চুল ঘন করার তেলের নাম জানুন
আমাদের মধ্যে অনেকেই, ব্যস্ততার কারণে চুলের যত্ন নেওয়ার সময় পাইনা। ধুলোবালি সহ বাহিরের পরিবেশ দূষণের কারণে, চুলের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়ে, চুলের বৃদ্ধি কমে যায়, দেখা দেয় নানা সমস্যা। অনেক সময় তো চুলের সমস্যা নিয়ে দুশ্চিন্তাও করেন অনেকে। যারা দুশ্চিন্তা করেন তাদের জন্য চিন্তার কোন কারণ নেই, বাজারে এমন কিছু যাদুকরী তেল রয়েছে। যেগুলো ব্যবহারের ফলে আপনার চুলকে করবে শক্তিশালী, লম্বা এবং ঘন। এজন্য আপনার তেমন কোন বাড়িতি যত্নের প্রয়োজন নেই, শুধুমাত্র শ্যাম্পু কন্ডিশনারের পাশাপাশি এই তেলগুলো ব্যবহারই যথেষ্ট।
আজকের আর্টিকেলটিতে আপনাদের সাথে আলোচনা করার চেষ্টা করতে যাচ্ছি। বাজারের বিএসটিআই সার্টিফাইডযুক্ত, যে সকল তেল আমাদের চুলের যত্নে কার্যকরী সেগুলো সম্পর্কে। চলুন কথা না বাড়িয়ে জানা যাক চুল ঘন করার তেল যেগুলো রয়েছে সেগুলোর নাম সম্পর্কে।
পোস্ট সূচিপত্রঃ চুল ঘন করার তেলের নাম জানুন
অর্গান অয়েল উপকারীঃ
চুলের যত্নে, নিত্য পণ্য হিসেবে বেশ উপকারী ভূমিকা রাখে। চুলের যত্নে অর্গান অয়েলের প্রধান ভূমিকা হল, এটি চুলকে মশ্চারাইজ করে, চুলে কোন প্রকার ড্যামেজ থাকলে সেগুলো ঠিক করে এবং উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। সূর্যের রোদ সাধারণত আমাদের চুলের জন্য, খুবই ক্ষতিকারক। অর্গান অয়েলের ব্যবহারের ফলে, সূর্যের এই ক্ষতিকারক রাশি থেকে চুলকে রক্ষা করে।
এই তেলের ব্যবহারের ফলে চুলের শুষ্কতা কমিয়ে চুলকে সিল্কি, মসৃণ এবং চকচকে করে তোলে। এই তেলে সাধারণত ভিটামিন ই এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। যা চুল পড়া কমায়, চুলের আগা ফেটে যাওয়া থেকে রক্ষা করে এবং চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ভূমিকা রাখে।
নারকেল তেলের ব্যবহারঃ
নারকেল তেল, গ্রাম অঞ্চলের প্রতিটা ঘরে খুঁজলে এখনো ব্যবহারের জন্য মিলবে। চুলের যত্নে নারকেল তেলের গুরুত্ব খুবই ভূমিকা পালন করে। নারকেল তেলে থাকা ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফ্যাটি অ্যাসিড যা চুলের গভীরে গিয়ে পুষ্টি যোগায় এবং আদ্রতা ধরে রাখে। নারকেল তেল প্রাকৃতিক সূর্যের তাপ থেকে, চুলকে রক্ষা করে।ক
শীতের সময় অনেকের মাথায় খুশকি প্রবণতা বেড়ে যায়, এ সময় নারকেল তেলের ব্যবহারের ফলে, এর অ্যান্টিফাঙ্গাল ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান খুশি নিয়ন্ত্রণ করে, রুক্ষতা দূর করে এবং সংক্রমণ প্রতিরোধ করে চলে স্বাস্থ্য ভালো রাখে। নারকেল তেল নিয়মিত ব্যবহারের ফলে, এটি চুলের বৃদ্ধি বাড়ায়, চুলকে ঘন এবং মজবুত করে।
ক্যাস্টর অয়েলের ভূমিকাঃ
চুলের বৃদ্ধি ও ঘনত্ব বাড়াতে ক্যাস্টর অয়েলেরও ভূমিকা রয়েছে। এই অয়েলে থাকা রাইসিনোলিক অ্যাসিড, অ্যান্টি ফাঙ্গাল এবং এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান, আমাদের মাথার ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতো ভূমিকা রাখে। গভীরে গিয়ে চুলের আদ্রতা বজায় রাখে, মাথার ত্বকের সংক্রমণ রোধেও ভুমিকা রাখে। এছাড়াও ক্যাস্টর অয়েলে রয়েছে ওমেগা ৬ ফ্যাটি অ্যাসিড।
