সকালের নাস্তায় সিদ্ধ ডিমের উপকারিতা জানুন।
প্রতিনিয়ত সকালের নাস্তায় আমরা প্রায় অনেকেই, ডিমকে প্রধান্য দিয়ে থাকি। এক কথায় বলা চলে ডিম আমাদের খুব পরিচিত এবং জনপ্রিয় খাদ্য। তবে আমরা অনেকই ডিমের ওমলেট, পোজ, চপ, ডিমের সালাদ ইত্যাদি করে খাওয়া হয়। আমরা হয়তো অনেকেই জানি আবার অনেকেই জানিনা, যে ডিমের শতভাগ পুষ্টি পেতে আপনার শুধুমাত্র সিদ্ধ ডিম খাওয়া জরুরী। কেননা আপনি যেভাবে ডিম খান না কেন শুধুমাত্র কেবল সেদ্ধ ডিমে আপনার শরীরের পোস্টের চাহিদা ১০০% যোগান দিতে পারে।
ডিম আমরা কেন খাব।
আমাদের দেশে প্রায় সকল শ্রেণীর মানুষেরই, জনপ্রিয় খাবারের তালিকায় ডিম। ডিমের অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। পুষ্টিবিদরা বলেছেন, ডিমে রয়েছে ভিটামিন, খনিজ, প্রোটিন, ফ্যাট, ক্যারোটিনয়েদস, লিউটিন, জিয়াজ্যান্থিনের মত নানা পুস্টি উপাদান। যেটা সাইলেন্ট ভাবে আমাদের শরীরের নানান চাহিদা পূরণ করে। সকল বয়সের মানুষই ডিম খেতে পারে। তবে এর সঠিক পোস্ট উপাদান পেতে অবশ্যই আপনাকে ডিম সিদ্ধ করে খেতে হবে। তাছাড়া আপনি যদি অর্ধ সিদ্ধ ডিম খেতে পারেন সেটা আরো কার্যকর হবে। ডিমের উপকারিতা ও গুনাগুন সম্পর্কে জানতে আমাদের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ডিমের পুষ্টিগুণ জেনে নিন।
ডিম প্রতিনিয়ত একটি খাদ্য রুটিনের নাম। তবে এর উপকারিতা পেতে অবশ্যই আপনি সিদ্ধ ডিম খাবেন।ডিমের অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক ডিমের পুষ্টগুণ সম্পর্কে।
১. নানা কারণে অনেক মানুষেরই চুল পড়ে। আপনার যদি চুল পড়া মতন সমস্যা থাকে, তাহলে অবশ্যই আপনি ডিম খাওয়া শুরু করুন। কারণ ডিমে আপনার চুল পড়ার হার কমাবে। আসলে ডিমের অন্তরে থাকা ভিটামিন এ ও ই এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এই দুটি উপাদান চুলের গোড়ার পুষ্টির ঘাটতি দূর করে। ফলে চুল পড়ার হার কমতে সময় লাগে না।
২. ডিম দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটায়, ডিমে রয়েছে লুয়েটিন এবং জিয়াক্সেনথিন, নামে দুটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা আলটাভায়োলেট রাশি থেকে চোখকে রক্ষা করে। তার সাথে রেটিনার কর্ম ক্ষমতা বাড়ায়। ফলে ছানিসহ একাধিক চোখের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পেতে শুরু করে। এবং চোখের দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটায়।
৩. অ্যামাইনো এসিড এর মত ঘাটতি দূর করে, শরীরের সচলতা বজায় রাখার জন্য নিয়মিত যে উপাদানগুলি আমাদের প্রয়োজন পরে অ্যামাইনো এসিড তার মধ্যে অন্যতম। ডিমে প্রচুর পরিমাণে অ্যামাইনো এসিড এর মতন উপাদান রয়েছে। তাই আপনি যদি ব্রেকফাস্ট এর মেনুতে সিদ্ধ ডিম খান তাহলে শরীরের সুস্থতা নিয়ে আপনারা কোন চিন্তাই করতে হবে না।
৪. ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতে ডিমের গুরুত্ব রয়েছে, ডিমে রয়েছে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, এটি স্কিন এবং চুলের সৌন্দর্য বাড়ানোর পাশাপাশি লিভারের কর্ম ক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। আর এই উপাদানটি প্রচুর মাত্রায় রয়েছে ডিমে। এত পরিমান উপকারিতা আমার মনে হয় আর কোন খাবার থেকে পাওয়া যাবে।
৫. ডিম অ্যানিমিয়ার রূপক কমাতে ভূমিকা রাখছে, শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমতে থাকলে সাধারণত এমন ধরনের রোগ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তাই দেহের অন্তরে যাতে এই উপাদানটির মাত্রা কখনো না কমে, সেদিকে আমাদের সকলের খেয়াল রাখতে হবে। এর জন্য প্রতিনিয়ত অবশ্যই আপনার সেদ্ধ ডিম খেতে হবে। বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে সেদ্ধ ডিম উপস্থিত আয়রন শরীরে প্রবেশ করার পর লোহিত রক্তকণিকার উৎপাদন বাড়িয়ে দেয় । এর ফলে অ্যানিমিয়ার মত রোগের প্রকোপ কমতে সময় লাগে না।
