পা ফোলা কমানোর ঘরোয়া উপায়
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পা ফোলার সাধারণ কারণ হয় পায়ের টিস্যুগুলোতে অতিরিক্ত পানি জমা হলে। তবে অনেক সময় পা ফোলা সমস্যাটাকে হালকা ভাবে নিলে চলবে না। কেননা শরীরের দীর্ঘস্থায়ী এবং গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে পা ফুলে যেতে পারে। তাছাড়া অনেকের তো পা এমনভাবে ফুলে যায়, যেন, ফোলা জাগায় আঙুল দিয়ে চাপ দিলে, সেই জায়গাটা ডেবে জায়। আপনার যদি পা ফোলার সমস্যা থেকে থাকে, তাহলে এর সঠিক কারণ নির্ণয় করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করাই উত্তম।
এই আর্টিকেলটিকে আপনাদের সাথে, পা ফোলার কারণ সহ, পা ফোলা কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে আলোচনা করার চেষ্টা করব। আপনার যদি সাধারন কোন কারনেই পা ফুল থাকে, তাহলে এই ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করলে সেরে যাওয়া সম্ভাবনা অনেক বেশি। কথা না বাড়িয়ে চলুন পা ফোলা কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি।
পোস্ট সূচিপত্রঃ পা ফোলা কমানোর ঘরোয়া উপায়
পা ফোলার কারণ সম্পর্কে জানা যাক
পা ফোলার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে, এগুলোর মধ্যে কিছু কারণ রয়েছে সাধারণ এবং কিছু স্বাস্থ্যগত গুরুতর সমস্যা বলে বিবেচিত। চিকিৎসকদের মতে পা ফোলা সমস্যাকে বলা হয় পেডেল এডিমা। আমাদের মধ্যে অনেকেরই এই সমস্যা দেখা দেয়, তবে এ ব্যাপারে ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই সঠিক কারণ নির্ণয় করে অবশ্যই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা জরুরী। আর্টিকেলটি শুরুতেই আমরা পা ফোলার কারণ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি, চলুন।
পা ফোলা সাধারণ কারণঃ
- পা ফোলার সাধারণ কারণ এর মধ্যে, সবচেয়ে অন্যতম হলো দীর্ঘক্ষণ একই অবস্থায় বসে বা দাঁড়িয়ে থাকার ফলে। কেননা কেউ যদি দীর্ঘক্ষণ বসে এবং দাঁড়িয়ে থাকে, তাহলে তার পায়ে তরল জমা হয় যা পা ফোলার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
- আমাদের মধ্যে অনেকেই অতিরিক্ত লবণাক্ত খাবার খেয়ে থাকি। অতিরিক্ত লবণ খাওয়া থেকে বিরত থাকা সব থেকে উত্তম, কেননা অতিরিক্ত লবণ শরীরে পানি ধরে রাখে, যার ফলে অনেক সময় অনেকের এই পা ফোলার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- আমাদের প্রত্যেকেরই বয়স ক্রমাগত বেড়েই চলছে। এই বয়স বাড়ার কারণে অনেক ব্যক্তির মধ্যে পা ফোলার সমস্যা দেখা দেয়। কেননা আমাদের শরীরের যত বয়স বৃদ্ধি পায়, ততই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হতে থাকে।এজন্য একটু বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে, পা ফোলার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- আপনার শরীরে যদি অতিরিক্ত ওজন থাকে তাহলে, শরীরের সম্পূর্ণ ওজনের চাপ আপনার পায়ের উপড়ে পরে। পায়ের উপর এই অতিরিক্ত চাপফপায়ের ফোলাভাব সৃষ্টি করতে পারে। শরীরের অতিরিক্ত এই চাপের ফলে শিরায় পানি জমে এই ফোলাভাব সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়াও নির্দিষ্ট কোন ওষুধের ফলেও পায়ে ফোলা ভাব দেখা দিতে পারে।
- গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের, গর্ভাবস্থার শেষের দিকে হরমোনের পরিবর্তন ঘটে। এ সময় মায়ের শরীরের উপরে অতিরিক্ত চাপের সৃষ্টি হয়, কেননা তখন শুধু মা ই নয় তার বাচ্চার ওজনও তার বয়ে বেড়াতে হয়। এই অতিরিক্ত ওজন মায়ের পায়ের উপরে চাপের সৃষ্টি করে, এবং হরমোন পরিবর্তন হয়, যার ফলে পা ফোলা খুবই সাধারণ বিষয়।
পা ফেলার গুরুতর কারণঃ
পা ফোলার সাধারণ কারণগুলি সম্পর্কে ইতিমধ্যে, আর্টিকেলটিতে বলা হয়েছে। তবে সাধারণ কারণগুলির পাশাপাশি, অনেক সময় শারীরিক জটিল স্বাস্থ্যগত কারণে পা ফোলার সমস্যা দেখা দিতে পারে। পা ফোলা কমানোর ঘরোয়া উপায়ে আর্টিকেলটিতে এখন আমরা পা ফোলার স্বাস্থ্যগত কারণ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব।
- সাধারণত পায়ে যদি, খোঁচা লেগে বা যেকোন ভাবে কেটে যায় সেই জায়গা যদি, জীবাণু ও সংক্রমনের প্রভাব ঘটে তাহলে সেই স্থান ফুলে যেতে পারে। এই ক্ষেত্রে অবশ্যই পরিস্থিতি বুঝে, চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
- যদি আপনার হার্ট সঠিকভাবে কাজ না করে, অর্থাৎ হৃদপিন্ডের অকার্যকারিতা দেখা দেয়, তখন রক্ত সঠিকভাবে পাম্প করতে পারে না। যার ফলে পায়ে পানি বা তর জমা হতে পারে, একই সঙ্গে পায়ের ফোলা ভাব সৃষ্টি হতে পারে।
- শরীরের দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্যগত সমস্যা, কিডনি বা লিভারের সমস্যা দেখা দিলে, শরীরে তরল জমা হতে পারে যার ফলে দেখা দিতে পারে দীর্ঘস্থায়ী পা ফোলার সমস্যা। শরীরের এই সকল সমস্যার কারণে দুই পা সহ শরীরের ও যেকোনো অংশ ফুলে যেতে পারে।
- আপনার পায়ে যদি গুরুতর কোন আঘাতের সম্মুখীন হয়ে থাকেন, এবং সেখানে রক্ত জমে যায়। তাহলেও পায়ে ফোলাভাব দেখা দেওয়া খুবই সাধারণ ব্যাপার। পায়ে আঘাত জনিত ব্যথা, চিকিৎসকের পরামর্শ এবং যত্নের মাধ্যমে সারিয়ে তোলা সম্ভব।
- অন্যদিকে যখন পায়ে শিরা গুলো রক্ত সঠিকভাবে হৃদপিন্ডে পাঠাতে ব্যর্থ হয় তখন পায়ের গোড়ালিতে তরল জমা হতে থাকে। এবং এই শিরার এক মুখি ভালব গুল দুর্বল বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে, সেখানে রক্ত জমা হওয়া শুরু করে এবং পা ফুলে যায়।
পা ফোলা কমানোর ঘর উপায়
আজকের আর্টিকেলটির মূল বিষয় পা ফোলা কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে। আর্টিকেলটিতে ইতিমধ্যেই পা ফোলার বেশ কিছু কারণ সম্পর্কে বলা হয়েছে। আপনার যদি সাধারন কোন কারনে পা ফুলে থাকে, স্বাস্থ্যগত কারন না হয়। তাহলে ঘরোয়া ভাবে, বেস কিছু পদক্ষেপ নিলে, এই সমস্যা থেকে অনেকটাই মুক্তির মিলানো সম্ভব। চলুন তাহলে কথা না বাড়িয়ে, আর্টিকেলটির মূল বিষয় পা ফোলা কামানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি।
দীর্ঘক্ষণ বসা বা দাঁড়িয়ে থাকা ত্যাগ করুনঃ