চুলের আদ্রতা এবং মসৃণতা বজায় রাখার জন্য, এই তেল ময়েশ্চারাইজিং এজেন্ট হিসেবেও কাজ করে। যাদের মাথার চুল শুষ্ক ও রুক্ষ, তাদের জন্য এই তেল চুলকে নরম এবং চকচকে করে তোলে, চুলের আঁকা ফাটা সমস্যা হলেও কাজ করে, এবং চুলের গোড়া মজবুত করে।
পেঁয়াজের তেলের ব্যবহারঃ
পেঁয়াজের রস ব্যবহারের ফলে, আমাদের মাথার চুলের খুবই উপকার পাওয়া যায়। ঠিক তেমনি চুলের যত্নের পেঁয়াজের তেলেরও ভূমিকা রয়েছে। পেঁয়াজের তেলে সালফারের মত উপাদান পাওয়া যায়, যা আমাদের চুলের গোড়া মজবুত করতে, এবং চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে। পিয়াজের তেলে থাকা অ্যান্টিব্যাকটিক্যাল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য, ত্বকের সংক্রমণ রোধ করে এবং মাথার খুশকি দূর করতে কাজ করে। পেঁয়াজের তেলে, চুলের গোড়া মজবুত করে, চুলকে মসৃণ ও উজ্জ্বল করে তোলে।
আমাদের মধ্যে অনেকেরই অল্প বয়সে চুল পেকে যাওয়ার মত সমস্যা দেখা দেয়, তাদের জন্য পেঁয়াজের তেলের ব্যবহার খুবই উপকারী।কেননা এই তেলে থাকা উপাদান অকালে চুল পাকা রোধ করে। পেঁয়াজের তেল ব্যবহারে কিছু নিয়ম-কানুন রয়েছে, পিয়াজের তেল সপ্তাহে ১ থেকে ২ বার ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রতিদিন ব্যবহারের ফলে এটি মাথার ত্বকের ক্ষতি করতে পারে যা থেকে জ্বালা যন্ত্রণার সমস্যা হতে পারে।
আমন্ড অয়েলের ব্যবহারঃ
চুল ঘন করার তেলের নাম, আর্টিকেল টিতে ইতিমধ্যে বেশ কিছু, চুল ঘন করার তেলের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। চুলের যত্নে এই তেলগুলোর পাশাপাশি, আমন্ড অয়েলেরও ভূমিকা রয়েছে। কেননা আমন্ড অয়েলের ব্যবহারের ফলে, এটি চুলকে মজবুত করে, খুশকি দূর করে, চুলকে নরম, চকচকে ও ঘনত্ব বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। এই তেলে থাকা, ভিটামিন ই, ম্যাগনেসিয়াম, প্রোটিন এবং ফ্যাটি এসিড চুলকে মশ্চারাইজিং করে।
আরো পড়ুনঃ কি খেলে মাথা ঘোরা কমবে, মাথা ঘোরা কমানোর উপায়।
নিয়মিত এই তেল ব্যবহারের ফলে, এটি চুলের বৃদ্ধি বাহাল রাখে, এবং ক্ষতিকারক চুল মেরামতের জন্য কাজ করে থাকে। যদি এই তেল দিয়ে মাথায় মাসাজ করা হয়, তাহলে এটি মাথার রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে যা চুলের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
কাঠ বাদামের তেলঃ
চুলের যত্নে কাঠ বাদামের তেলেরও ভূমিকা কম নয়। কাঠবাদামে থাকা ভিটামিন ই, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম সহ অন্যান্য যে সকল পুষ্টি উপাদান রয়েছে, এগুলো চুলের বৃদ্ধিতে এবং চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া আমরা হয়তো অনেকেই কাঠবাদামের, পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানি। কাঠ বাদামের তেল নিয়মিত ব্যবহারের ফলে এটি চুলকে নরম এবং উজ্জ্বল করে তোলে
