নাক বন্ধ হলে ঘরোয়া উপায়
আর কিছুদিন পরেই, শীতের মৌসুম শুরু হবে, শীতের মৌসুম শুরু হলে, আমাদের অনেকেরই বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। এই সকল সমস্যার মধ্যে, সর্দি জনিত সমস্যায়, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া খুবই কমন একটি ব্যাপার। নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার সমস্যা অনেক সময় অনেকে, বেশ কিছু ওষুধ ব্যবহার করে থাকে। এগুলো সাময়িক সময়ের জন্য স্বস্তি দিলেও, সম্পূর্ণরূপে সমস্যার সমাধান মিলাতে পারে না।
দএই আর্টিকেলটিতে, নাক বন্ধ হলে ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করব। মনোযোগ সহকারে পড়ুন কেননা, সামনেই শীতের মৌসুম, আপনি আমি বা আমাদের পরিবারের যেকোনো কেউই, জ্বর ও কাশি সহ নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার মত সমস্যায় পড়তে পারেন যেকোনো মুহূর্তে।
পোস্ট সূচিপত্রঃ নাক বন্ধ হলে ঘরোয়া উপায়
- নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রাথমিক কারণ।
- নাক বন্ধ হলে ঘরোয়া উপায়ে প্রতিকার।
- স্টিম নেওয়া যেতে পারেঃ
- লবণ ও গরম পানি দিয়ে গড়গড়াঃ
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুমঃ
- আদা ও মধু মিশিয়ে খাওয়াঃ
- ভিটামিন সি গ্রহণ করাঃ
- গরম পানি পান করাঃ
- গরম কাপড় দিয়ে গরম সেক দেওয়াঃ
- নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কখন চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।
- উপসংহার। নাক বন্ধ হলে ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে
নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রাথমিক কারণ।
- প্রাকৃতিক কারণ সহ, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এদের মধ্যে প্রধানত রয়েছে, শরীরে ঠান্ডা জনিত কারণ, শরীরে ঠান্ডা জনিত কারণে নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার, সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ সময় হলো শীতের সময়। এই সময় আবহাওয়া ঠান্ডা থাকার কারণে, অনেকেরই নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়।
- ভাইরাস সংক্রমণের কারণে, সাধারণত সর্দি ও ফলু জাতীয় সমস্যা দেখা দেয়। যার কারনে সাইনাসের নালিগুলোতে, প্রদাহ ও শ্লেশ্মা দেখা দেয়। এই কারণটাও নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রধান কারনের মধ্যে পড়ে।
- অনেকের এলার্জি সমস্যার কারণে ও নাক বন্ধ হয়ে যায়। শীতের সময়, রাস্তাঘাটে ধুলাবালির পরিমাণ অনেকাংশেই বেড়ে যায়। এই ধুলাবালির কারণে, অনেকের শরীরে এলার্জি ও ফুসকুড়ির মত সমস্যা দেখা দেয়, যা নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ হতে পারে।
- শরীরে, তো অতিরিক্ত তাপের ফলে অনেক বেশি পরিমাণে গরম অনুভুতি হওয়া এবং একই সঙ্গে আবার ঠান্ডা অনুভূতি হওয়া, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারনের মধ্যে পড়ে। এক কথায় বলে একই সঙ্গে শরীরে গরম এবং ঠান্ডা লাগালে, এটা নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার একটি অন্যতম কারণ।
- এছাড়াও কিছু খাবারের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণেও, সর্দি জনিত সমস্যা হয়ে নাক বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এই সকল খাবারের মধ্যে রয়েছে মশলাদার খাবার, মদ্যপান বা অ্যালকোহল ইত্যাদি। আবার অনেকের ক্ষেত্রে, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করার কারণেও নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার সমস্যা হতে পারে।
নাক বন্ধ হলে ঘরোয়া উপায়ে প্রতিকার।
