কিডনি ভাল রাখতে রোজ কত লিটার পানি খাবেন।
কিডনি আমাদের শরিরের একটি গুরুত্বপূর্ন অঙ্গ । আমরা সবাই জানি কিডনি ভাল রাখতে আমাদের অবস্যই পানি পান করতে হয়। শুধুমাত্র কিডনি ই নয় আমাদের দেহের ভেতরে চলমান বহু ক্রিয়া- বিক্রিয়ার জন্য পানি অত্যন্ত প্রয়োজন। তবে আমরা কি এটা জানি ,এই পানির পরিমান কতব। আমাদের শরিরের এই অঙ্গ ভাল রাখার জন্য রোজ আমাদের কতটুক পানি পান করা প্রয়জন। সাধারণভাবে বলা যায় একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির রোজ ৮ থেকে ৯ ক্লাস অর্থাৎ ২ লিটার পানি খাওয়া উচিত।
চলুন জেনে নেয়া যাক, একটা সুস্থ শরীরের জন্য কতটুক পানির প্রয়োজন।
পোস্ট সূচিপত্রঃ
- কিডনি আমাদের শরীরে কি কি কাজ করে।
- কিডনি আমাদের শরীরে কি কি কাজ করে।
- পানি কম বা বেশি খেলে কি হতে পারে।
- কিভাবে পানির পরিমাণ ঠিক করবেন।
- পানির চাহিদা মেটানোর জন্য শুধু কি পানি ই খাব।
- শেষ কথা।
কিডনি আমাদের শরীরে কি কি কাজ করে।
প্রতিনিয়ত আমাদের দেহে সৃষ্টি হওয়া বিভিন্ন বর্জ্য কিডনির মধ্য দিয়ে বেরিয়ে যায়। কিডনি যদি এই কাজ সঠিকভাবে করতে না পারে, তাহলে বর্জ্য জমা হতে থাকে। এর সাথে জমা হয় বাড়তি পানিও। একটা সময় দেখা যায় এই বর্জ্য এবং পানি দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয় দাঁড়াতে পারে। একটা সময় যখন এর প্রভাবটা শরীরে অনেক বড় আকার ধারণ করবে তখন বর্জ্য বের করার জন্য ডায়ালিসিস পর্যন্ত লাগতে পারে। তাহলে বুঝতেই পারছেন, আমাদের কিডনি ভালো রাখার জন্য রোজ কতটুকু পানি খাওয়া প্রয়োজন, তা জেনে রাখা আমাদের অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
রোজ কতটুক পানি খেতে হবে ।
আমাদের মধ্যে , অনেক মানুষই অনেক ধরনের কাজ করে থাকি। এক্ষেত্রে পানির পরিমাণ কারো জন্য বেশি এবং কারো জন্য কম হতে পারে। এক্ষেত্রে ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তার মোঃ মোতালেবুর রহমান, তিনি জানান একজন ব্যক্তির ঠিক কতটা পানি প্রয়োজন, তা নির্ভর করে বেশ কিছু বিষয়ের উপর। এসব বিষয়ের মধ্যে রয়েছে যেমন, বয়স, দেহের গড়ন, কায়িক শ্রম, খাদ্যাভাস, শারীরিক অবস্থা, পরিবেশের তাপমাত্রা প্রভৃতি। তাই পানি খাওয়ার পরিমাণটা নির্দিষ্ট করে দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। পানি কম বা বেশি আমাদের প্রয়োজন হতে পারে।
আরো পড়ুনঃ প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ২ কলার উপকারিতা ও গুনাগুন জানুন।
পানি কম বা বেশি খেলে কি হতে পারে।
আমাদের শরীরের জন্য পানি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। সুস্থ থাকতে হলে অবশ্যই নিয়ম মত পানি পান করতে হবে। কিন্তু যদি আমরা পানি খাওয়ার পরিমাণ কম এবং বেশি করে ফেলি তাহলে আমাদের কিডনির কার্যক্ষমতা ব্যাহত হতে পারে। পানি কম খাওয়া বা বেশি খাওয়া হলেও প্রস্রাবে সংক্রমণ হতে পারে। কিডনি বা মূত্রনালিতে পাথর হতে পারে। খুব বেশি পানি খেলে আবার রক্তে লবণের মাত্রা কমে যেতে পারে। অতিরিক্ত পানি খেলে আপনার বমি বমি ভাব, পেশীতে খিচ ধরা, খিচুনি হওয়া এমনকি জ্ঞান হারানোর মতো অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। তাই বুঝতেই পারছেন পানি আমাদের শরীরের জন্য, পরিমাণ মতোই পান করা উচিত। যেমন পানি কম খেলেও সমস্যা, তেমনি আবার বেশি খেলেও সমস্যা। তাহলে বুঝতেই পারছেন কতটা জরুরী আমাদের জানা প্রয়োজন যে কতটুকু পানি রোজ আমরা পান করব।
কিভাবে পানির পরিমাণ ঠিক করবেন।
- আপনার জন্য রোজ ঠিক কতটা পানি প্রয়োজন, তা আপনি নিজেই ঠিক করতে পারবেন। কত গ্লাস বা কত লিটার পানি খেতে হবে, তা আপনি বুঝতে পারবেন নিজের শরীরের অবস্থাতে।
