আমাদের জীবনের মানে কি? ভেবেছেন কখনো!
জীবনের মানে কি? এই প্রশ্নটা যদি আপনাকে করা হয় তাহলে কি উত্তর দেবেন। ব্যাপারটা এমনও হতে পারে আপনার কাছে কোনো উত্তর নাই। আবার এমনও হতে পারে, জীবনের মানে অনেক কিছু যেমন, জব করা, টাকা কামানো, ব্যবসা করা, আরাম আয়েশ করা, ঘুরে বেড়ানো ইত্যাদি অনেক উত্তর থাকতে পারে। তবে বর্তমান সময়ে প্রযুক্তির এই যুগে এসে, আপনি কি কখন এভাবে চিন্তা করেছেন। আপনার জীবনের উদ্দেশ্যটা কি, কি করতে হবে, কিভাবে বেঁচে থাকতে হবে ইত্যাদি। আমাদের প্রত্যেকেরই জানা প্রয়োজন, জীবনের মানে কি এই সম্পর্কে।
সূচিপত্রঃ চলুন কথা না বাড়িয়ে, আজকের এই আর্টিকেলটিতে আমাদের জীবনের মানে কি এই সম্পর্কে প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য তুলে ধরার চেস্টা করি । সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
জীবনটা আসলে কি?
জীবনটা আসলে কি, হয়তো এই কথাটা শোনার পরে আপনাদের একটু রাগ হতে পারে। কারণটা হলো, পোষ্টের শুরুতেই জীবনের মানে কি এই সম্বন্ধে বলা হয়েছে, এখন আবার জীবন আসলে কি? এখানে আপনি বোলতে পারেন ,আমরা যে বেচে আছি এটাইতো জীবন। হ্যা এটা ঠিক, তবে আপনি কি কখনো নিজেকে নিয়ে ভেবে দেখেছেন। কেনই বা মহান সৃষ্টিকর্তা আপনাকে, আমাকে এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছে, উদ্দেশ্যটা কোথায়। যদিও আপনি ভেবে থাকেন, আপনার কাছে উদ্দেশ্য হতে পারে এমনটা, পড়াশোনা করতে হবে, পড়াশোনা শেষে একটি চাকরি বা ব্যবসা করতে হবে। যখন বিবাহের বয়স হবে তখন বিবাহ করতে হবে এই সকল সাধারণ চিন্তাগুলো আপনার মাথায় আসতে পারে।
এখানে আমি বলব, হ্যাঁ আপনি ঠিক আপনার চিন্তাগুলো ঠিক। এগুলো আসলে জীবনের একটা অংশ, বেঁচে থাকার জন্য আমাদের এগুলো অত্যন্ত প্রয়োজন। এটা কে এক কথায় বলা চলে Rules Of Life। কিন্তু ভাই, জীবনের এই সাধারন চিন্তাভাবনার বাইরে ও আমাদের নিজেদেরকে নিয়ে একটু ব্যক্তিগতভাবে ভাবা প্রয়োজন। তাহলে চলুন জীবন নিয়ে ভাবনা গুলো জেনে নি।
নিজের জন্য বাঁচুন।
আপনার জীবন একান্তই আপনার, এখানে সুখটাও আপনার দুঃখটাও আপনার। আপনি যদি ভাল থাকেন, তাহলে সবাই আপনাকে ভালবাসবে। কেননা বর্তমান সময়ে বলতে গেলে পৃথিবীটা স্বার্থের কাছে জিম্মি। মনে করেন, আপনি খুব হতাশায় ভুগছেন, পরিবার নিয়ে, কাছের মানুষদের নিয়ে, আর্থিক অবস্থা কিংবা বিভিন্ন কারনে। এমনও হতে পারে হতাশাটা এতটাই তীব্র যে আপনি বেঁচে থাকার ইচ্ছেটাও হারিয়ে ফেলতে পারেন।
