কমলার উপকারিতা ও যত পুষ্টিগুণ।
কমলা লেবু ,আমরা কে না চিনি, আমাদের সবার সাথেই পরিচিত এই ফলটি। বছরের প্রায় সকল সময়ে এই ফলটি আমাদের দেশে পাওয়া যায়। পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং স্বাধে অনন্য এই ফল। আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য কমলার গুরুত্ব অপরিসীম। কমলা ভিটামিন সি এর একটি ভালো উৎস।
শুধু কমলাতেই নয় এর খোসাতেও রয়েছে পুষ্টিগুণ।আমাদের দেশের, আবহাওয়ার প্রেক্ষাপটে জ্বর, সর্দি কাশিতে ভোগে নাই এমন মানুষ খুব কম আছে। আমরা হয়তো অনেকেই জানিনা, কমলালেবুর খোসা খেলে জ্বর, সর্দি, কাশির মতো অসুস্থতা থেকে মুক্তি মেলে। তাই এক কথায় বলা চলে, আমাদের দৈনন্দিন সুস্থতায় কমলার গুরুত্ব অপরিসীম।
আজকে আপনাদের সাথে, কমলার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আলোচনা করব। জেনে রাখুন কমলা আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারী ও পুষ্টিকর একটি ফল। মনোযোগ সহকারে পোস্টটি পড়ুন, কেননা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সুস্বাস্থ্যের উপর নজর আমাদেরকেই দিতে হবে। কথা না বাড়িয়ে, চলুন জানা যাক কমলালেবুর সম্পর্কে।
রোগ সংক্রমণ থেকে মুক্তি।
কমলায় উচ্চমাত্রায় ভিটামিন সি থাকে। যা আমাদের শরীরের হিউম্যান সিস্টেম মজবুত করতে অনন্য ভূমিকা পালন করে। ফলে আমাদের শরীরের বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পায়।
ত্বক ভালো রাখে।
সাধারণত আমরা সবাই চাই, আমাদের শরীরের ত্বক যেন সুন্দর থাকে কেননা, সুন্দর" সবার কাছেই সুন্দর। তাছাড়া ত্বক সুস্থতার উপর আমাদের শারীরিক সুস্থতা অনেকাংশেই নির্ভর করে। যাইহোক, আমাদের জেনে রাখা উচিত কমলা ত্বকের জন্য বেশ কার্যকর। এটি আমাদের ত্বকের সুস্থতা ও লাবণ্যতা বৃদ্ধিতে যথাযথ ভূমিকা পালন করে।
চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
কমলা একটি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ফল। ইতিমধ্যে আমরা এটা জেনেছি যে, কমলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। আমাদের চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য, ভিটামিন সি কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, তা হয়তো আমরা অনেকেই জানি। দৃষ্টিশক্তির ক্ষমতা বাড়াতে কমলা বেশ কার্যকর। আমাদের মধ্যে যাদের চোখের সমস্যা রয়েছে, তারা অবশ্যই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কমলা ফলটি রাখার চেষ্টা করবেন। প্রতিনিয়ত কিছুদিন খাওয়ার পরে এর ফলাফলটি আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন।
ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে।
ক্যান্সার, একটি ভয়ানক অসুখের নাম। আমাদের আশেপাশে মাঝেমধ্যে আমরা দেখতে পাই, ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মানুষ মারা যাচ্ছে। হয়তো চিকিৎসার কারণে কিছুদিন ভালো থাকলেও, একটা সময় নিস্তেজ হয়ে যায়।
ক্যান্সার আসলে একটি মরণব্যাধি রোগের নাম, যা থেকে মুক্তি একেবারেই অসম্ভব। তবে আমাদের সকলের জেনে রাখা উচিত, কমলা ক্যান্সার প্রতিরোধে বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখে। ইতিমধ্যে আমরা জানতে পেরেছি কমলায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন রয়েছে তবে এর পাশাপাশি রয়েছে আলফা ও বেটা ক্যারোটিনের মত ফ্লাভনয়েড এন্টিঅক্সিডেন্ট সহ ও অন্যান্য এন্টিঅক্সিডেন্টের যৌগ। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের এর যৌগই ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকর।
শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে।