আর্টিকেলটির শুরুতেই পা ফোলার সাধারণ কারণ দীর্ঘক্ষণ বসা বা দাঁড়িয়ে থাকা ব্যাপারে বলা হয়েছিল। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে বা বসে থাকলে পা ফুলে যাওয়া খুবই সাধারণ ব্যাপার। আপনার যদি দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে বা বসে থাকার কারণে পা ফলো অনুভব হয়। তাহলে অবশ্যই এ অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে, আপনি যদি সারাক্ষণ বসে বা দাঁড়িয়ে থাকার কাজ করেন।
তাহলে অবশ্যই কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিরতি নিয়ে কিছু সময় হাঁটাচলা করে নিবেন। কেননা দীর্ঘক্ষণ বসে বা দাঁড়িয়ে থাকার ফলে পায়ে তরল জমা হয়ে এই পা ফোলা সৃষ্টি হতে পারে। এ সময় একটু হাঁটাচলা করলে পায়ে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাবে একই সঙ্গে, তরল জমা হবে না।
পা উঁচু করে রাখার চেষ্টা করুনঃ
আপনার যদি পায়ে ফোলা ভাব দেখা দেয়, তাহলে পায়ের নিচে একটা বা দুইটা বালিশ দিয়ে পা উঁচু করে রাখতে পারেন। কেননা এ সময় পা উঁচু করে রাখার ফলে, পায়ে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পায় এবং ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে। পা ফুলে গেলে যদি আপনি পা এভাবে উঁচু করে বিশ্রাম করেন। তাহলে এটি রক্ত এবং তরল পদার্থের স্বাভাবিক প্রদাহ নিশ্চিত করার মাধ্যমে । পা এবং গোড়ালির ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে। আপনার যদি সাধারন কারণে পায়ের ফোলাভাবের সাথে ব্যথা ও অস্বস্তি হয়, এজন্য পা উঁচু করে রাখলে আরাম মিলতে পারে।
অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ ত্যাগ করুনঃ
আর্টিকেলটির উপরেই বলা হয়েছিল অতিরিক্ত লবণ খেলে শরীরে পানি জমা শুরু করতে পারে। যা থেকে পা ফোলা সহ শরীরে ফোলা ভাব দেখা দিতে পারে। এজন্য আপনার যদি পায়ে ফোলা ভাব দেখা দেয়, তাহলে কোন প্রকার লবণ অতিরিক্ত খাওয়া ত্যাগ করুন। পায়ে ফোলা ভাব দেখা দিলে অতিরিক্ত টাইট কোন পোশাক পরিধান না করে অবশ্যই ঢিলা ঢালা এবং আরামদায়ক পোশাক পড়া উত্তম। কেননা এ সময় যতটা সম্ভব ফোলা জায়গাটাকে আরামদায়ক রাখা জরুরী।
ঠান্ডা সেক দেওয়া যেতে পারেঃ
হঠাৎ করে যদি আপনার পা মচকে যায় বা আঘাত লেগে ফুলে যায়, একই সঙ্গে ব্যাথা অনুভব হয়। তাহলে এই ঠান্ডা সেক আপনার জন্য খুবই উপকারী হতে পারে। এজন্য আপনি চাইলে একটি পরিষ্কার কাপড়ে বরফ নিয়ে বা কিছু ঠান্ডা পানি একটি পাত্রে নিয়ে তা ফোলা জায়গায় 15 থেকে 20 মিনিট ধরে রাখুন। এতে করে আপনার রক্ত চলাচল কমিয়ে ফোলা জায়গার ব্যথা ও ফোলা ভাব কমাতে সাহায্য করবে। বরফ দিয়ে ঠান্ডা সেক দিলে, খেয়াল রাখবেন তা জাতে সরাসরি ত্বকে না লাগানো হয়।
গরম সেক দেওয়া যেতে পারেঃ
পা ফুলে যাওয়া ও ব্যথার ক্ষেত্রে অনেক সময় গরম সেক দেওয়া যেতে পারে। তবে ব্যথা যদি কোন আঘাতের কারণে না হয় এবং দীর্ঘস্থায়ী ব্যাথা বা ফোলাভাব থাকে। তাহলে গরম সেক উপকারী হতে পারে। কেমন এ সময় গরম সেক, পায়ের পেশী সিথিল এবং রক্ত চলাচল বাড়াতে সাহায্য করে। আপনার যদি পায়ে ফোলাভাব দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার কারণে হয় তাহলেও গরম সেক দিতে পারেন, এজন্য উষ্ণ গরম পানির ভিতরে পা ডুবিয়ে রাখলেই আরাম পাওয়া সম্ভব।