আবার বেশিরভাগ মানুষ, তাদের জীবনটা একটি সার্কেলের মধ্যে আবদ্ধ করে রেখে। রোজ নিয়ম করে ডিউটিতে যেতে হবে, অফিস ছুটি হলে বাসায় এসে অফিসের বিভিন্ন কাজকর্ম করতে হবে ইত্যাদি। মানে পার্সোনাল জীবন বলতে আসলে কিছুই থাকেনা। এরকম সার্কেলের ভিতর থাকলে দেখা যায় একটা সময় মানুষের ভিতরে মায়া মমতা, ভালোবাসা বলতে কিছুই থাকেনা। আপনার পরিপার্শ্বিক পরিবেশে যদি আপনি তৃপ্তি না পান, তাহলে আপনার বেঁচে থাকাটাই বৃথা।
একটু আগে আমি বলেছি, আপনার জীবন একান্তই আপনার, সেখানে সুখটাও আপনার, দুঃখ দাও আপনার। তাই সবার আগে, নিজেকে এবং নিজের মানসিকতা টাকে ভালো রাখতে হবে। একটা কথা সবসময় মাথায় রাখবেন, আপনি যদি ভালো থাকেন। তাহলে আপনার পরিপার্শ্বিক পরিবেশটাও ভালো থাকবে। এক কথায় বলতে গেলে সবার আগে আপনার জন্যই আপনাকে বাঁচতে হবে।
সৎ ভাবে উপার্জন করা।
সৎ কথাটির অর্থ কি, হ্যাঁ আপনি ঠিক শুনেছেন। সৎ কথাটির অর্থ হলো সততার সাথে জীবন যাপন করা। বেঁচে থাকার জন্য আমাদের অর্থের প্রয়োজন এটা ঠিক। তবে সেটা কতটুকু, আপনার কাছে কি মনে হয়, লক্ষ কোটি টাকা। এখানে আমার কোন অসুবিধা নেই, আপনি যদি আপনার জীবনে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যান। এবং অনেক বেশি টাকা-পয়সা রোজগার করতে পারেন তাহলে কোন সমস্যা নেই, প্রত্যেকটা মানুষেরই সাফল্যের দারপ্রন্তে পৌছানোর স্বপ্ন থাকে।
তবে এখানে, বড় ব্যাপার হলো আপনি কিভাবে রোজগার করছেন, বর্তমান সময়ে সততার প্রশ্ন যদি আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষকে করা হয়। তাহলে, দেখা যাবে বেশিরভাগ মানুষই অসৎ তাদের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র টাকা রোজগার করা। সেটা হতে পারে যে কোন পথ অবলম্বন করার ক্ষেত্রেও। এমন অনেক মানুষ রয়েছে যারা সন্ত্রাসী, ডাকাতি, চুরি, ছিনতাই, ঘুষ নেওয়া ইত্যাদি অনেক উপায়ে টাকা রোজগার করে থাকে। কিন্তু ভাই, এই টাকা সাময়িক সময়ের জন্য সুখ দিলেও, জীবনের জন্য শান্তিময় হবে না।
সততা আমাদের জীবনের সবথেকে বড় একটি মূল্যবান সম্পদ , এটা আমাদের মনে প্রাণে বিশ্বাস করতে হবে। এবং আমাদের সৎ পথে থেকে ইনকাম করতে হবে, হালাল রুজি খেতে হবে। একটা কথা সবসময় মাথায় রাখবেন, একজন সৎ ব্যক্তিকেই কেবলমাত্র আল্লাহ তায়ালা সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে পারে।
মানবিকতার সাথে জীবন যাপন।
আমরা সবাই মানুষ, আমাদের ফিলিংস বোঝার জন্য আমাদের একটি মন ও বিবেক আছে। জীবনের সঠিক মানে বুঝতে হলে আমাদের অবশ্যই সবার আগে একজন সঠিক মানুষ হতে হবে। সুখে দুঃখে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। ভালো-মন্দ বোঝার সঠিক জ্ঞান থাকতে হবে। খারাপকে খারাপ বলার সৎ সাহস এবং ভালো কে ভালো বলার মন মানসিকতা থাকতে হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে তৈরি করেছেন। পৃথিবীর সকল কিছু বোঝার জ্ঞান দিয়েছেন এই জ্ঞানের অপব্যবহার করা যাবে না।