মাথার চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধিতে কাঠবাদামের ভূমিকা অনেক বেশি। আজকের আর্টিকেলটির মূল বিষয় ছিল, চুল ঘন করার তেলের নাম সম্পর্কে। আপনার যদি মাথার চুল পাতলা হয়ে থাকে তাহলে আপনি নিয়মিত, কাঠ বাদামের তেল ব্যবহার করতে পারেন। এটি থেকে আপনি চুলের যত্নে খুব ভালো ফলাফল মিলাতে পারবেন।
চুলের যত্নে সরিষার তেলের ব্যবহারঃ
সরিষার তেল, গ্রাম অঞ্চলের পুরুষেরা এবং নারীরা উভয়ে অনেকে এখনো, ব্যবহার করে থাকেন। সরিষার তেল ব্যবহার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুরুষেরাই করে থাকে। চুলের যত্নে সরিষার তেলের ভুমিকা, খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই তেলে থাকা পুষ্টি উপাদান যেমন, জিঙ্ক, বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন এ ও ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড চুলের বৃদ্ধিতে ভূমিকা পালন করে।
এছাড়া এই তেলে থাকায় এন্টিফাঙ্গাল গুনাগুন, আমাদের মাথার ত্বকের সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে, রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে, যার জন্য চুলের গোড়া মজবুত হয়। চুল পড়া রোধে, চুলের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা এবং মাতার ত্বক সুস্থ রাখার জন্য সরিষার তেল খুবই পরিবেশ বান্ধব। সরষের তেলের ভালো ফলাফল পেতে, এটি গরম করে মাথায় মাসাজও করতে পারেন।
চুলের যত্নে রোজমেরি অয়েলঃ
রোজমেরি অয়েল ,অর্থাৎ গোলাপের পাপড়ির তেল, এটিও আমাদের চুলের যত্নে খুবই কার্যকরী। মাথার চুল পড়ার সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিদের জন্য, রোজমেরি অয়েল নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। এই তেলে থাকা ভিটামিন এ, ভিটামিন সি ও ভিটামিন বি ৬ চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে, চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত, ময়েশ্চারাইজিং করে। এই তেলের ব্যবহারের ফলে, মাথার খুশকি দূর হয় এবং প্রদাহ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
তবে রোজমেরি অয়েল ব্যবহারে কিছু, নিয়ম-কানুন মানা উচিত। রোজমেরি অয়েল সরাসরি ব্যবহার না করে এটি, নারকেল তেল ও জোজোভা তেলের সাথে, ব্যবহার করা খুবই উপযুক্ত। রোজমেরি অয়েল ব্যবহারে, ১০ থেকে ১৫ মিনিট চুল ম্যাসাজ করার পরে, শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে, আপনি চাইলে রেখেও দিতে পারেন।
উপরে উল্লেখিত তেলগুল ব্যাবহারে, কোন সমস্যা আছে কিনা।
চুল ঘন করার তেলের নাম, আর্টিকেল টিতে ইতিমধ্যে, চুল ঘন করার বা চুলের যত্নে বেশ কিছু তেলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে আমাদের অনেকের মনের ভিতরে, একটা প্রশ্ন আসতে পারে যে, চুলের যত্নে এই সকল তেলের, ব্যবহারের ফলে কোন সমস্যা হবে কিনা। হ্যাঁ আপনার প্রশ্নটা ঠিক, তবে এর উত্তরটা হল এই সকল তেল, যদি সঠিক নিয়ম মেনে পরিমাণ মতো ব্যবহার করা হয়। তাহলে এগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চুলের যত্নে উপকারী প্রভাব ফেলে। এজন্য সকল তেলের ব্যবহারের কিছু নিয়ম নীতি, মেনে ব্যবহার করা উচিত।
