নিয়মিত কচু শাক খেলে কি উপকার হয়।

পুষ্টিগুণে ভরপুর কচু শাক, আমাদের দেশের প্রায় সকল ধরনের মানুষই কচু শাকের সাথে পরিচিত। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের মানুষদের কাছে কচুশাক একটি জনপ্রিয় খাদ্য। সাধারণত গ্রাম অঞ্চলের আনাচে-কানাচে আগাছার মত জন্মে থাকে এই শাক। এক্ষেত্রে গ্রামের মানুষেরা কচু শাকের সাথে ওতপ্রতভাবে জরিত।


তবে গ্রাম অঞ্চলের বাড়ির আনাচে কানাচে এবং বন জঙ্গলের ভিতরে যে সকল কচু গাছ জন্মায় সেগুলোকে সাধারণত বুন কচু বলা হয়। কচুর অনেকগুলো জাত রয়েছে, সকল ধরনের কচু আবার খাওয়ার উপযোগী হয় না। তবে যে ধরনের কচু খাওয়ার উপযোগী সেগুলো হলো, মুখি কচু, মান কচু, দুধ মান কচু, পানি কচু, ওল কচু, সেলা কচু ইত্যাদি খাওয়ার উপযোগী। 

পোস্ট সূচিপত্রঃকচু শাক বা কচু আমরা সাধারণত সকল শ্রেণীর মানুষ খেয়ে থাকি। তবে আমরা হয়তো অনেকে কচুর উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে, জানিনা। চলুন আপনাদের সাথে আজকে আলোচনা করি নিয়মিত কচু খেলে আমরা যে সকল উপকারগুলো পাব।

কচু শাকের পুষ্টিগুন ও উপকারিতা।

কচু শাকে থাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, শর্করা বিভিন্ন প্রকার খনিজ ও ভিটামিন । আমরা যদি নিয়মিত কচু শাক খেয়ে থাকি তাহলে যে সকল উপকারগুলো পেয়ে যাব। 

চোখের উপকারেঃ

কচু শাকে থাকা প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ চোখের জন্য উপকারী। আমাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে, রাতকানা ও চোখের ছানি পড়া সহ বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় কচু শাকের ভূমিকা অনন্যা। এছাড়াও কচু শাকে থাকা ভিটামিন সি শরীরের ক্ষত সারাতে সাহায্য করে। 

কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাঃ

আমাদের মধ্যে যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা রয়েছে। তারা চাইলে নিয়মিত খাদ্য তালিকায় কচু রাখতে পারেন। কেননা কচুতে থাকা প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আশ সহজে খাবার হজম করতে সাহায্য করে থাকে। তাই যাদের কোষ্ঠকাঠির মতন সমস্যা রয়েছে তারা অবশ্যই কচু খাবেন।

শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করেঃ 

আমরা সকলেই জানি বেঁচে থাকার জন্য আমাদের অক্সিজেন কতটা গুরুত্বপূর্ণ, এক কথায় অক্সিজেন ছাড়া বাঁচা অসম্ভব। এক্ষেত্রে শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ সজল রাখার জন্য কচুর ভূমিকা অনন্য। এতে থাকা আয়রন ও ফোলেট শরীরে রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। তাই অক্সিজেন সরবরাহের সংবহন পর্যাপ্ত থাকে। কচুতে থাকা ভিটামিন- কে রক্তপাতের সমস্যাও  প্রতিরোধ করে। কচুতে আয়রন ও ক্যালসিয়াম থাকায় এটি আমাদের শরীরের হাড়কেও শক্ত রাখতে সহায়তা করে। 

রক্তশূন্যতা দূর করঃ 

কচু শাকে থাকা প্রচুর পরিমাণে আয়রন, রক্তশূন্যতায় ভোগা রোগীদের জন্য একটা আর্শিবাদ বললেই চলে। আমাদের মধ্যে যারা সাধারণত রক্তস্বল্পতায় ভুগছে তারা নিয়মিত কচু শাক খেতে পারে। এতে করে আপনার রক্তশূন্যতা দূর হবে। 

ডায়াবেটিসের ঝুকি কমেঃ 

আমাদের মধ্যে যদি কারো ডায়বেটিসের সমস্যা থেকে থাকে তাহলে কচু শাক হতে পারে একটি ভাল খাবার। কেননা কচুতে থাকা ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, রক্তে সরকরার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। এবং নিয়মিত এই শাকটি খেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে। যাদের গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটি রয়েছে তাদের জন্য কচু অনেক উপকারী।এছাড়া নিয়মিত খেলে শরীরের যে কোন প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।

দাঁত ও হাড়ের গঠনেঃ

আমাদের দাঁত ও হাড়ের গঠন এবং ক্ষয়রোগ প্রতিরোধ করতে কচু শাকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কচুশাকে সবচেয়ে বেশি উপকারিতা হল এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানির ও ফসফরাসের মত উপাদান। তাই এটি আমাদের দাঁত ও হারের গঠন এবং ক্ষয় রোগ প্রতিরোধে বেশ কার্যকর এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

