কিডনি ভালো রাখতে কোন খাবার গুলো খাব।
আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ হল কিডনি। চিকিৎসকদের মতে, কিডনি হলো শরীরের ছাঁকনি যেটা শরীরের ভেতরের নাইট্রোজেন ঘটিত সকল বর্জ্য ও অতিরিক্ত তরল বের করে দেয়। কিডনি আমাদের দেহে তরল ও ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখে। শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং শরীরকে কর্মক্ষম্য ও সতেজ রাখে। তাই বুঝতেই পারছেন আমাদের শারীরিক সুস্থতার জন্য কিডনি সচল রাখা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
শরীরের কিডনি নামক অঙ্গটি সুস্থ সবল রাখার জন্য, অবশ্যই আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় কিডনির জন্য ভাল এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়া প্রয়োজন। তাহলে চলুন, কথা না বাড়িয়ে জেনে নেওয়া যাক কিডনি সচল রাখার জন্য আমরা কোন ধরনের খাবারগুলো খাব।
পোস্ট সূচিপত্রঃ
লেবু
আমাদের কারো কাছেই অচেনা নয় লেবু। দৈনন্দিনের খাদ্য তালিকায় প্রায় সকল সময়ে লেবু খেয়ে থাকি। তবে আমরা হয়তো অনেকেই জানি আবার অনেকেই জানিনা , লেবু আমাদের কিডনির স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী।
লেবুতে অতিরিক্ত মাত্রায় ভিটামিন সি এবং সাইট্রিক এসিড রয়েছে। ভিটামিন সি এবং সাইট্রিক এসিড এই দুইটি উপাদান কিডনিতে পাথর হওয়ার আশঙ্কা কমিয়ে দেয়। চিকিৎসকদের মতে দিনে দুটি লেবু চেপা পানি অথবা আধা কাপ লেবু পানি, আমাদের প্রস্রাবের সাইট্রেট আয়রনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যেটা কিডনিতে পাথর তৈরিতে বাধা দিয়ে থাকে।
এছাড়াও, খাবারের সাথেও আমরা লেবু চিপে খেতে পারি এবং অনেক সময় চায়ের সাথে লেবুর রস মিশিয়ে তাও খেতে পারি। এতে করেও আমরা লেবুর পুষ্টিগুণ ও সুবিধা পাব। এই লেবু পানি,আমাদের শরীরের ইউরিক এসিডের মাত্রা কমায় যা কিডনির প্রদাহ কমিয়ে থাকে। তবে সাধারণত যাদের পেটে গ্যাস, ও অ্যাসিডিটির সমস্যা রয়েছে সেই সকল ব্যক্তির অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।
শসা
শসা আমাদের সকলেরই পরিচিত একটি সবজি। আবার ফলো বলা যেতে পারে, আমরা অনেকভাবে এটাকে খেয়ে থাকি। কিডনি ভালো রাখার জন্য আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খাওয়া প্রয়োজন, এটা আমরা সকলেই জানি। এক্ষেত্রে শসায় রয়েছে ৯৫ ভাগ পানি, এই সবজি আমাদের শরীরকে খুব সহজেই সতেজ ও সজীব রাখে।
শসাতে থাকা এই অতিরিক্ত পানি, আমাদের শরীর থেকে ইউরিক অ্যাসিড ও ক্রিয়েটিনিনের মতো বর্জ্য বের করে দেয়। শসাতে খুব কম ক্যালোরি থাকে, এক্ষেত্রে বেশি খেলে শরীরে ওজন বাড়ার ভয় থাকে না। এছাড়াও অন্যান্য সবজির মধ্য থেকে শসা খাওয়া অনেক নিরাপদ। তাই বুঝতেই পারছেন, আমাদের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ কিডনিটি সুস্থ রাখার জন্য, দৈনন্দিনের খাদ্য তালিকায় যতভাবে পারি শসা খাওয়ার চেষ্টা করব।
পার্সলি
পার্সলির কথা আসলে, আমরা ধনেপাতা ভেবে হয়তো অনেকেই ভুল করব। কেননা এটি সম্পূর্ণ ধনেপাতার মতো দেখতে কিন্তু, খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি ঔষধি গাছ। পার্সলিতে এন্টি - অক্সিডেটিভ গুন রয়েছে, এটি অক্সিডেটিভ চাপ কমাতে ভূমি রাখে।
