ক্ষতি করে।
বাচ্চার দুধের চাহিদা নিশ্চিত করতে যে সকল সতর্কতা অবলম্বন করা উচিতঃ
নবজাতক শিশুর জন্য একজন মায়ের, দুধ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের তথ্য ও ইতি মধ্যে তুলে ধরা হয়েছে। যে সকল তথ্য রয়েছে একজন মায়ের জন্য, তার বাচ্চা সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখতে পারে। তবে অনেক সময় দুধ উৎপাদনের ক্ষেত্রে একজন মায়ের সতর্ক থাকা ও জরুরী। প্রাথমিক অবস্থায় যদি দুধ উৎপাদন, বাড়ানো সম্ভব না হয়, বাচ্চা পর্যাপ্ত পরিমাণে দুধ না পায়।
আপনার যদি মনে হয় দুধের সরবরাহ কমে যাচ্ছে, তাহলে অবশ্যই বসে না থেকে একজন মা ও শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। চিকিৎসক আপনার পরীক্ষা নিরীক্ষা করে যদি, কোন প্রকার ওষুধ বা সাপ্লিমেন্ট খেতে বলে তাহলে অবশ্যই তা দৈনন্দিন রুটিনে রাখার চেস্টা করবেন।তবে দুধ উৎপাদন কমে যাওয়ার কারনে বাচ্চাকে ফিডার বা অন্য কিছু খাওয়ানো থেকে বিরত থাকুন,এতে করে দুধ উৎপাদন আরো কমে যেতে পারে। কেননা, আর্টিকেলটিতে উপরে বলা হয়েছিল, দুধ উৎপাদন কমে যাওয়ার শারীরিক গুরুতরও কোনো কারণ হতে পারে, এ ব্যাপারে সর্বদা অযোগ্য রাখার চেষ্টা করবেন।
উপসংহার। বুকের দুধ শুকিয়ে যায় কেন
বুকের দুধ শুকিয়ে যায় কেন এই এই আর্টিকেল টিতে একজন মায়ের জন্য তার দুধ উৎপাদনের ক্ষেত্রে অনেক তথ্যই তুলে ধরা হয়েছে। একজন মায়ের তার নবজাতকের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য সর্বদা সতর্ক থাকাই উচিত। একজন নবজাতকের মায়ের বুকের দুধ শুকিয়ে যাওয়ার সবথেকে অন্যতম কারণ হলো, বাচ্চার চাহিদা মত দুধ পান না করানো। তাই আপনার অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে আপনার বাচ্চা, পর্যাপ্ত দুধের কারণে কান্নাকাটি করছে কিনা।
অনেক সময় বাচ্চা শুধু দুধ না পাওয়ার কারণেই কাঁদে না, বিভিন্ন ধরনের রোগের কারণেও কাঁন্না করতে পারে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাচ্চা, পর্যাপ্ত দুধ না পাওয়ার কারণেও কান্নাকাটি করতে পারে। যাই হোক, প্রতিটা মায়েরই তার বাচ্চা সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য তার বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত। বুকের দুধ শুকিয়ে যায় কেন আর্টিকেলটি, মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
(খোদা হাফেজ)


ভদ্রতা বজায় রেখে কমেন্ট করুন! কারন,প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url