লিচুর উপকারিত ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন।
লিচু পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আমাদের মধ্যে অনেকেরই লিচু অনেক প্রিয় ফল। লিচু গ্রীষ্মকালীন ফল। সাদে রসালো এবং সুমিষ্ট এই ফল। লিচুর বৈজ্ঞানিক নাম Litchi chinensis। বাংলাদেশের ভিতরে রাজশাহী এবং দিনাজপুরে সবথেকে বেশি পরিমাণে লিচু উৎপাদিত হয়। হাজার রকম পুষ্টিগুণে ভরপুর এই লিচু আপনার শরীরকে অনেক ধরনের অসুস্থতার হাত থেকে রক্ষা করবে। আজ আমরা লিচু খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করব।
চলুন সময় নষ্ট না করে লিচু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেই। এর সাথে আরও জেনে নেই লিচু কখন খাব এর সঠিক নিয়ম কি।
লিচু আমরা কেন খাব।
ইতিমধ্যেই আমরা জানতে পেরেছি যে লিচু গ্রীষ্মকালীন মৌসুমী ফল গুলির মধ্যে একটি। আমাদের সমাজের প্রায় সকল শ্রেণীর মানুষই কমবেশি লিচু পছন্দ করে। লিচুতে রয়েছে, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ এবং কপার যা হারের ক্যালসিয়াম শোষণের সাহায্য করে। লিচুতে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন সি। ক্যালসিয়ামের উপকারিত হয়তো আমরা অনেকেই জানি। ক্যালসিয়াম আমাদের দাঁত, চুল, ত্বক, ও নক ভালো রাখে। প্রতি ১০০ গ্রাম লিচুতে থাকে ১৩.৬ গ্রাম শর্করা, ক্যলরি ৬১ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১০ মিলিগ্রাম, লৌহ ০.৭ মিলিগ্রাম, ও ভিটামিন সি ৩১ মিলিগ্রাম। লিচুতে এত পুষ্টি উপাদান থাকার কারণে আমরা লিচু কেন খাব না। তবে এর উপকারের পাশাপাশি বেশ কিছু অপকারিত রয়েছে। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক লিচুর উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো।
আরো পড়ূনঃ পেপের উপকারিতা ও গুনাগুন।
লিচু খাওয়ার উপকারিতা।
উপরে আমরা লিচুর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এ সকল পুষ্টিগুণ আমাদের শরীরের কি কি উপকারে আসে চলুন, সেগুলো জেনে নি।
- হাড়ের যত্নে লিচুর ভূমিকা রয়েছে।লিচুতে থাকা প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ,এবং কপার যা হাড়ের ক্যালসিয়াম শোষণে ভূমিকা রাখে। লিচু খেলে হাড়ের ভঙ্গুরতা কমে ও অস্টিঅপোরোসিস ও ফ্যাকচারের সম্ভাবনা কমায়।
- লিচুতে রাইবোক্লবিন এবং নিয়ে আসেন, ভিটামিন সি, কে, ই এবং বি ৬ রয়েছে। লিচুর এই ভিটামিন লোহিত রক্ত কণিকা তৈরিতে সাহায্য করে। এছাড়া লিচু প্রদাহ জনিত রোগ থেকে আমাদের শরীরকে রক্ষা করে।
- কিডনি আমাদের শরিরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ।কিডনির জন্য লিচু খুবই উপকারী একটি ফল। কেননা তে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি এবং পটাশিয়াম যা কিডনিতে জমে থাকা দূষিত পদার্থ বের করে কিডনি ইউরিক এসিডের ঘনত্ব কমায়।
- লিচু নিয়মিত খেলে সর্দি ও সাধারন ফ্লু থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও লিচু অলিগনাল ভাইরাস কে বাড়াতে বাধা প্রদান করে।
- ব্যাথা নাশক হিসেবে লিচুর গুরুত্ব রয়েছে। লিচু খেলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের ব্যথা দূর হয়। লিচু শরীরের প্রদাহ কমায় এবং টিস্যুর ক্ষতির প্রতিরোধ করে।
- লিচুতে থাকে নাইট্রিক অক্সাইড যা শরীরের রক্ত চলাচলের সাহায্য করে। লিচুতে থাকা অলিগোনাল, যা নাইট্রিক অক্সাইড তৈরি করে। এছাড়া ফ্লাবোনয়েড ভাস্কুলার ফাংশন উন্নত করে যা হার্টের সমস্যা সমাধানে বেশ কার্যকর।
লিচু খাওয়ার অপকারিতা।
