নিয়মিত দই খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা ।
দই আমাদের সকলেরই পরিচিত, এটি একটি সুস্বাদু খাবার, শুধু সুস্বাদু বললে ভুল হবে এটি অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দইয়ে সাধারণত প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি ১২ এবং উপকারী ব্যাকটেরিয়া যা হজম শক্তি বাড়ানো থেকে শুরু করে আমাদের দাত ও হার সহ নানাবিধ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
পোস্ট সূচিপত্রঃতবে এর কিছু অপকারিত রয়েছে, পুষ্টিকর খাবার হলেই যে আমাদের মাত্রাতিরিক্ত খেতে হবে ব্যাপারটা কিন্তু এমন নয়। আমরা যদি প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত দই খেয়ে ফেলি তাহলে শরীরে বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাহলে চলুন জেনে নেই দই খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
উপকারিতা
দইয়ে থাকা পুষ্টি উপাদান গুলো আমাদের শরীরের জন্য বেশ কার্যকর। দইতে অপকারিতার থেকে উপকারিতার পরিমাণ অধিকাংশই বেশি। তাহলে চলুন জেনে নায়া যাক দই খাওয়ার উপকারিতা গুলো কি কি?
হজমশক্তি বৃদ্ধি পায় ঃ
আমাদের ভিতরে এমন অনেক মানুষ আছে যাদের হজমে সমস্যা রয়েছে। হজমের সমস্যায় দইয়ের বেশ ভূমিকা রয়েছে। দইয়ে থাকা প্রোবায়োটিক বা উপকারী ব্যাকটেরিয়া হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এটি পেটের গ্যাস অম্বল ও কোষ্ঠকাঠিন্য জন্য অনন্য ভূমিকা রাখে।
দাঁত ও হাড়কে মজবুত করেঃ
অনেক সময় দেখা যায় অনেকে দাঁতের সমস্যায় ভুগে থাকে এবং অনেকের হাড় ক্ষয় হওয়ার মতন সমস্যা ও দেখা যায়। দইয়ে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস রয়েছে। যা আমাদের দাঁতের সমস্যা, ক্ষয় রোধ করতে এবং হাড়কে মজবুত করতে অনেক ভূমিকা পালন করে। তাই যাদের দাঁত ও হাড় ক্ষয়জনিত সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত দই খেলে এই সমস্যার সমাধান পেতে পারেন।
ত্বক ও চুলের সৌন্দর্যে ঃ
শরীরের ত্বক সুন্দর হোক আমরা সবাই চাই। এক্ষেত্রে দই আমাদের ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখতে এবং ব্রণ বা র্যাশ কমাতে সাহায্য করে। অনেকে তো অনেক সময় দই থেকে ঘরোয়া ফেসপ্যাক ও তৈরি করে ব্যবহার করে। এছাড়াও দই আমাদের চুলের খুশকি দূর করতে অত্যন্ত উপকারী। দই আমাদের শরীরের বেশ কিছু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বেশ কার্যকর।
শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ ঃ
অনেকেরই ওজনের সমস্যা রয়েছে, অনেক সময় দেখা যায় এরা ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য কম খাবার খেয়ে থাকে। তাদের জন্য দই হতে পারে একটি আদর্শ খাবার। কেননা দই প্রোটিন ও ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় এটা খেলে দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা থাকে, ফলে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমে এবং এর জন্য ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
এছাড়া ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী দই। চিনি ছাড়া সাধারণত টক দই রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করতে পারে। এটা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভালো।
গরমের সময় দেহ ঠান্ডা রাখেঃ
দই সাধারণত ঠান্ডা জাতীয় খাবার, এটি সংরক্ষন করে রাখতে ফ্রিজের ব্যবহার হয়ে থাকে। গরমের দিনে আমাদের দেহের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে দই। এবং পানি শূন্যতা দূর করার জন্য বেশ কার্যকর।
