রাতকানা রোগ কেন হয় ? এবং রাতকানা রোগের প্রতিকার।
রাতকানা রোগ কেন হয়,তা কি আপনি জানতে চান?।রাতকানা রোগিরা বিসেশ করে রাতে অর্থাৎ, যখন সূর্য ডুবে যায়,এবং অন্ধকার নেমে আসে তখন তারা চোখে দেখতে পায় নাহ। এছারা তারা দিনের বেলা সব কিছু ঠিক ঠাক দেকতে পায়। তবে তাদের অন্ধকারে না দেকতে পাওয়া আনেক ভয়ংকর ,শুধু ভয়ংকার বোললে চলবে না এটা অনেক বিপদজনক ও বটে।

পোস্ট সূচিপত্রঃ রাতকানা রোগ থেকে কিভাবে মুক্তি পাবেন।
- রাতকানা রোগ কেন হয়।
- রাতকানা রোগ কি ভাল হয়।
- রাতকানা রোগের প্রতিকার কি।
- রাতকানা রোগের লক্ষণ।
- রাতকানা কাদের বেশি হয়।
- রাতকানা হয় কিসের অভাবে।
- শিশুদের কেন রাতকানা বেশি হয়।
- ভিতামিন এ-এর অভাব ও প্রভাব।
- খাদ্য অভ্যাসে আমরা যে ভুলগুলো করি।
- রাতকানার চিকিৎসা না করার ফলাফল।
- পরিশেষে লেখকের শেষ মতাম ।
রাতকানা রোগ কেন হয়।
রাতকানা রোগ কেন হয় এটা জানা আমাদের জন্য অত্যান্ত জরুরি ।কেননা এটা আমাদের চোখ এর সাথে ওতোপ্রত ভাবে জরিত। আপনি যদি একজন সুস্থ মানুষ হয়ে থাকেন তাহলে একটু সময় নিয়ে চোখ বন্ধ করে ভাবুন আপনি চোখে দেখতে পান নাহ । তাহলে বুজতে পারবেন ব্যাপার টা আসলে কেমন । একজন রাতকানা রোগি রাতে আন্ধের মতই।আল্লাহ তাআলা আমাদের এই রাতকানা রোগ থেকে সবাই কে হেফাজাত করুক। আজকে আমরা জানব রাতকানা রোগ আমাদের কেন হয়।
- প্রথমত, ভিটামিন এ এর ঘাটতি হলে চোখের রেটিনে প্রভাব ফেলে। এই ভিটামিন টি চোখের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।যা আলোকে সঠিকভাবে গ্রহণ করতে সাহায্য করে। যখন শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিন এ না থাকে তখন চোখ রাতের আলোতে ভালোভাবে কাজ করতে পারে না।
- দ্বিতীয়ত, অপুষ্টির কারণে এই রোগ বেশি দেখা দেয়। অনেক শিশু ও নারী এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। কারণ তারা নিয়মিতভাবে পুষ্টিকর খাবার পায় না। এটি শুধু চোখের সমস্যা নয় বরং একজন মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় অন্যরকম একটা প্রভাব ফেলে।
- তৃতীয়ত, জেনেটিক বা বংশগত কারণে এই রোগটি দেখা দিতে পারে। যাদের পরিবারে আগে কেউ রাতকানা রোগে ভুগেছে, তাদের ক্ষেত্রেও এই ঝুঁকি থাকে। এছাড়া কিছু লিভারের রোগ,ডায়াবেটিস ও দীর্ঘদিনের ওষুধ সেবন করলেও চোখের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
রাতকানা রোগ কি ভাল হয়।
রাতকানা রোগ একটি চোখের সমস্যা, যেখানে একজন রোগী আলো কমে গেলে অন্ধকারে কিছুই দেখতে পায় না। সাধারণত ভিটামিন এ এর ঘাটতি থেকেই এই সমস্যার দেখা দেয়। বিশেষ করে শিশুরা এবং গর্ভবতী নারীরা এতে বেশি আক্রান্ত হয়। তবে অনেক ক্ষেত্রে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিক, লিভারের সমস্যা, কিংবা কিছু জেনেটিক কারণে ও এই রোগ হতে পারে।