অনেক সময় দেখা যায় আমাদের শরীরের ক্ষতিকর রিয়াক্টিভ অক্সিজেন স্পিসিজ বা ফ্রি রেডিক্যাল মুক্ত আয়রন তৈরি হয়। এসব আমাদের শরীরের কোষকে ধ্বংস করে, এটাকেই অক্সিডেটি ট্রেস বা চাপ বলে। এই অক্সিডেটিভ চাপই শরীরের কিডনির ক্ষতির কারণ হয় দাঁড়ায়। পার্সলি পাতায় ফ্লাভোনয়েড জাতীয় তিন ধরনের উদ্ভিদের যৌগ রয়েছে, এগুলো হলো, এপিজেনিন, লিউটিওলিন, ও কোয়ার্সেটিন। এগুলো সবই শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রদাহরোধী পদার্থ হিসেবে খুবই পরিচিত।
তাহলে বুঝতেই পারছেন, আমাদের কিডনি সুস্থ রাখার জন্য,পার্সলিপাতার গুরুত্ব রয়েছে। তাই অবশ্যই আমাদের কিডনির সুস্থতার জন্য খাবারগুলো খেতে হবে।
ফুলকপি
আমাদের সুপরিচিত সবজি হল ফুলকপি। ফুলকপিতে ভিটামিন কে ফোলেড, ফাইবারের মত পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এছাড়াও এটিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি- ইনফ্লেমেটরি যৌগ রয়েছে, যা আমাদের কিডনি পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে। ফুলকপিতে পটাশিয়াম এর মাত্রা একটু কম থাকে যার কারনে আপনি আলুর জায়গায় ফুলকপি ব্যবহার করতে পারে।
মাছ
আমাদের বাংলাদেশীদের ভাষায় একটি প্রবাদ আছে, মাছে ভাতে বাঙালি। হ্যাঁ একথা সত্য আমাদের দেশের প্রায় প্রত্যেকটা পরিবারেরই দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় মাছ থাকে। তবে এদের মধ্যে কিছু মাছ রয়েছে যেগুলো আমাদের কিডনির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ভূমিকা রাখে।
স্যালমন ও টুনা জাতীয় চর্বিযুক্ত মাছ আমাদের কিডনি স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। ন্যাশনাল কিডনি ফাউন্ডেশন এর একটি গবেষণা অনুসারে, দেখা গেছে ওমেগা -3 চর্বি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া রক্তে চর্বির মাত্রা কমাতে এবং রক্তচাপকে কিছুটা কমাতে সাহায্য করতে পারে। কেননা শরীরে উচ্চ রক্তচাপ কিডনি রোগের ঝুঁকির কারণ। তাই উচ্চ রক্তচাপ কমানোর প্রাকৃতিক উপায় মেনে চললেই কেবলমাত্র কিডনি ভালো রাখার সহজ হবে। এক্ষেত্রে সামুদ্রিক মাছ উচ্চ মানের প্রোটিন সরবরাহ করে, এতে ওমেগা 3 নামক স্বাস্থ্যকর চর্বি রয়েছে। যেটা আমাদের কিডনির সুস্থতায় বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।
উপসংহার।
এতক্ষণে আমরা কিডনির স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য বেশ কিছু খাবারের ব্যাপারে জানতে পারলাম। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য প্রতিনিয়ত খাবার খাওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন, কেননা এটা হল সৃষ্টিকর্তার দেওয়া প্রাকৃতিক নিয়ম । তাই আমাদের শরীরের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য অবশ্যই পুষ্টিকর খাবার খাওয়া দরকার।
একটা কথা মাথায় রাখবেন, সব সময় খাদ্য সচেতন থাকবেন তো সুস্থ থাকবে।
মনোযোগ সহকারে আর্টিকেলটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আমাদের আর্টিকেলটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে ক্ষমা করে দিবেন।
( খোদা হাফেজ )
ভদ্রতা বজায় রেখে কমেন্ট করুন! কারন,প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url