৬. ডিম ওজন কমাতে ভূমিকা রাখে, ডিম খেলে ওজন বাড়ে না বরং কমে,। কিভাবে এমনটা হয় জানতে চান? সকাল সকাল ডিম খাওয়া মাত্র আমাদের পেট ভরে যায় এবং অনেকক্ষণ যাবৎ ক্ষুধা পায় না। ফলে চিপস ভাজাপোরা খেয়ে পেট ভরানোর প্রয়োজন পড়ে না। এর ফলে স্বাভাবিকভাবে ওজন বাড়ার কোনো আশঙ্কা থাকে না। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে যারা সকাল সকাল শরীরের ক্যালরির চাহিদা পূরণ করে দেয়, তাদের সারা দিনে বেশি করে ক্যালোরি খাওয়ার ইচ্ছা থাকে না। এর ফলে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৭. অনেকেই মনে করেন বেশিদিন খেলে নাকি কোলেস্টরেলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। তবে আপনাদের জানা উচিত আপনাদের এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। কারণ একাধিক গবেষণায় একথা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত হয়ে গেছে যে ডিমে উপস্থিত ২০০ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল আসলে ভালো কোলেস্টেরলের পর্যায় পড়ে। ফলে এটি শরীরের কোন ক্ষতি তো করেই না বরং উপকারিতায় আসে। তাই প্রতিদিনই ব্রেকফাস্ট একটি করে ডিম খেলে শরীরে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্র বাড়তে থাকে এবং কমতে থাকে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ। তাই বোঝা যায় ডিম আমাদের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে কতটা ভূমিকা রাখে।
৮. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে ডিমে,ডিমে উপস্থিত সেলেনিয়াম থাকে এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় কার্যকরী ভূমিকা রাখে। একই সঙ্গে থাইরয়েড হরমোনের খরন যাতে ঠিকমতো হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখে। ফলে সংক্রমণ এবং থাইরয়েড রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়।
৯. ডিমে আমাদের ব্রেনের উন্নতি ঘটায়। ডিমে কলিন নামে একটি এসেনশিয়াল নিউট্রিয়েন্ট থাকে, যা ব্রেন পাওয়ার বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর একবার মস্তিষ্ক বেশি বেশি করে কাজ করা শুরু করলে একদিকে যেমন স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায় তেমনি মনোযোগ এবং বুদ্ধির ধারক বাড়তে শুরু করে। এক কথায় মস্তিষ্ক কত সুন্দর করে কাজ করবে তা অনেকাংশেই নির্ভর করে কলিনের উপর। সেই কারণেই তো এই উপাদানটির ঘাটতি দেখা দিলে ডিমেনশিয়া এবং অ্যালঝাইমারস সহ একাধিক ব্রেন ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।
১০. ডিম স্ট্রেসের প্রকোপ কমায়, ডিমে উপস্থিত প্রায় নয় ধরনের অ্যামাইনো এসিড মস্তিষ্কে সেরাটনিন নামক বিশেষ এক ধরনের হরমোনের ধরন বাড়িয়ে দেয়। এই হরমোনটি ট্রেস এবং অ্যাংজাইটি কমিয়ে নিমিষে মন ভালো করে দিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
ঝটপট এনার্জির ক্ষেত্রে ডিমের উপকারিতা।
ভিটামিন ডি তে পরিপূর্ণ হওয়ার কারণে জিম আমাদের শরীরের হাড়কে শক্তভক্ত করে তোলে সেই সঙ্গে উপাদানটি হজম ক্ষমতা এবং হার্টের কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাছাড়া ডিম দাঁতের স্বাস্থ্য ও ভালো করে। প্রতিনিয়ত ডিম খেলে দাঁতের সস্তা নিয়ে আপনার কোন চিন্তাই করতে হবে না। তাই এক কথায় বলা যায় আপনি যদি প্রতিনিয়ত সিদ্ধ ডিম খান তাহলে আপনি সার্বিকভাবে চাঙ্গা হয়ে উঠবেন। ডিমের পুষ্টিগুণ শরীরে ঝটপট এনার্জি প্রদান করে। তার মানে ডিম খেলে আপনার শরীরে তার কার্যকারিতা শুরু করবে। তবে সব সময় মাথায় রাখতে হবে, অবশ্যই ডিম সেদ্ধ করে খেতে হবে।
লেখক এর শেষ কথা।
প্রিয় পাঠক, এতক্ষণে ডিমের পুষ্টিগুণ সম্বন্ধে অনেক কিছুই জানতে পারলে। নিঃসন্দেহে বলা যায় ডিম আমাদের শরীরের পুষ্টির ঘাটতি পূরণে অনন্য ভূমিকা পালন করে। ডিম আমরা সবাই কম বেশি খেয়ে থাকি। পরিবারের বাচ্চা থেকে বৃদ্ধ মা বাবাকে ডিম খেতে দেই।আপনারা যারা, ডিমের পুষ্টিগুণ সম্বন্ধে জেনেছেন। অবশ্যই চেষ্টা করবেন সকালের নাস্তা একটি সিদ্ব ডিম রাখার জন্য।যাতে আপনার সারাদিনের পোস্টে চাহিদা মেটাতে পারেন। কিন্তু অবশ্যই অবশ্যই ডিম সিদ্ধ করে খাবেন। তাহলেই কেবলমাত্র আপনি ঠিকঠাক শরীরের পোস্টের চাহিদা মেটাতে পারবেন।
পরিশেষে বলতে হয়, আপনি যদি খাদ্য সচেতন থাকেন তাহলে সব সময় ভালো থাকতে পারবেন। তাই সকলে খাদ্য সচেতন থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। এতক্ষণ মনোযোগ সহকারে পোস্টে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
(খোদা হাফেজ)
ভদ্রতা বজায় রেখে কমেন্ট করুন! কারন,প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url