আমাদের মাঝে অনেকে মনে করেন এই রোগ কমে না।কিন্তু সত্যিটা হল পর্যাপ্ত পুষ্টি, বিশেষ করে ভিটামিন এ গ্রহণ করলে এর প্রতিরোধ করা সম্ভব। ডাক্তারি পরামর্শ নিয়ে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করলে চোখের অবস্থা আবার ফেরানো যায়। তাই,রাতকানা রোগ কি ভালো হয় এই প্রশ্নের উত্তর হল, হ্যাঁ যদি এটা প্রাথমিকভাবে ধরা পড়ে এবং চিকিৎসা শুরু করা হয়।
রাতকানা রোগের প্রতিকার কি।
রাতকানা রোগ প্রতিরোধে মূল ভূমিকা পালন করে সঠিক খাদ্য অভ্যাস ও চিকিৎসা।মূলত ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া এর প্রধান প্রতিকার। গাজর, মিষ্টি কুমড়া, কলিজা, ডিমের কুসুম, পাকা আম ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ আছে। শিশুদের নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচির মাধ্যমে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো এ রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
চোখের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করা উচিত। অনেক সময় জটিল রোগে চোখের ভিতরের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন অস্ত্রপাচার লাগতেও পারে। তাই প্রাথমিক লক্ষণ দেখলেই দেরি না করে চিকিৎসা নেওয়া জরুরী। এবং বলা যায় রাতকানা রোগের প্রতিকারে সহজ ও কার্যকর উপায় হল, সচেতনতা, খাদ্য, ও চিকিৎসার সাহায্য নেওয়া।
রাতকানা রোগের লক্ষণ।
রাতকানা রোগের প্রধান লক্ষণ হল রাতের বেলা চোখে না দেখা। একজন ব্যক্তি দিনের আলোতে ঠিকঠাক দেখতে পেলেও সন্ধ্যার পর হঠাৎ করে ঝাপসা দেখা শুরু করে। এটি ধীরে ধীরে এমন পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে, যেখানে রাতের বেলা একদম কিছুই দেখা যায় না, অন্ধ মানুষের মত। এ সময় টক শুষ্ক হয়ে যায়, দৃষ্টিশক্তি কমে আসে, চোখে জ্বালাপোড়া, এসব রাতকানা রোগের লক্ষণ। শিশুদের ক্ষেত্রে খেলার সময় বস্তু চিনতে না পারা বা হোঁচট খাওয়ার লক্ষণ হতে পারে। এইসব ঘটনায় ইঙ্গিত করে যে শরীরের ভিটামিন এর অভাব রয়েছে। তাই প্রাথমিকভাবে এর লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
রাতকানা কাদের বেশি হয়।
রাতকানা হয় কিসের অভাবে।
রাতকানা হয় কিসের অভাবে এই প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে, সাধারণত রাতকানা হওয়ার সব থেকে বড় লক্ষণ শরীরে ভিটামিন এ এর অভাব। এই ভিটামিন চোখের দৃষ্টি শক্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে। যখন খাদ্য তালিকায় ভিটামিন এ এর পরিমাণ কম থাকে, তখন চোখে প্রয়োজনীয় পিগমেন্ট তৈরি হয় না,যা রাতের অন্ধকারে দেখার জন্য দরকার। এটি না থাকার কারণে এই রোগের শুরু হয়। বিশেষ করে খাদ্য তালিকায় গাজর, পালংশাক, মাছ, ডিম,ইত্যাদি খাবারের ভিটামিন এ থাকে,যা না খেলে চোখে ধীরে ধীরে সমস্যার দেখা দেয়। রাতকানা রোগ কেন হয় এটি বোঝা গেলে, আমরা আমাদের খাদ্য অভ্যাসে পরিবর্তন এনে সহজেই এর সমাধান করতে পারব এবং এই রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারবো।
শিশুদের কেন রাতকানা বেশি হয়।