হালকা মাসাজ ও বিশ্রামঃ
আপনার যদি পায়ের ফোলাভাব এবং ব্যথা দেখা দেয় সেক্ষেত্রে ফোলা জায়গায় হালকা ম্যাসাজ করলে, পায়ের ফোলা এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে। এছাড়াও বিশ্রাম করা এ সময় খুবই জরুরী। বিশেষ করে যদি আপনার ব্যথা কোন আঘাত জনিত কারণে হয় সেক্ষেত্রে বিশ্রাম এবং হালকা মাসাজ খুবই উপযুক্ত নিরাময় পদ্ধতি।
আরো পড়ুনঃ তলপেটে নাভির নিচে ব্যাথা কমানোর উপায়।
আপনি যদি চান ফোলা অংশে, ক্রেব ব্যান্ডেজ দিও পেজিয়ে রাখতে পারেন, এটা ফোলাভাব বাড়াতে বাধা প্রদান করবে। অন্যদিকে আপনার শরীরে অতিরিক্ত ওজন থাকলে, তা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করুন।
এপসম লবণ ব্যবহারঃ
পায়ের ফোলা ভাব কমাতে এপসম লবণের ব্যবহার করা উপকারী হতে পারে, যদি ফোলাভাব সাধারণ কোন কারনে হয়। এজন্য হালকা কুসুম গরম পানিতে আধা কাপ এপসম লবণ গুলিয়ে,তার ভিতরে পা ১৫ থেকে ২০ মিনিট ডুবিয়ে রাখুন। এটা আপনার পায়ের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করবে অস্বস্তি ও ব্যথা দূর করতে সাহায্য করবে।
এছাড়াও পা ফুলে গেলে ম্যাগনেসিয়াম এবং ফাইভার সমৃদ্ধ খাবারও খেতে পারেন, এটাও পায়ের ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করতে পারে। অন্যদিকে প্রক্রিয়াজাত খাবার সোডা এবং প্রক্রিয়াজাত পানীয় খাবার এড়িয়ে চলা সবথেকে উত্তম।
উপসংহার। পা ফোলা কমানোর ঘরোয়া উপায়
পা ফোলা কামানোর ঘরোয়া উপায় আর্টিকেলটিতে ইতিমধ্যে পা ফোলা কমানোর বেশ কিছু উপায় সম্পর্কে তুলে ধরা হয়েছে। আর্টিকেলটির ওপরে পা ফোলার বেশ কিছু কারণ সম্পর্কেও জেনেছি। সাধারণ কোন কারনে পা ফুলে থাকলে, তা ঘরোয়া উপায় সমাধান সম্ভব হয়। তবে, কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে যার জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরী। আপনার যদি পায়ের ফোলা ভাব সহজে না কমে, ব্যথা তীব্র হয়, আঘাতের ক্ষেত্রে যদি পা ভেঙে যাওয়ার সমস্যা হয় এবং পা ফোলা ও ব্যথার সাথে শ্বাসকষ্ট ও বুকে ব্যথা হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরী।
অন্যদিকে হঠাৎ করে যদি আপনার পা ফুলে যায়, সে ক্ষেত্রেও গুরুতর, স্বাস্থ্য সমস্যার কথা মাথায় রাখতে হবে। এছাড়াও যদি আপনার সংক্রমণের কারণে পায়ে অতিরিক্ত ব্যাথা বা পুচ হয়, সে ক্ষেত্রেও দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন। মাথায় রাখবেন, শুধু সাধারণ কারণে নয়, পা ফোলার গুরুতর কারণ বড় কোন স্বাস্থ্য ঝুকি তৈরি করতে পারে। যাই হোক পা ফোলা কমানোর ঘরোয়া উপায় আর্টিকেলটি এতক্ষণ মনোযোগ সরকারের পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
(খোদা হাফেজ)



ভদ্রতা বজায় রেখে কমেন্ট করুন! কারন,প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url