অনেক সময় দেখা যায় আমাদের সমাজের অনেক বিত্তবান ব্যক্তিরা, গরিব মানুষদের ছোট করে দেখে। এটা জীবনের লক্ষ্য নয়, মনে রাখবেন সম্পদ, টাকা পয়সা, সোনা দানা পৃথিবীতে কারো কাছেই চিরস্থায়ী নয়। পৃথিবীর সর্বোচ্চ ধনী ব্যক্তি কেও সৃষ্টিকর্তা চাইলে পথের ফকির বানিয়ে দিতে পারে।
আমাদের আশেপাশে আমরা একটু খেয়াল করলে, দেখতে পাবো এমন অনেক পরিবার রয়েছে যাদের কোন একটা সময় অনেক অর্থ সম্পদের ছিল। কিন্তু তাদের সন্তানদের, বা নাতি-নাতনি দের একটা সময় এসে বেঁচে থাকার জন্য অন্যের কাজ করতে হয়। তাহলে ভাই অর্থের মূল্য টা কোথায়। মানুষ বেঁচে থাকে তার বিবেকে, অতএব কোন মানুষকে ছোট করে দেখা ঠিক না। মানুষকে মানুষে মনে করতে হবে সেটা হোক যে কোন শ্রেণীর। কেননা আপনার মানবিকতাই আপনার সবথেকে বড় পরিচয়। এবং আপনি মানবিকতার সাথে জীবনযাপন করলেই কেবলমাত্র আপনার জীবনের মানে খুঁজে পাবেন।
ধর্মীয় বিধান মেনে চলা।
আমাদের প্রত্যেকেরই কোন না কোন একটি ধর্ম রয়েছে। সকল ধর্মই বলে, সৃষ্টিকর্তার অনুগত্য কর। আমাদের সকলেরই ধর্মের প্রতি অনুগত্য করা উচিত। এবং আমরা যারা মুসলিম রয়েছি তাদের সকলের উচিত আল্লাহ তাআলার বিধান অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা। কেননা আপনি যদি আপনার জীবনের মানে খুঁজতে চান। তাহলে অবশ্যই আপনার এটা মানতে হবে । ধর্মীয় বিধান মানা আপনার জীবনের সবথেকে বড় একটি অংশ। এবং আপনি যদি সৃষ্টিকর্তার অনুগত্য করেন তাহলে সৃষ্টিকর্তা অবশ্যই আপনার মনকে, সুস্থ, সুন্দর এবং দুশ্চিন্তামুক্ত করে দেবে।
আমাদের মুসলিম ধর্ম অনুযায়ী, আল্লাহতালার অনুগত্য স্বীকার করলে। তার বিধান অনুযায়ী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়লে, এবং সততার সাথে জীবন যাপন করলে। আপনার মনের সকল প্রকার দুঃখ দুর্দশা, আর্থিক সমস্যা, মানসিক দুশ্চিন্তা ইত্যাদি সকল সমস্যার সমাধান পাবেন। শুধু এখানেই শেষ নয়, আপনার পরিবারকেও ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী পরিচালনা করতে হবে।
অনেক সময় আমরা জীবনের মানে খুঁজতে গিয়ে লোভ লালসা শিকার হই। অর্থ ইনকাম করতে গিয়ে বিভিন্ন প্রকার পাপাচারে লিপ্ত হয়। তবে এগুলো আমাদের জীবনের লক্ষ্য নয়।
জ্ঞান অর্জন করতে হবে।
