আপনার কিডনি কি ড্যামেজ হচ্ছে? লক্ষণগুলো জানুন।

আমাদের শরীরের কিডনি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটা অঙ্গ। বলা হয়ে থাকে, কিডনি আমাদের শরীরে  ছাকনির মত কাজ করে। শরীরে যদি কিডনির সমস্যা বাসা বাঁধে তাহলে একের পর এক নানা ধরনের জটিল সমস্যা দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে কিডনির সমস্যাকে নিঃশব্দ ঘাতক বলে ব্যাখ্যা দেওয়া যায়। 

kidni


চিকিৎসকদের পরিসংখ্যানে বলা হয়ে থাকে, মানুষের মারাত্মক স্বাস্থ্য জটিলতা গুলোর মধ্যে, হার্ট অ্যাটাকের পরে অবস্থান করে কিডনি ড্যামেজ। কিডনি ড্যামেজ হওয়ার আগে আমাদের শরীরে কিছু লক্ষণ দেখা যেতে পারে। তাহলে কথা না বাড়িয়ে চলুন, জেনে নেওয়া যাক আমাদের শরীরের এই মরণব্যাধির লক্ষণগুলো। 

পোস্ট সূচিপত্রঃ আপনার কিডনি কি ড্যামেজ হচ্ছে? লক্ষণগুল জানুন।

কিডনি ড্যামেজ হলে যে  ধরনের লক্ষণ দেখা দিতে পারেঃ 

শরীর ক্লান্তির দেখা দিতে পারেঃ

আমাদের শরীরে ক্লান্তি ব্যাপারটা থাকবে, তবে কোন নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই যদি আমাদের সব সময় ক্লান্তি, শরীর দুর্বলতা অনুভব করা ও ওজন দ্রুত কমে যায় তাহলে এটা  কিডনির সমস্যার কারণ হতে পারে। চিকিৎসকদের মতে, আমাদের শরীরের কিডনি নামক অঙ্গটি যদি ঠিকঠাক মত কাজ না করে। তাহলে আমাদের শরীরের রক্তস্বল্পতার মত সমস্যা দেখা দেয়। কেননা কিডনি সঠিকভাবে কাজ না করলে রক্ত পরিশুদ্ধ হয় না। রক্তে বিষাক্ত ও অপ্রয়োজনীয় উপাদান বাড়তে থাকে। ফলে ক্রমশই শরীরের ক্লান্তির পরিমাণ বেড়ে যায়। 

শরীর ফুলে যেতে পারেঃ

কিডনি আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, সেটা আমরা হয়তো সবাই জানি। আমাদের শরীরের যে অপ্রয়োজনীয় পানি কিডনি ছেকে বের করে দেয়,সেটা যদি সঠিকভাবে কাজ না করে। তাহলে পানি শরীরের জমে ফোলা ভাব তৈরি করতে পারে। আমাদের মধ্যে কারো যদি, মুখ ও  চোখের চারপাশ হঠাৎ অস্বাভাবিকভাবে ফুলে ওঠে তাহলে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে। কেননা চিকিৎসকদের মতে, যদি কিডনিতে সমস্যা হয় তাহলে চোখের নিচে অথবা পায়ের গোড়ালি এবং মুখে স্থায়ীভাবে ফোলা ভাব হতে পারে। সেটা হতে পারে এক সপ্তাহ বা দুই সপ্তাহ, এক্ষেত্রে সব সময় সতর্ক থাকবেন। মনোযোগ সহকারে জানুন, কিডনি সমস্যার লক্ষণগুলো।  

প্রস্রাবে সমস্যা হতে পারেঃ

প্রস্রাব আমাদের সবারই করতে হয়, তবে কতবার। একটা প্রশ্ন কিন্তু আমাদের মধ্যে থেকেই যায় যে, একটা সুস্থ শরীরের জন্য আমরা দিনে কতবার প্রস্রাব করব। হ্যাঁ এটাই বলব এখন, একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের দিনে ৭ থেকে ৮ বার প্রস্রাব হতে পারে। এর থেকে, যদি প্রসাব বেশি হয় কিংবা কম হয়, দুটোই কিডনির সমস্যার লক্ষণ। আমাদের শরীরের পানি বের করা ছাড়াও কিডনি পানি শুষে নেয়ার কাজ করে থাকে। কিডনি প্রস্রাবের মাধ্যমে আমাদের শরীর থেকে বর্জ্য বের করে থাকে। যদি এটি ঠিকঠাক মত কাজ না করে তাহলেই মূত্রনালীতে সমস্যা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে, বারবার প্রসাব, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত বের হওয়া এবং প্রসাবে অতিরিক্ত ফেনা হওয়া কিডনির সমস্যার লক্ষণ বলে বিবেচিত হয়। বিশেষ করে রাতের বেলায় স্বাভাবিকের তুলনায় যদি আমাদের কারো, অতিরিক্ত প্রস্রাব হয় তাহলে অবশ্যই সতর্ক হবেন। কিডনি সমস্যার লক্ষণগুলো জানার জন্য মনোযোগ সহকারে পড়ুন। 

 শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা হতে পারেঃ

আমাদের শরীরে তরল ভারসাম্য বজায় রাখে কিডনি। যদি কারো কিডনিতে সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে  ফুসফুসের সমস্যা দেখা দিবে। ফুসফুসের সমস্যা থেকে শরীরে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। একে ফ্লইড ওভারলোড বা হাইপারভোলেমিয়াও বলা হয়ে থাকে। অনেক সময় অনেকের এক্ষেত্রে বুকে ব্যথাও অনুভব করতে পারে। তাহলে বুঝুন, সমস্যাটা কিডনির হলে  আমাদের শরীরে, কত রকমের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। কিডনি ড্যামেজ হওয়ার লক্ষণগুলো জানুন।

অনিদ্রার সমস্যাঃ

একটা সুস্থ শরীরের জন্য, পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম আমাদের অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, একজন ব্যক্তির শরীর সুস্থ রাখতে, প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন। এক্ষেত্রে আমাদের জানা প্রয়োজন, যদি আমাদের মধ্যে কারো শরীরে কিডনির সমস্যা দেখা দেয়। তাহলে আক্রান্ত ব্যক্তিদের রাতে ঠিকমত ঘুম না আসার সমস্যা হতে পারে। কেননা, কিডনি যখন আমাদের শরীর থেকে পানি নিঃসরণ করতে না পারে। তখন কিছু পানি আমাদের ফুসফুসে জমা হয়ে যায়। সেই কারণে ঘুমের সমস্যা হতে পারে। 

শরীরের ত্বকের সমস্যাঃ

আমাদের শরীরের ভেতরে পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত রয়েছে, সেটা আমরা সবাই জানি। তবে আমাদের শরীরে এই রক্তের খনিজ পদার্থ এবং পুষ্টিগুলো ভারসাম্যহীন হলে। ত্বকে ফুসকুড়ি এবং চুলকানির মতন সমস্যা দেখা দিতে পারে। কিডনি যখন সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না, তখন শরীরে খনিজ এবং পুষ্টির মধ্যে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়। যার কারণে এই ধরনের ফুসকুরি এবং চুলকানির মতন সমস্যা হয়ে থাকে।  

 মনোযোগ কমে যেতে পারেঃ

জীবনের একটা পর্যায়ে এসে আমাদের সকলেরই, কোন না কোন কিছু করে, জীবনযাপন করতে হয়। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, আমরা আমাদের কাজের প্রতি অমনোযোগী হয়ে পড়ি। কেননা অনেক সময় শরীরে ক্লান্তি বোধ আসে এবং দুর্বলতা অনুভব হয়। আমাদের শরীরে যদি কিডনির কার্যকারিতা হ্রাস পায়, তাহলে রক্ত দূষক এবং টক্সিনের উৎপাদন বৃদ্ধি পেতে পারে। এর কারণে ক্লান্তি এবং দুর্বলতা অনুভব হতে পারে। এই সময় রক্ত হ্রাস প্রদর্শিত হয়।

শেষ কথা, কিডনি সমস্যার লক্ষণ।

এতক্ষণে আমরা কিডনি ড্যামেজ হওয়ার, অনেকগুলো লক্ষণ সম্বন্ধে জানতে পারলাম। শরীরের মূল্যবান একটি অঙ্গ কিডনি। আমাদের শারীরিক সুস্থতার জন্য, কিডনি  সুস্থ রাখা আমাদের অবশ্যই প্রয়োজনীয়। তবে আমাদের কারো, শরীরে যদি এই ধরনের লক্ষণ দেখা দেয়। সেটা হতে পারে লক্ষণ গুলোর যেকোন একটা। এক্ষেত্রে হতাশ না হয়ে, অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। হতে পারে শরীরের অন্য কোনো সমস্যার কারণে আপনার  এই ধরনের দুই একটা লক্ষণ দেখা দিতে পারে। তবে বেশ কিছু লক্ষণ একত্রে দেখা দিলে, অবশ্যই আপনি সতর্ক হবেন।

এতক্ষণ মনোযোগ সহকারে পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আমাদের এই পোস্টে যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে। তাহলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে দিবেন। যাত, তারা কিডনির সমস্যার লক্ষণ গুলো জানতে পারে।  *শরীরের প্রতি যত্নবান থাকুন, সুস্থ থাকুন।

                                                                                                           { খোদা হাফেজ }

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ভদ্রতা বজায় রেখে কমেন্ট করুন! কারন,প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url