- প্রস্রাব করার সময় অবশ্যই প্রস্রাবের রং খেয়াল করুন।হালকা খরের মতো হলদে রং হলে বুঝতে হবে পানি খাওয়ার পরিমাণ ঠিক আছে। তবে মনে রাখবেন, কিছু খাবার এবং ওষুধের জন্য প্রস্রাবের রং বদলে যেতে পারে। তাই ব্যাপারটা আপনার সম্পূর্ণ নিজের মতো করে বুঝতে হবে।
- আপনার শরীরের অবস্থা অনুযায়ী পর্যাপ্ত পানি খেলে আপনার রোজ চার থেকে আট বার স্বাভাবিক পরিমাণে প্রস্রাব হবে। আপনি তৃষ্ণার্ত অনুভব করবেন না কিংবা অন্য সবকিছু ঠিক থাকা সত্ত্বেও আপনি ক্লান্তি অনুভব করছেন এমনটা হবে না। এসবের অন্যথা হলে বুঝতে হবে পানি খাওয়ার পরিমাণ ঠিক নেই।
- গাড়ো প্রস্রাব হলে, প্রসাবে পানি পরিমাণ কম হলে এবং একদিনে অর্থাৎ ২৪ ঘন্টায় ৪বারের কম প্রস্রাব হলে, মুখ শুকিয়ে গেলে কিংবা কারণ ছাড়া ক্লান্তি অনুভব করলে বুঝে নিতে হবে আপনি পানিসূন্যতায় ভুগছেন।
- অন্যদিকে প্রস্রাব একেবারে রংহীন হলে, পানির পরিমাণ বেশি হলে, রোজ ৮ বারের বেশি প্রস্রাব হলে বুঝে নিতে হবে আপনি অধিক পরিমানে পানি খাচ্ছেন।
- আবহাওয়া খুব গরম হলে, শরীরে অতিরিক্ত ঘাম হলে, এবং আপনি যদি প্রচন্ড শারীরিক পরিশ্রম করেন কিংবা জ্বর হলে পানি পরিমাণ খানিকটা বাড়িয়ে দিতে হবে। আবার যখন আবহাওয়া ঠান্ডা হবে এমনিতেই আপনার পানির পরিমাণ কম লাগবে।
- আপনার যদি কিডনিতে পাথর হওয়ার সমস্যা থাকে তাহলে অবশ্যই আপনি পানি খাওয়ার পরিমাণ একটু বাড়িয়ে দিবেন। অন্য কোন কারণে পানি খাওয়া বিধি নিষেধ না থাকলে দিনে অত্যন্ত ৩ লিটার পানি খাওয়া স্বাভাবিকভাবে উচিত।
পানির চাহিদা মেটানোর জন্য শুধু কি পানি ই খাব।
আমাদের শরীর সুস্থ রাখার জন্য এবং কিডনিকে সচল রাখার জন্য পানি অবশ্যই প্রয়োজন তা আপনারা জেনেছেন। আপনাদের মনে একটা প্রশ্ন আসতেই পারে যে শরীরে পানি ঘাটতি পূরণের জন্য শুধু কি পানি খাব? ব্যাপারটা আসলে ঠিক এমন না, পানি আমরা বিভিন্ন খাবার থেকেও পেয়ে থাকে। যেমন, সুপ, ডাল, পাতা ঝরে তরকারি, এমনকি ভাত ও পানির উৎস। তবে কোমল পানীয়, এনার্জি ড্রিংক বা অ্যালকোহল জাতীয় পানিও গ্রহণ না করাই ভালো। তাতে কিডনির ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ করলে প্রস্রাব বেশি হয়। এতে করে পানির ঘাটতিতে ভুগতে হতে পারে। এই বিবেচনায় হারবাল চা কিংবা ডিফেক্ট কফি তুলনামূলক স্বাস্থ্যকর পানীয়। এছাড়াও ফলমূল, ফলের রস, লাউ, চিচিঙ্গা, মিষ্টি কুমড়া, অন্যান্য যেকোনো সবজিতে পানির পরিমাণ থাকে।
খাদ্য তালিকার পানির সব উৎস মিলিয়ে পানির পরিমাণ ঠিক থাকলেই হয়। তাতে সুস্থ থাকবেন আপনি এবং আপনার কিডনি দুটোই।
শেষ কথা।
পানি শুধু আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এখানেই শেষ নয়। বলা হয়ে থাকে পানির অপর নাম জীবন। পানি ছাড়া আমরা বাঁচতে পারব না, বেঁচে থাকার জন্য অবশ্যই পানি আমাদের খেতে হবে। আমাদের শরীরের সুস্থতার জন্য পানির গুরুত্ব সব থেকে বেশি। তবে পানি পরিমাণ মতোই খাওয়া উচিত। এতক্ষণে পানি কতটুক খাবেন কি পরিমানে খাবেন, সবকিছুই জানতে পারলেন। আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে পানি খাবেন, যখন যতটুক পরিমানে পানি আপনার শরীরে প্রয়োজন। ঠিক ততোটুক ই পানি খাবেন। মনে রাখবেন, পানি কম খেলেও সমস্যা, বেশি খেলেও সমস্যা। তাই সব সময় পরিমাণ মতোই খাবেন।
মনোযোগ সহকারে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। সব সময় সচেতন থাকবেন, সুস্থ থাকবেন ( ধন্যবাদ )
ভদ্রতা বজায় রেখে কমেন্ট করুন! কারন,প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url