অপকারিতা
এতক্ষণে আমরা দই খাওয়ার বেশ কিছু উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারলাম। আমরা সকলে এটা হয়তো বুঝতে পেরেছি নিঃসন্দেহে দই আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত পুষ্টিকর। তবে যেমন এর উপকারিতা রয়েছে, ঠিক তেমনি কিছু অপকারিত রয়েছে। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক দইয়ের অপকারিতা সম্পর্কে।
অতিরিক্ত খেলে হজমে সমস্যা হতে পারে ঃ
উপরে আমরা জানতে পেরেছি, দই আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। তবে আমরা যদি অতিরিক্ত পরিমাণে দই খেয়ে থাকি। তাহলে কিছু মানুষের ক্ষেত্রে গ্যাস, পেট ফাঁপা,বা পেট খারাপের মতন সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই পরিমাণের বাইরে কখনো বেশি পরিমাণে দই খেতে যাবেন না।
ঠান্ডা কাশির সমস্যা বাড়তে পারেঃ
দই এমনিতেই ঠান্ডা জাতিও খাবার, এটি আমাদের শরীরের তাপমাত্রা গরমের সময় স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে যাদের ঠান্ডা কাশি প্রবণতা রয়েছে। তাদের অতিরিক্ত পরিমাণে দই খেলে এর প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে অনেকাংশে। যাদের ঠান্ডা কাশির মত সমস্যা রয়েছে তারা অবশ্যই দই পরিমাণ মতোই খাবেন।
এলার্জির সমস্যা হতে পারে ঃ
এলার্জি শুধু একটা রোগের নাম নয়, এটি একটি বিরক্তিকর সমস্যা । দুধে এলার্জিজনিত সমস্যা রয়েছে, এলার্জির সমস্যা থাকলে দুধ খেলে এর প্রবণতা বেরে যায়। আমাদের মধ্যে যাদের ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স এলার্জি আছে, তাদের জন্য দই খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ।
দই কিভাবে খাওয়া উচিত।
দই খাওয়ার কিছু উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমরা ইতিমধ্যেই জানতে পারলাম। দই অত্যন্ত পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর একটি খাবার। এটি হজম শক্তি বাড়ায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, দাঁত ও হার মজবুত করে, এছাড়াও ত্বক ও চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
তবে দই খাওয়ার বেশ কিছু পারফেক্ট সময় রয়েছে,চলুন জেনে নি এগুলো। দুপুরে বা বিকেলের সময় দই খাওয়া সবচেয়ে ভালো। রাতে ঠান্ডা অবস্থায় বা ফ্রিজ থেকে বের করে সরাসরি দই খাবেন না। ঘরোয়া ভাবে তৈরি করা দই সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর। অতিরিক্ত পরিমাণে দই খাওয়া যাবেনা। শিশুদের অবশ্যই দই খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে হবে।
উপসংহার।
দই সম্পর্কে অনেক তথ্য আমরা জানলাম, নিয়মিত দই খাওয়ার উপকারিতা কি? এবং অপকারিতাগুলো কি? কোন সময় দই খেতে হবে ইত্যাদি । আমাদের সব সময় মাথায় রাখতে হবে প্রতিটি খাবারই অতিরিক্ত পরিমাণ খেলে উপকারের চেয়ে ক্ষতিও হয়ে যেতে পারে। তাই আমাদের অবশ্যই পরিমাণ মতো খাওয়া প্রয়োজন, সেটা হোক যেকোনো ধরনের খাবার।
আমাদের দই খাওয়ার ক্ষেত্রে সব সময় সতর্ক থাকতে হবে আমরা যেন চিনি মেশানো দই খাওয়া থেকে বিরত থাকি। কেননা চিনি মিশ্রিত দই আমাদের শরীরের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এক্ষেত্রে অবশ্যই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
এতক্ষণ মনোযোগ সহকারে পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। পোস্টটি ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে ক্ষমা করে দেবেন।
( খোদা হাফেজ )
ভদ্রতা বজায় রেখে কমেন্ট করুন! কারন,প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url