প্রেগনেন্সি কতদিন পর বোঝা যায়, প্রেগনেন্সি বোঝার উপায়
প্রেগনেন্সি কতদিন পর বোঝা যায়, প্রেগনেন্সি বোঝার উপায়? এই প্রশ্নটা সাধারণত সদ্য বিবাহিত নারীদের ক্ষেত্রে বেশি হয়ে থাকে। এই প্রশ্নের উত্তরে চিকিৎসকের মতামত হল, সাধারণত সহবাসের সঙ্গে সঙ্গেই গর্ভধারণ সম্ভব হয় না। গর্ভধারণের জন্য পুরো প্রক্রিয়ার জন্য, দুই থেকে তিন দিন সময় লেগে যায়। শুধু সময়ের কথা বললে হবে না, একটি শুক্রাণু জরায়ুতে পৌঁছানোর পরে ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হয়।
শুক্রাণু সম্পন্নভাবে ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হলে, এর পরের প্রক্রিয়ায় ভ্রুণ তৈরি হয়। তবে একজন নারীর গর্ভধারণের সময় অনেক ধরনের শারীরিক পরিবর্তন দেখা দেয়। চলুন আজকের আর্টিকেল টিতে, একজন মায়ের, প্রেগনেন্সি গত অবস্থা্য যে সফল লক্ষণ দেখা দিতে পারে, তা জানার চেষ্টা করি।
পোস্ট সূচিপত্রঃ প্রেগনেন্সি কতদিন পর বোঝা যায়, প্রেগনেন্সি বোঝার উপায়
- প্রেগনেন্সিগত অবস্থায়, নারীদের যে সকল লক্ষণ দেখা দেয়।
- বমি বমি ভাব বা বমি হওয়াঃ
- পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যাওয়াঃ
- ক্লান্তি ও ঘন ঘন প্রসাব দেখা দেওয়াঃ
- মায়ের স্তনের পরিবর্তন হয়ঃ
- মেজাজের পরিবর্তন হওয়াঃ
- মাথা ব্যথা, কোমড় ব্যাথা ও বুক জ্বালাপোড়া করাঃ
- কিছু খাবারে আকর্ষণ এবং কিছু খাবারে অনিহাঃ
- প্রেগনেন্সিতে নারীর যে সকল নিয়ম কানুন মেনে চলা উচিত
- প্রেগনেন্সি গত অবস্থায় যে সকল পুষ্টিকর খাবার খাওয়া জরুরী
- উপসংহার। প্রেগনেন্সি কতদিন পর বোঝা যায়, প্রেগনেন্সি বোঝার উপায়
প্রেগনেন্সিগত অবস্থায়, নারীদের যে সকল লক্ষণ দেখা দেয়।
চিকিৎসকদের মতে, প্রেগনেন্সি নমুনা সাধারণত ভ্রূণ তৈরি হওয়ার তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে, দেখা দেয়। তবে একজন নারীর, পিরিয়ড মিস হওয়ার ৭ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে সম্পন্ন বোঝা সম্ভব। এ সময় নারীদের শরীরে যে সকল লক্ষণ দেখা দেয়, সেগুলো জানা খুবই প্রয়োজন।
বমি বমি ভাব বা বমি হওয়াঃ
প্রেগনেন্সিগত অবস্থায় একজন নারীর, সব থেকে প্রধান সাধারণ লক্ষণ গুলোর মধ্যে বমি বমি ভাব হওয়া বা বমি হওয়া অন্যতম। নারীদের এই বমি ভাব বা বমি হওয়াটা, সকালের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায় যা,মর্নিং সিকনেস নামে পরিচিত। কেননা গর্ভাবস্থায় একজন নারীর শরীরে বিটা এইচসিজি হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা বমি ভাব বা বমি হওয়া অন্যতম কারণ।
পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যাওয়াঃ
একজন নারী যখন মা হওয়ার, প্রাথমিক পর্যায়ে পৌঁছায়, তখন তার পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যায়। কেননা গর্ভাব অবস্থায় শরীর এমন ধরনের হরমোন তৈরি করে যা, ডিম্বস্ফোটন এবং জরায়ু আস্তরণের ক্ষয় হওয়া, বন্ধ করে দেয়, যার কারণে পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যায়। গর্ভাবস্থায় নারীদের পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যাওয়া সবচেয়ে সাধারণ এবং প্রাথমিক লক্ষণ গুলোর মধ্যে অন্যতম।
তবে কোন কোন ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায়, হালকা রক্তপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, এটাকে ইমপ্লান্টেশন ব্লিডিং বলা হয়। তবে এই ব্লিডিং খুব বেশি পরিমাণে, হবে না, আপনি যদি অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ লক্ষ্য করেন,তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ দিবেন।
ক্লান্তি ও ঘন ঘন প্রসাব দেখা দেওয়াঃ