উপরে নিম্নলিখিত আমরা লিচু খাওয়ার অনেক উপকারিতা সম্বন্ধে জানলাম। আমাদের একটা জিনিস সব সময় বুঝতে হবে, যার ভালো দিক আছে তার খারাপ দিক রয়েছে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক লিচু খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে।
- প্রতি ১০০ গ্রাম লিচুতে ৬৬ ক্যালরি থাকে। অনেক সময় এত পরিমাণে ক্যালরি আমাদের শরীরের ওজন বাড়াতে ভূমিকা রাখতে পারে। তাই সর্বদা আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, অতিরিক্ত পরিমাণে লিচু যেন আমরা না খেয়ে থাকি।
- রক্তের গ্লুকোজ কমাতেও লিচুর ভূমিকা রয়েছে। আমরা যদি একসঙ্গে অনেক বেশি পরিমাণে লিচু খেয়ে থাকি তাহলে আমাদের হাইপোগ্লাসাইসেমিয়া হতে পারে। যাদের ডায়াবেটিস আছে এবং ডায়াবেটিসের ওষুধ খায় তাদের লিচু খাওয়ার ব্যাপারে সর্বদা সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। বাচ্চাদের লিচু কখন নিয়ে খালি পেটে খাওয়ানো উচিত না।
- বেশি লিচু খেলে রক্তচাপ কমে যেতে পারে যার ফলে বাড়তে পারে শ্বাসকষ্ট,, বুক ধরফর করা,, মাথা ঘুরানো,, বমি প্রবাহনতা ইত্যাদি হতে পারে।
- বেশ কয়েকদিন একটানা লিচু খেলে ইমিউনিটি বেড়ে যেতে পারে। যার ফলে রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিস,, মাল্টিপাল,, লুপাস ইত্যাদি রোগ থাকলে তা বাড়তে পারে।
- লিচুতে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, জরুরী ফ্যাটি আছে নেই। যার ফলে বেশি পরিমাণে লিচু খেলে স্বাভাবিক ব্যালেন্স নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
লিচু কিভাবে খাবেন।
লিচু আমাদের পরিচিত নাম এটা তো সবাই বুঝতে পারছে। তবে লিচু আমরা অনেকেই অনেকভাবে খেয়ে থাকি। এতক্ষণে আমরা এটাও জানতে পারলাম লিচু অবশ্যই আমাদের জন্য উপকারী একটি ফল। তবে চাহিদার থেকে বেশি খেয়ে ফেললে আমাদের শরীরে যেকোন খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। এক্ষেত্রে লিচু খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে অবশ্যই আমাদের জানা উচিত। লিচুতে রয়েছে হাইপোগ্লাইসন এ,,এম সি পি জি ইত্যাদি যা শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। বড়জোর সারাদিনে আপনি ৭ থেকে ৮ লিচু খেতে পারেন। বেশি পরিমাণে লিচু খেলে জর সহ নানা সমস্যা হতে পারে। লিচু খালি পেটে আপনি কখনোই খাবেন না। খালি পেটে লিচু খাওয়া একদমই ঠিক না। এ তো করে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। লিচু খাবার ৩১ মিনিট পর খাওয়া যেতে পারে। তাহলে শরীরের জন্য ঠিকঠাক কাজ করবে। রাতের বেলা লিচু বা অন্য কোন ফল খাওয়া ঠিক না, এতে আপনার গ্যাসের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।
লেখক এর শেষ কথা।
এতক্ষণে আমরা লিচু সম্বন্ধে সমস্ত তথ্য জানতে পারলাম। লিচু পছন্দ করেন এমন মানুষ পাওয়া মুশকিল। লিচুর পুষ্টিগ্ন রয়েছে যেটা অতুলনীয়। তবে একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে, যেকোনো জিনিস পর্যাপ্ত পরিমাণে কারো শরীরের জন্য এই উপকারই হতে পারে না। লিচু খেলে আপনি যেমন উপকার পাবেন। তেমনই বেশি পরিমাণে ছেলে অর্থাৎ যতটুক খাওয়ার প্রয়োজন তার থেকে বেশি খেলে পড়তে পারেন না নাবিদ সমস্যায়। সর্বদা আমাদের সকলের সব সময় খাদ্য সচেতনতায় থাকা উচিত। পরিবারের সকল সদস্যদের ও খাদ্য সচেতনতায় রাখা উচিত। লিচু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে সম্পদ সম্পন্ন পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
আশা করি লিচু সম্বন্ধে আপনি জানতে পেরেছেন, প্রয়োজনের বাইরে কোন কিছুই বেশি খাবেন না। সেটা ফ্রিতে হলেও নয়। আত্ম সচেতনতায় থাকুন সুস্থ থাকুন।
(খোদা হাফেজ)
ভদ্রতা বজায় রেখে কমেন্ট করুন! কারন,প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url