শিশুরা কেন রাতকানায় বেশি ভোগে। এই প্রশ্নের উত্তর যদি আমরা খুঁজতে চাই তাহলে প্রথমেই আমাদের শিশুদের পুষ্টির দিকে নজর দিতে হবে। জন্মের পর থেকে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সঠিক পোস্টটি খুব জরুরী। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, অনেক শিশুই পুষ্টির অভাবের কারণে ভিটামিন এ পাচ্ছেন। ফলে এরা দুর্বল হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। অনেক শিশুতো দারিদ্র পরিবারে জন্মানোর কারণে সঠিক মাত্রায় পোস্টটি পাচ্ছে না।
সাধারণত শিশুদের খাবারের তালিকায় পুষ্টিকর খাবার রাখা অত্যন্ত জরুরি। শিশুদের শরীরে ভিটামিন এ এর ঘাটতি হলে শিশুরা ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শিশুদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায় কারণ তারা খাবার বেঁচে খেতে পছন্দ করে অনেক সময় ফল ও সবজির প্রতি অনিহা দেখায়। এর ফলে শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিন এ কমে যায়। যার ফলে এই ভিটামিনের ঘাটতি দেখা দেয়। আশা করি এ থেকে বুঝতে পেরেছেন যে রাতকানা রোগ কেন হয়।
পাশাপাশি দারিদ্রতায় বেড়ে ওঠা শিশু স্বাস্থ্যসম্মত খাবার ও চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত। ফলে রাতকানা রোগ বেশি হয়। আমরা আমাদের পরিবারের শিশুদের দিকে সর্বদা খেয়াল রাখবো। যাতে তারা বেড়ে ওঠায় পুষ্টিকর খাবার পায়। এবং এই খাবারের তালিকায় রাখবো, দুধ,ডিম, গাজর, কুমড়া ও সাকসবজি। এতে করে শিশুদের রাতকানা রোগের ঝুঁকি কমবে।
ভিতামিন এ-এর অভাব ও প্রভাব।
ভিটামিন এ এর অভাব ও প্রভাব চোখের উপর সরাসরি পরে।চোখের রেটিনা স্বাভাবিকভাবে কাজ করার জন্য এই ভিটামিনের উপর নির্ভর করে। এর অভাবে চোখ শুষ্ক হয়ে যায় এবং রাতকানার লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে। এটি শুধু দৃষ্টিশক্তি নয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমিয়ে দেয়। শিশুরা যদি নিয়মিত ভাবে এই ভিটামিন তবে তারা রাতের বেলা দেখার সমস্যায় পড়বে। এর জন্য সব সময় আমরা শিশুদেরকে বয়স্ক মানুষদেরকে ও মহিলাদেরকে তার সাথে আমরা প্রত্যেকেই ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার খাব। এতে করে আমাদের পরিবারের সবাই ভিটামিন এর ঘাটতি থেকে মুক্তি পাবে।
খাদ্য অভ্যাসে আমরা যে ভুলগুলো করি।
সাধারণ পরিবারের মানুষ যারা তারা সব সময় চাইলে পুষ্টিকর খাবার খাইতে পারে না।আমাদের প্রতিদিনের খাবারই ঠিক করে আমরা কতটুক সুস্থ থাকবো। কিন্তু অনেক সময় আমরা খাদ্যের গুণগতমানের দিকে নজর না দিয়ে শুধু পেট ভরানোর দিকে মনোযোগ দেই।যার ফলে অনেক উল্টাপাল্টা খাবার খাই ভালো খাবার বাদ দিয়ে। বিশেষ করে যারা সবজি ও ফলমূল খেতে চায় না, কিনবা বাইরের তেলে ভাজা খাবার খেতে পছন্দ করে, তারা শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিন এ পাই না। এর ফলে চোখের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা কমে যায়। শিশুদের পাশাপাশি প্রাপ্তবয়স্ক করা ও এই সমস্যায় পড়তে পারে।