কমলার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আমরা তো অনেক কিছুই জানতে পারলাম। তবে আমাদের এটাও জানতে হবে, শুধু কমলাই নয় কমলার খোসাতেও পুষ্টি রয়েছে। কমলার খোসায় চিনির পরিমাণ নাই বললেই চলে, তাই এটা আমাদের রক্তের শর্করার মাত্রায় প্রভাব ফেলে। আমাদের মধ্যে যাদের ডায়াবেটিস ও মেটাবলিক সিন্ড্রমের সমস্যা রয়েছে তাদের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। এক্ষেত্রে কমলা এবং কমলার খোসা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনেক উপকারী।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
রক্তচাপ অর্থাৎ পেশার, আমাদের মধ্যে অনেকেরই উচ্চ রক্তচাপ অর্থাৎ হাই প্রেসার এবং নিম্ন রক্তচাপের অর্থাৎ লো প্রেসার সমস্যা রয়েছে। উচ্চ রক্তচাপের কারণে, মানুষের শরীরে নাড়াবিদ সমস্যা দেখা দিতে পারে তাছাড়া অনেক সময় অনেকের স্ট্রোকের মতন সমস্যা হয়ে থাকে।
উচ্চ রক্তচাপের সমস্যাটা কে আমরা কোনমতেই হেলা করতে পারব না। আপনাদের মধ্যে যাদের উচ্চ রক্তচাপের মতন সমস্যা রয়েছে তারা অবশ্যই, প্রতিনিয়ত খাদ্য তালিকায় কমলা রাখার চেষ্টা করবেন। এতে করে আপনি হাই প্রেসার এর মত সমস্যাটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন। তাছাড়া হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণে রাখতেও কমলার বেশ ভূমিকা রয়েছে।
শরীরের ওজন কমায়।
সুস্বাস্থ্য কার না পছন্দ, আমরা সবাই চাই শারীরিকভাবে ফিট থাকি, কারণ সুস্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। তবে যদি স্বাস্থ্য অনেক বেশি হয়, তাহলে এটা একটি অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কারণ অতিরিক্ত ওজন বয়ে বেড়ানো একটা অস্বস্তিকর ব্যাপার। তবে শারীরিকভাবে শরীরের ওজন কমানোর জন্যও কমলার ভূমিকা রয়েছে। কমলা ক্যালোরি ফ্রি একটা ফল,ক্যালোরি ফ্রি থাকার কারণে যদি, প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কমলা রাখা হয়। তাহলে এটা শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করবে।
দাঁতের ক্ষয়জনিত সমস্যার সমাধানে।
দাঁতে ব্যথা ,দাতের ক্ষয়, আমাদের মধ্যে যাদের এই ধরনের সমস্যা রয়েছে। তারাই কেবলমাত্র এর বেদনাদায়ক ব্যথা অনুভব করে থাকে। এক্ষেত্রে, বলা যায় কমলা দাঁতের মাড়িতে ব্যাথা এবং দাঁতের ক্ষয়জনিত সমস্যায় সবচেয়ে উপকারী একটি ফল। গুণের দিক থেকে একটি কমলাতে ভিটামিনের পাশাপাশি আরো রয়েছে ফোলেট, কপার এবং প্রচুর আশ। তাই যাদের মাড়িতে কিংবা দাঁতের ক্ষয়জনিত সমস্যা রয়েছে, তারা খাদ্য তালিকায় কমলা রাখতে পারেন।
উপসংহার।
কমলার পুষ্টিগুণ ও কার্যকারিতা সম্পর্কে, আমরা অনেক তথ্য জানতে পারলাম। মৌসুমবাগী কমলা যেকোনো সময় পাওয়া গেলেও, শীতের সময় কমলালেবুর দেখা মিলে সব থেকে বেশি। আমাদের শারীরিক সুস্থতার জন্য পুষ্টিকর খাবার অবশ্যই খাওয়া প্রয়োজন। কেননা সঠিক খাদ্য অভ্যাস ই পারে কেবলমাত্র আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে। শিশুদের মেধা বিকাশ এবং পুষ্টির ঘাটতি মেটাতে অবশ্যই কমলা খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন। যদিও কমলার দাম আমাদের দেশে একটু বেশি, তারপরও আপনি যদি আর্থিকভাবে সচ্ছল হয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অবশ্যই কমলা রাখার চেষ্টা করবেন ।
মনোযোগ সহকারে এতক্ষণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আমাদের এই আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে, কমেন্ট করবেন এবং বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। এতে করে তারাও জানতে পারবে কমলার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে। কেননা খাদ্য সচেতন থাকলেই কেবল মাত্র, সুস্থ থাকা সম্বব।
( খোদা হাফেজ )
ভদ্রতা বজায় রেখে কমেন্ট করুন! কারন,প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url