খনিজ ও ভিটামিনের উৎসঃ 

কচুশাকে থাকা বিদ্যমান নানা রকমের ভিটামিন ও খনিজ উপাদান গর্ভবতী মা ও শিশুর জন্য অনেক উপকারী। কচু শাক এমনিতে সহজলভ্য, তাই দরিদ্র পরিবারের কাছে ভিটামিন ও আয়রনের চাহিদা পূরণের জন্য কচু শাকের জুরি মেলা ভার। দারিদ্র পরিবারের গর্ভবতী মায়েরা এবং শিশুরা, ভিটামিনের চাহিদা পূরণের জন্য কচু শাক খেতে পারেন। 

তাছাড়া কচু শাক খেলে রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে। এক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপে রোগীদের জন্য কচু শাক বেশ উপকারী। নিয়মিত কচু শাক খেলে কোলন ক্যান্সার ও বেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে। 

জ্বরের সমস্যায়ঃ

যদি কারো জ্বর হয়ে থাকে এবং দুধ কচু রান্না করে  খাওয়া হয়, তাহলে খুব দ্রুত জ্বর ভালো হয়ে যায়। কেননা কচুতে রয়েছে প্রচুর ফাইবার, ফলেট ও থায়ামিন যা মানব শরীরের জন্য বেশ ভালো একটি উপাদান। এছাড়াও কচুর বীজ গুর করে খেলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়ে যায়। কচুতে আয়োডিনের পরিমাণও অনেক তাই এটি চুলেরও পুষ্টি যোগায়। 

শুক্রাণু বৃদ্ধি পায়ঃ

কচু খেলে শরীরের পুস্টি উপাদান বাড়ে এবং শুক্রাণু বৃদ্ধি পায়। কান ও গলার সক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং সুরসুরি দূর করে। আমাশয় রোগের জন্য বিশেষ উপকারী কচু। 

কচু শাকের রাসায়নিক উপাদান। 

কচু শাকের সাধারণত যে সকল পরিমাণের ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান রয়েছে সেগুলো হলো। প্রতি ১০০ গ্রাম কচু শাকে থাকে ৬.৮ গ্রাম শর্করা ১০ মিলিগ্রাম লৌহ, শরকরা ৩.৯ গ্রাম, ০.২২ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি ১, ০.২৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি ২, ১২ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ১৫ গ্রাম চর্বি, ২২৭ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং ৫৬ মিলিগ্রাম  খাদ্য শক্তি। 

কচুতে এতসব রাসায়নিক উপাদান থাকা সত্ত্বেও এর মূল উপাদান হল আয়রন। যা আমাদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা এবং শরীরের অক্সিজেন সরবরাহ ঠিক রাখে। তাহলে বুঝতেই পারছেন, প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা যদি আমরা কচুশাক রাখি। তাহলে কি পরিমান পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরকে সরবরাহ করবে। 

কচু খাওয়ার সতর্কতা। 

এতসব উপাদান থাকা সত্ত্বেও, কচু খাওয়ার সতর্কতা ও রয়েছে। এমনিতে নিঃসন্দেহে বলা যায় কচু আমাদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধি একটি শাক বা সবজি। তবে কচুতে অক্সালিক এসিডের মত উপাদান থাকায় খাবার পর মাঝে মাঝে গলা চুলকানোর মতো সমস্যা হতে পারে। তাই কচু রান্না করার সময় লেবুর রস ব্যবহার করা উচিত। আর যাদের শরীরে এলার্জি সমস্যা রয়েছে তাদের কচু শাক না খাওয়াই ভালো। এতে করে আপনার এলার্জির  চাপ বেড়ে যেতে পারে। 

শেষ কথা। 

আগেই বলেছি কচু একটি শাক এটাকে কোন কোন ক্ষেত্রে সবজি ও বলা যেতে পারে। পুষ্টি উৎপাদনে ভরপুর এই শাক, খুব বেশি একটা দামের হয় না। আমরা যে কোন শ্রেণীর মানুষই খুব সহজে এটি কিনে খেতে পারে। তাছাড়া যাদের বাড়ির আশেপাশে অথবা বন জঙ্গলে কচু রয়েছে, তারা অবশ্যই প্রতিনিয়ত কম হলেও কচু খাওয়ার চেষ্টা করবেন। কেননা কচুতে কোন প্রকার কীটনাশক দিতে হয় না, প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠে।

তাই বুঝতেই পারছেন, আমরা চাইলেই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এটি রাখতে পারি। কচুর পুস্টি  উপাদানের কথা বলে আসলে শেষ করা যাবে না। 

ভালো থাকবেন, খাদ্য সচেতন থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। 

                                      (খোদা হাফেজ)


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ভদ্রতা বজায় রেখে কমেন্ট করুন! কারন,প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url