এছাড়া ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার যেমন, গাজর, কলিজা, ডিম,কুমড়া ইত্যাদি খাদ্য তালিকা না রাখলে ধীরে ধীরে রাতের আলো দেখার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে। এমন ভুল খাদ্য অভ্যাসেই দেখা দেয় রাতকানা।কমে যায় মানুষের চোখে দেখার শক্তি। তাই খাদ্য অভ্যাসের ভুলের প্রভাব প্রতিরোধে আমাদের সর্বদা সচেতন থাকতে হবে। প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় পুষ্টিকর ভিটামিন জাতীয় খাবার রাখতে হবে ও বয়স্কদের পুষ্টি বিষয়ে সব সময় সচেতন থাকতে হবে।
রাতকানার চিকিৎসা না করার ফলাফল।
আমরা যদি রাতকানা রোগের চিকিৎসা না করে তাহলে কি হতে পারে? এই প্রশ্নটির উত্তর জানলে আপনি রাত খানাকে কখনোই অবহেলা করবেন না। প্রাথমিক অবস্থায় এটি শুধু অন্ধকারে ভালো না দেখার সমস্যা হলেও, সময় মত চিকিৎসা না পেলে এর পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে। ভিটামিন এর ঘাটতি যদি দীর্ঘদিন চলতে থাকে, তবে চোখে জটিলতা বাড়ে এবং দৃষ্টিশক্তি স্থায়ীভাবে হারানোর ঝুঁকি তৈরি করে। এমনকি চোখ শুষ্ক হয়ে গিয়ে কার্নিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা এক সময় সম্পূর্ণ অন্ধকারে দিকে ঠেলে দেয়। তাই আমাদের উচিত চোখের সমস্যা শুরু হলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ভিটামিন এ ক্যাপসুল, সুষম খাবার ও সচেতনতা এই সমস্যার সহজ সমাধান।
পরিশেষে লেখকের শেষ মতাম ।
প্রিয় পাঠক, এতক্ষণ রাতকানা রোগের সম্পর্কে আমরা জেনেছি। তার সাথে এটাও জেনেছি কিভাবে রাতকানা রোগের প্রতিকার করব। নিঃসন্দেহে রাতকানা একটি বিপদজনক রোগ। আমাদের বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষই হতদরিদ্র। এক কথায় নুন আনতে পান্তা ফুরোয়।কিন্তু এর মধ্যেও যাতে করে আমাদের ভিটামিনের ঘাটতি আমরা পূরণ করতে পারি এর জন্য সব সময় সর্বদা সচেতন থাকতে হবে। যদিও পরিবারের মুখে আমরা সব সময় ফলমূল না দিতে পারি তারপরেও প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় শাকসবজি রাখার চেষ্টা করব।
বিশেষ করে আমাদের বৃদ্ধ মা বাবা এবং শিশুদের জন্য যতটুক পরিমাণে পারি ততটুক ভিটামিন জাতীয় খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করব। আমাদের পরিবারের শিশুরা যদি সুষম খাবার খেতে না চায় তাহলে সব সময় তাদেরকে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করব। মুখরোচক খাবার যেমন, চিপস , বিস্কুট, কেক এবং পানীয় জাতীয় খাবার কম খাওয়াবো। এবং বৃদ্ধ পিতা মাতা কেউ পুষ্টিকর খাবার খাওয়াব।আপনার পরিবারে আপনি সচেতন হন কারণ আপনার পরিবার ভালো থাকলে আপনিও ভালো থাকবেন।
এতক্ষণ মনোযোগ সহকারে পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।ভালো থাকবেন সর্বদা নিজের প্রতি খেয়াল রাখবেন।
(খোদা হাফেজ)
ভদ্রতা বজায় রেখে কমেন্ট করুন! কারন,প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url