একজন নারীর গর্ভাবস্থায়, ক্লান্তি দেখা দেওয়া খুব সাধারণ লক্ষণ গুলোর মধ্যে পরে। কেননা গর্ভাবস্থায় ক্লান্তি মূলত প্রোজেস্টেরন হরমনের মাত্রা বৃদ্ধি করে, যার কারণে শারীরিক ক্লান্তি ও দুর্বলতা দেখা দেয়। এছাড়া অন্যদিকে গর্ভাবস্থায় রক্ত সঞ্চালন, সাধারণত বৃদ্ধি পেয়ে থাকে, এবং ক্রমবর্ধমান জরায়ুর মুত্রাশয়ের উপর চাপ সৃষ্টি করে যার কারণে ঘন ঘন প্রসাবের প্রবণতা অধিকাংশেই বেড়ে যায়।
মায়ের স্তনের পরিবর্তন হয়ঃ
গর্ভাবস্থায় একজন নারীর প্রথমদিকে স্থানে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। গর্ভাবস্থায় একজন মায়েরে ব্যথা হওয়ার কারণ প্রেজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি হওয়ার কারণে। এই সময় ব্যথার পাশাপাশি স্থান ভারি ও বড় হতে পারে, স্থানের শিরা গুলো আরো বেশি দৃশ্যমান হয়। এছাড়াও একটা কমন সমস্যা দেখা দেয় যেটা, স্থানবৃত্তের চারপাশ কালো হয়ে যেতে পারে, এবং স্থানের ত্বকের উপরে লম্বা সাদা দাগও দেখা যেতে পারে।
মেজাজের পরিবর্তন হওয়াঃ
একজন নারীর হরমোনের পরিবর্তনে, তার মেজাজেরও পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। এ সময় মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, হঠাৎ করে কান্নাকাটির লক্ষণও দেখা দেয়। এই ধরনের লক্ষণ সাধারণ প্রথম দিকে দেখা দেওয়ার প্রবণতা বেশি। যতক্ষণ পর্যন্ত হরমনের মাত্রায স্থির না হয্ ততক্ষণ পর্যন্ত এটা স্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
মাথা ব্যথা, কোমড় ব্যাথা ও বুক জ্বালাপোড়া করাঃ
গর্ভাবস্থায় একজন নারীর, মাথা ব্যথা কোমর ব্যথা বুক জ্বালাপোড়া হওয়া খুবই সাধারণ একটা ব্যাপার। একজন নারী প্রেগন্যান্ট হলে তার জরায়ু ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে, যার কারণে এই ধরনের ব্যথা দেখা দেয়। এ সময় হরমোনের পরিবর্তন হয়, এই ক্ষেত্রে অবশ্যই পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া জরুরী। গর্ভাবস্থায় বুক জ্বালা করার কারণ, সাধারণত হজমের পরিবর্তনের ফলে দেখা দেয়।
কিছু খাবারে আকর্ষণ এবং কিছু খাবারে অনিহাঃ
গর্ভাবস্থায় একজন নারীর কিছু খাবার আকর্ষণ এবং কিছু খাবারে অনিহা, দেখা দেওয়ার মতন সমস্যা হয়ে থাকে। এ সময় বেশিরভাগ নারীরাই টক জাতীয় খাবার খেতে চাই, পুষ্টিকর খাবার না খাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। এটা কোনমতে উচিত নয়, গর্ভাবস্থায় একজন নারীর পর্যাপ্ত পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। কেননা একজন মায়ের শারীরিক সুস্থতার সাথে তার বাচ্চা সুস্থতা ও জড়িত, এটা মাথায় রাখা উচিত।
আরো পড়ুনঃ কি খেলে ডায়াবেটিস দ্রুত কমে,ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখার উপায়।
প্রেগনেন্সিতে নারীর যে সকল নিয়ম কানুন মেনে চলা উচিত
আজকের আর্টিকেলটি প্রেগনেন্সি কতদিন পর বোঝা যায়, প্রেগনেন্সি বোঝার উপায় সম্পর্কে, ইতিমধ্যে বেশ কিছু তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। উপরে প্রেগনেন্সি বোঝার সময় বলা হয়েছে, এবং এ সময় যে সকল লক্ষণ দেখা দেয় সেগুলো বলা হয়েছে। একজন প্রেগনেন্সিগত মায়ের, বেশ কিছু নিয়ম নিতীর সাথে জীবন যাপন করা জরুরী, চলুন সেগুলো সম্পর্কে জানা যাক।
- একজন নারীর প্রেগনেন্সি, শুরু হওয়ার প্রথম থেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত আগে যদি শরীরে কোন, রোগের লক্ষণ থাকে তাহলে তা চিকিৎসা করানো জরুরী। প্রাথমিক অবস্থায় একজন ডাক্তারের কাছে গিয়ে চেকাপ করিরে ,তার নির্দেশনা অনুযায়ী চলা জরুরি।
- গর্ভাবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া, কোন প্রকার ওষুধ সেবন করা যাবে না, এতে করে বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়াও আগে থেকে যদি কোন, অসুস্থতার জন্য ওষুধ খাওয়া হয়, তা ক্রমান্বয়ে চালিয়ে যেতে হলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
- শরীরের যত্নে একজন নারীর, গর্ভাবস্থায় খুবই যত্নশীল হওয়া জরুরী। এ সময় অতিরিক্ত কোন প্রকার ভারী কাজ করা চলবে না, পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম অত্যন্ত জরুরী।