জানা বা শেখার ইচ্ছে থাকলেই কেবলমাত্র জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব। কোন মানুষই পৃথিবীতে জ্ঞান নিয়ে জন্মগ্রহণ করে না। জ্ঞানের শিক্ষায় নিজেকে আলোকিত করে নিতে হয় ধীরে ধীরে। আপনার কি করতে হবে, কোনটা করলে ভালো হবে। ভালো একটা চাকরির জন্য কতটুক পড়াশোনা করতে হবে। এছাড়াও জ্ঞান অর্জন করার জন্য আপনার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতে হবে। জ্ঞানী মানুষদের থেকে অবশ্যই শিখতে হবে। এক্ষেত্র কখনো নিজেকে বড় মনে করা যাবে না।
আমাদের সব সময় এটা মাথায় রাখতে হবে, মানুষ বয়সে বড় হয় না, মানুষ বড় হয় তার বিবেকে এবং জ্ঞানে। আপনার কাছে মনে হতে পারে মানুষ বয়সে আবার বড় কিভাবে হয় না। বয়স হলে মানুষের শারীরিক পরিবর্তন ঘটে। একটু আশেপাশে খেয়াল করলে বুঝতে পারবেন, আমাদের সমাজে এমন অনেক মানুষ রয়েছে যারা বয়সে আমাদের থেকে বড় কিন্তু বিবেকটা ছোট মানুষের মত। সব মানুষের যদি বয়সে বড় এবং বিবেকবান হত তাহলে আমাদের সমাজে এত হানাহানি, ঝই ঝামেলা কিছুই থাকত না।
তাহলে বুঝতেই পারছেন, আপনি যদি আপনার নিজের জীবনের মানে খুঁজতে চান। তাহলে অবশ্যই আপনাকে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। এটাও মাথায় রাখতে হবে জ্ঞান অর্জনের কোন বয়স হয় না।
শেষ কথা / জীবনের মানে কি?
এতক্ষণে আমরা, আমাদের জীবনের মানে সম্পর্কে কিছু তথ্য জানতে পারলাম। আসলে তথ্য বললে ভুল হবে এটা সত্য এবং বাস্তব, যেটা আমাদের সকলকেই মানতে হবে। পৃথিবীতে যত ধরনের প্রাণী রয়েছে প্রত্যেকেরই কোন না কোন সময় এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে। আমরাও কেউ এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকব না আজ আমি কাল আপনি এভাবে সবাইকে চলে যেতে হবে । আমাদের সকলেরই উচিত আমাদের জীবনের সঠিক মানে খুঁজে বের করে সেই অনুযায়ী জীবনযাপন করা।
আমি একজন মুসলিম হিসেবে বলতে চাই, আমাদের ধর্মে অবশ্যই মানুষের জীবনের অর্থ হল বিধাতার আদেশ নির্দেশ মেনে চলা। কারণ মৃত্যুর পরেও আমাদের একটি আখিরাতের জীবন রয়েছে। যেখানে আমাদের সকল পাপ পূণ্যের বিচার করা হবে। শুধু আমাদের ধর্ম বলতেই কথা নয় পৃথিবীর প্রত্যেকটা ধর্মই বলে, যেটা অন্যায় সেটা সবার জন্যই অন্যায়। যেটা পাপ সেটা সবার জন্যই পাপ। অতএব বুঝতেই পারছেন, আমরা যদি আমাদের জীবনের মানে খুঁজতে চাই তাহলে অবশ্যই আমাদের প্রত্যেকের ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী চলতে হবে। এবং বিধাতার অনুগত্য স্বীকার করতে হবে।
মনযোগ সহকারে পোস্টটি পরার জন্য ধন্যবাদ।ভাল লেগে থাকলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে দিবেন,ভুলত্রুটি হয়ে থাকলে মাফ করে দিবেন।
( খোদা হাফেজ )
ভদ্রতা বজায় রেখে কমেন্ট করুন! কারন,প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url