আরো পড়ুনঃ মহিলাদের চুল পড়া বন্ধ করার উপায়।
- উপরে উল্লেখিত তেল গুলোর মধ্যে, রোজমেরি তেল এবং পেঁয়াজের তেলে অনেকের ক্ষেত্রে এলার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। কেননা এই তেলগুলতে সামান্য পরিমাণে এলার্জি রয়েছে। এজন্য আপনার ত্বকের ধরন অনুযায়ী, ত্বকে কোন এলার্জি আছে কিনা, এগুলো ক্লিয়ার হয়ে তারপরে ব্যবহার করবেন। প্রাথমিক অবস্থায় ব্যবহারের জন্য আপনি, সামান্য পরিমাণ তেল ব্যবহার করে পরীক্ষাও করে নিতে পারেন।
- অন্যদিকে প্রতিটা মানুষের চুলের ধরন এক নয়, আপনার চুলের ধরন অনুযায়ী, আপনার সঠিক তেলটি বেঁচে, তারপরে ব্যবহার করা উচিত। এজন্য আপনি চাইলে, হেয়ার ফলের জন্য ক্যাস্টর তেল এবং নারকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া যদি আপনার চুলে ড্যামেজ থাকে, এজন্য অর্গান এবং আমন্ড অয়েল ব্যবহার করতে পারেন।
- উপরে উল্লেখিত ক্যাস্টর অয়েল, মূলত খুব ঘন ধরনের তেল। এটি ব্যবহার করলে আপনার চুল,চটচটে এবং ভারি মনে হতে পারে। এজন্য ক্যাস্টর অয়েলের সাথে, আপনি চাইলে নারকেল তেল বা অলিভ অয়েলের মতন হালকা তেলের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
- রোজমেরি তেল এবং ক্যাস্টর অয়েল, দুটো একসাথে মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে ব্যবহার করা সবথেকে উপকারী। এই তেলের ব্যবহারে জন্য আমাদের মাথা রাখতে হবে, চুলের ধরন নির্ধারণ করে, সঠিক পরিমাণে ব্যবহার করা। পরিমাণের বাইরে অতিরিক্ত তেল, বেশি সুন্দর্যের আশায় কখনোই ব্যবহার করবেন না।
উপসংহার। চুল ঘন করার তেলের নাম সম্পর্কে
চুল ঘন করার তেলের নাম, আর্টিকেল টিতে ইতিমধ্যে, চুল ঘন করার প্রয়োজনীয় কিছু তেলের নাম সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। চুলের যত্নে পুরুষের থেকে নারীরা বেশি যত্নবান হয়। তবে অতিরিক্ত যত্নের জন্য, যেকোনো পণ্যই অতিমাত্রায় ব্যবহার করবেন না। সুন্দর এবং সঠিক ফলাফল পাওয়ার জন্য, অবশ্যই পরিমাণমতো ব্যবহার করা উচিত। আপনার যদি চুল পড়া সমস্যা থাকে, চুল ক্রমান্বয়ে পাতলা হয়ে যায়। তাহলে এই তেলগুল থেকে যেকোন একটি তেল, আপনার চুলের ধরন অনুযায়ী নির্বাচন করে ব্যবহার করতে পারেন।
এগুলো ব্যবহারের ফলে আশা করা যায় আপনি সমাধান পেলেও পেতে পারেন। এছাড়া সব থেকে ভালো হয় চুলের যত্নে যে কোন তেল ব্যবহারের, আগে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া। যাইহোক আর্টিকেলটি এতক্ষন মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। চুল ঘন করার তেলের নাম আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে, চাইলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে দিতে পারেন।
(খোদা হাফেজ)


ভদ্রতা বজায় রেখে কমেন্ট করুন! কারন,প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url