- গর্ভাবস্থায়, যতটা সম্ভব যৌন মিলন থেকে বিরত থাকাই উত্তম। যদি কোন প্রকার জটিলতা থেকে থাকে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী যৌন মিলন করা উচিত। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় শরীরের ওজনের দিকেও নজর দিতে হবে, শরীরের জন্য সুস্থ ওজন বজায় রাখা জরুরী।
- যতটা সম্ভব একজন মায়ের গর্ভাবস্থায় মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা থেকে দূরে থাকাই ভালো। সাধারণ অবস্থায় যদি মানসিক চাপ কমানো না যায়,তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে, কেননা প্রেগনেন্সি গত অবস্থায় একজন মায়ের, এবং বাচ্চার দুজনেরই সুস্থতার দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন।
প্রেগনেন্সি গত অবস্থায় যে সকল পুষ্টিকর খাবার খাওয়া জরুরী
প্রেগনেন্সিগত অবস্থায় একজন মায়ের বেশ কিছু পুষ্টিকর খাবার রয়েছে যেগুলো খাওয়া, স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। প্রেগনেন্সির জন্য বেশ কিছু পুষ্টিকর উপাদান যেমন, ফলিক এসিড, ক্যালসিয়াম, আয়রন ও প্রোটিন জাতীয় খাবার খাওয়া স্বাস্থ্যউপযোগি। চলুন এখন তাহলে যানা, যাক এই সকল পুষ্টি উপাদান কোন ধরনের খাবারে পাওয়া সম্ভব।
- গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের জন্য, ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার, অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সাধারণত ডাল, বাদাম, বিভিন্ন ফল, ডিম ও সবুজ শাকসবজিতে ফলিক এসিডের পরিমাণ রয়েছে। তাছাড়া এই ধরনের খাবার আমাদের সকলের জন্যই, শারীরিক সুস্থতায় বেশ ভূমিকা পালন করে।
- ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যেমন, দুধ, দই ও সোয়াবিন খাওয়া যেতে পারে এই সকল খাবারের ক্যালসিয়ামের পরিমাণ রয়েছে। যা একজন গর্ভাবস্থায় মায়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। এছাড়াও যেকোনো ধরনের বাদাম খাওয়া যেতে পারে। এই সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা কোনোমতেই মিস করা যাবে না।
- প্রোটিন ও আয়রন সমৃদ্ধ খাবার প্রেগনেন্সিগত অবস্থায় একজন মায়ের জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টি সরবরাহ করে থাকে। প্রতিদিন গর্বঅবস্থায় একজন মায়ের পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন গ্রহণ করা উচিত। এছাড়াও প্রোটিন সমৃদ্ধ, মাছ, মাংস, ডিম, মটরশুঁটি এবং সিমের বিচিও খাওয়া যেতে পারে।
- গর্ভাবস্থায়ী সকল পুষ্টি উপাদান সম্পৃক্ত খাবার খাওয়ার পাশাপাশি, কিছু খাবার আছে যেগুল এরিয়ে চলা উচিত। এগুলোর মধ্যে প্রক্রিয়াযুক্ত খাবার, অতিরিক্ত তেল যুক্ত খাবার, চিনি ও গুড় খাওয়া থেকে যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন।
উপসংহার। প্রেগনেন্সি কতদিন পর বোঝা যায়, প্রেগনেন্সি বোঝার উপায়
আজকের আর্টিকেলটি, প্রেগনেন্সি কতদিন পর বোঝা যায় এবং প্রেগনেন্সি বোঝার উপায় সম্পর্কে, ইতিমধ্যে বেশ কিছু তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। যদি কোন নারী প্রেগনেন্ট হয়, তাহলে অবশ্যই তার শারীরিক সুস্থতার দিকে নজর দেওয়া, এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলা অত্যন্ত জরুরী। কেননা একজন মায়ের শুধু, তার নিজের নয় বাচ্চার ও সুস্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে হয়।
যাইহোক আর্টিকেল টিতে আপনি ইতিমধ্যে প্রেগনেন্সির, বেশ কিছু তথ্য হয়তো জানতে পেরেছেন। আশা করি প্রেগনেন্সিগত অবস্থায়, নিজেকে অবশ্যই সুস্থ রাখার চেষ্টা করবেন। আর্টকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
(খোদা হাফেজ)


 
 
 
 
 
ভদ্রতা বজায় রেখে কমেন্ট করুন! কারন,প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url