এই আর্টিকেলটির উপরে আমরা নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার বেশ কিছু সাধারণ কারণ সম্পর্কে জেনেছি। শারীরিক যে কোন অসুস্থতা যদি আমরা প্রাকৃতিকভাবে ঘরোয়া পদ্ধতিতে, সমাধান করতে পারি। তাহলে এই সমাধান আমাদের শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। প্রাকৃতিকভাবে যে কোন সমস্যার চিকিৎসা, স্থায়ীভাবে সমাধানের খুবই বড় একটি মাধ্যম। চলুন তাহলে জানা যাক নাক বন্ধ হয়ে গেলে ঘরোয়া উপায় প্রতিকারের মাধ্যম গুল কি এগুল সম্পর্কে।
স্টিম নেওয়া যেতে পারেঃ
সাধারণত সর্দি জনিত কারণে নাক বন্ধ হয়ে যায়, এটা আমরা জেনেছি। নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার সমস্যায় ঘরোয়া ভাবে, স্টিম নেওয়া যেতে পারে। এর জন্য একটি পাত্র পানি গরম করে নিতে হবে, এবং সেই গরম পানির উপরে নাক ও মুখ দিয়ে, গরম ভাব টানতে হবে। এছাড়াও ছোট একটি রুমের ভেতরে, বা বাথরুমের দরজা বন্ধ করে, গরম পানি দিয়ে রুম টাকে উষ্ণ গরম করে, এই তাপ গ্রহন করা।
লবণ ও গরম পানি দিয়ে গড়গড়াঃ
সর্দির সমস্যায়, আমরা অনেকেই এই পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই, গলা ব্যথা হলে গরম পানির ভিতর লঙ্গ ও লবণ ব্যবহার করে গড়করা দিলে এর সমাধান পাওয়া যায়। তবে নাক বন্ধ হওয়ার ক্ষেত্রেও এর ভূমিকা রয়েছে, গরম পানি ও লবণ দিয়ে গড়গড়া করলে এটি নাক পরিস্কারের সাহায্য করে।
আরো পড়ুনঃ বাচ্চাদের হঠাৎ জ্বর হওয়ার কারণ, এবং কারনীয় কি?
পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুমঃ
নাক বন্ধ হওয়ার ঘরোয়া-উপায়ের মধ্যে, পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুমানো জরুরী। কেননা শরীরে সর্দি সমস্যা নাক বন্ধ হয়ে গেলে, অনেক সময় জ্বরের সমস্যায় পড়তে হয়। তাছাড়া সর্দি কিংবা জ্বর দুটোই আমাদের শরীরে ক্লান্তির প্রবণতা বাড়ায়। এই সমস্যার সমাধানে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম ও ঘুমানো অত্যন্ত জরুরী।
আদা ও মধু মিশিয়ে খাওয়াঃ
আদা ও মধু আমাদের সর্দিজনিত সমস্যা সমাধানে বেশ কার্যকর। এর জন্য কিছু আদা কুচি করে, এবং মধু একই সঙ্গে, চায়ের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে এটি প্রদাহ কমাতে বেশ ভূমিকা পালন করে। এর পর্যাপ্ত গুণাগুণ পেতে অবশ্যই আধা কে সেদ্ধ করে নিলে ভালো হবে। আদা ও মধু দিয়ে তৈরি কৃত চা, গরম অবস্থাতেই খাওয়া উত্তম।
ভিটামিন সি গ্রহণ করাঃ
ভিটামিন সি আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারিতা আমরা সকলেই জানি। নাক বন্ধ হওয়ার ঘরোয়া উপায়ের মধ্যে, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়াও জরুরী। ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খাওয়া সরাসরি এই সমস্যা সমাধান না করে থাকলেও। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে প্রদাহ কমাতে অনন্য ভূমিকা পালন করে, এর থেকে নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার সমস্যায় কিছুটা হলেও স্বস্তি মিলবে।
গরম পানি পান করাঃ
শরীরে ঠান্ডা জনিত কারণে নাক বন্ধ হয়ে যায়, এটা তো আমরা সকলেই অনুভব করতে পারি। নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে, আমাদের শরীরকে তাপ দিয়ে যেকোন ভাবে গরম রাখা উচিত। গরম পানি খেলে বা গরম চা, বিশেষ করে আদাও মধ্য দিয়ে তৈরিকৃত চা ইত্যাদি নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ও সর্দি কাশিতে বেশ আরামদায়ক।
গরম কাপড় দিয়ে গরম সেক দেওয়াঃ
নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শরীরে গরম সেক দেওয়া অত্যন্ত জরুরী। কেননা এই সময় শরীরে অতিরিক্ত ঠান্ডার প্রবনতা থাকে, এজন্য গরম তাপ দেওয়াটা জরুরি। আপনার যদি নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার সমস্যা হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই একটি উষ্ণ গরম কাপড় দিয়ে কপালে বা নাকে অথবা শরীরের বেশ কিছু অংশে গরম শেখ দিতে পারেন। এতে করে স্বস্তি মিলবে এবং বন্ধ হয়ে যাওয়া নাক, খুলে যেতে ভমিকা রাখতে পারে।
নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কখন চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।
নাক বন্ধ হলে ঘরো উপায় সম্পর্কে আমরা বেশ কিছু তথ্যই জেনেছি। একই সঙ্গে নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার সাধারণ কারণ গুলো কি কি সে সম্পর্কেও জেনেছি। এখন আমরা জানবো নাক বন্ধ হয়ে গেলে কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত, সেই সম্পর্কে। নাক বন্ধ হওয়ার সমস্যা, সর্দি জনিত কারণে হলেও এমন কিছু মুহূর্ত রয়েছে, যেগুলো দেখা দিলে কোন মতে অবহেলা করা উচিত নয়, এদের মধ্যে রয়েছে।
- নাকের সর্দি জনিত সমস্যার কারণে যদি ঘন ঘন নাক বন্ধ হয়। প্রায় সময়ে, অযথা কোনো কারণ ছাড়া বা সামান্য পরিমাণ ঠান্ডা লাগলে, যদি নাক বন্ধ হয়। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি, কেননা নাক বন্ধের সাধারণ কারনে ঘন ঘন নাক বন্ধ হবে না। এক্ষেত্রে অবশ্যই সঠিক কারণ নির্ণয়ের জন্য, চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
- সর্দি জনিত কারণে নাক বন্ধ হয়ে যদি, দীর্ঘদিন এই সমস্যা লেগে থাকে, সে ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। কেননা অনেকদিন যাবত, নাক বন্ধ হওয়ার সমস্যা লেগে থাকলে, শারীরিক বড় ধরনের কোন সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
- সবুজ হলুদ ও রক্তযুক্ত সর্দি হলে, অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরী। সাধারণভাবে সর্দির রং পরিবর্তন এবং সর্দির সাথে রক্ত নির্গত হওয়া, সংক্রমনের লক্ষণ হতে পারে। এক্ষেত্রে অবহেলার কোন স্থান নাই, এছাড়াও নাক বন্ধ হওয়ার সাথে শরীরে জ্বর দেখা দিলে, দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
- বছরের মধ্যে যদি অনেকবার, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। এবং সর্দি জনিত সমস্যা হয়ে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা যদি শরীরে দেখা দেয়, সেক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
- সর্বোপরি শিশুদের ক্ষেত্রে, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার সমস্যায় কখন চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে। এক্ষেত্রে বলতে গেলে, অবশ্যই আপনার শিশুকে গরম কাপড়ে মরিয়ে রাখবেন। এছাড়া সর্দি-জনিত সমস্যায় নাক বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি শিশুর যদি জ্বরের সমস্যা দেখা দেয় সে ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রতিকার করা উত্তম।
উপসংহার। নাক বন্ধ হলে ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে
নাক বন্ধ হলে ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে আমরা অনেক কিছুই জেনেছি। সর্দি জনিত কারণে নাক বন্ধ আমাদের সকলেরই কমন একটি সমস্যা, তবে অনেক সময় এটিকে এড়িয়ে গেলে চলবে না, চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। খুব শীঘ্রই শীতের প্রভাব আমাদের দেশে চলে আসবে, শীতের সময় আমাদেরকে অবশ্যই সম্পূর্ণ শীত নিয়ন্ত্রিত পোশাক পড়তে হবে। শরীরে অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগানো থেকে বিরত থাকা জরুরী। নাক বন্ধ হওয়া সর্দি কাশি ও জ্বরের মতো সমস্যাকে, দূরে রাখার জন্য অবশ্যই আমাদেরকে সচেতনতা অবলম্বন করা উচিত।
আপনি বা আপনার পরিবারের সকলে, যাতে অতিরিক্ত ঠান্ডার প্রবণতার কারণে, সর্দি কাশির মতো সমস্যায় না পড়ে্ন, সে ব্যাপারে খেয়াল রাখা উচিত। যাইহোক এতক্ষণ মনোযোগ সহকারে আজকের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে দিবেন। কেননা সামনেই শীতের সময়, নাক বন্ধ হলে ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে যেনে রাখা আমাদের সকলেরই উচিত।
(খোদা হাফেজ)
ভদ্রতা বজায় রেখে কমেন্ট করুন! কারন,প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url