মানুষের মৃত্যু না হলে, যা ঘটতে পারে পৃথিবীতে?
মানুষের মৃত্যু না হলে কি ঘটতে পারে পৃথিবীতে? ব্যাপারটা শুনে কেমন যেন মনে হচ্ছে তাই না, ইস সত্যি যদি এমনটা হতো, হাজার হাজার বছর পৃথিবীতে বেঁচে থাকবো, মারা যাওয়ার কোন চিন্তাই থাকবে না। পৃথিবীর অনন্য সৌন্দর্য উপভোগ করতাম, আরাম আয়েশ খাওয়া দাওয়া ও ফুর্তি করতাম, মন যা চায় তাই করতে পারতাম,কোন দায়বদ্ধতা থাকতো না, এমনই তো ব্যাপারটা হত, তাইতো।
ব্যাপারটা আসলে যতটা সুখের ভাবছেন মোটেও ততটা সুখের নয়। আপনি বর্তমান সময়ে পৃথিবীটা যেমনটা দেখছেন, মানুষের মধ্যে যদি মৃত্যু না হতো তাহলে বরং এর থেকে অনেক বেশি ঝামেলা হতো। তাহলে চলুন আজকের আর্টিকেল টিতে আপনাদের সাথে, মানুষের মৃত্যু না হলে কি ঘটতে পারে পৃথিবীতে, এই ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করার চেষ্টা করব । মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ুন।
বর্তমানে পৃথিবীর জনসংখ্যা নিয়ে কিছু তথ্য।
মানুষের মৃত্যু না হলে পৃথিবীতে যা ঘটবে, এই প্রতিবেদনের পূর্বে আমরা, আমাদের পৃথিবীর জনসংখ্যা সম্পর্কে কিছু পরিসংখ্যান জেনে নেই। আজ থেকে আরো এক হাজার বছর পূর্বে অর্থাৎ এক হাজার সালে পৃথিবীর জনসংখ্যা ছিল মাত্র ৪০ কোটি। এর প্রায় ৮০০ বছর পরে পৃথিবীর জনসংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে ১০০ কোটি। অর্থাৎ ১৮০০ সালে পৃথিবীর জনসংখ্যা ৪০ কোটি থেকে বেড়ে ১০০ কোটিতে এসে পরিপূর্ণ হয়। এবং ১৮০০ সাল থেকে বর্তমান সময়ে পৃথিবীর জনসংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭৫০ কোটি। গত ২২৫ বছরে জনসংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৭ গুণ, যা ৮০০ বছরে তুলনায় অনেক বেশি।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী পৃথিবীতে বর্তমানে প্রতিদিন ৩,৬০,০০০ শিশু জন্মগ্রহণ করে। তবে এদের মধ্যে আবার, ১,৫২,০০০ শিশু মারা যায়। যদি এই হারে পৃথিবীর জনসংখ্যা বাড়তে থাকে, তাহলে পরিসংখ্যান বিদের ধারণা অনুযায়ী ২০৫০ সালে পৃথিবীর জনসংখ্যা হবে ৯৮০ কোটি এবং ২১০০ সালের মধ্যে তা ১১০০ কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে।
মানুষের মৃত্যু না হলে যা হতে পারে।
উপরে আমরা পৃথিবীর, মানুষের জন্মের হার সম্বন্ধে বেশ কিছু তথ্য জানতে পারলাম। এক্ষেত্রে মানুষ যেমন জন্মগ্রহণ করছে তেমনি মৃত্যুবরণ করছে। এখন মূল ঘটনা আসা যাক,মানুষ মারা না গেলে কি হতে পারে? আপনি কি বলতে পারবেন, আপনার পরিবারে ১০০ বছর আগে কে কর্মক্ষম ব্যক্তি ছিল। হয়তো আপনি বলতে পারবেন না, আমিও আমার পরিবারের ব্যাপারে বলতে পারব না। ধরুন আপনার পূর্বপুরুষ যারা ছিল, তারা যদি মারা না যেত। তাহলে আপনার পরিবারের সদস্যই না যেন কতজন হত।
এইভাবে যদি, পৃথিবীর মানুষ মারা না যেত তাহলে মানুষের সংখ্যা খুব দ্রুত ও গতিতেই বৃদ্ধি পেতো। মারা যাওয়ার পরও ,এখন যদি ৭৫০ কোটি মানুষ পৃথিবীতে থাকে, মারা না গেলে এর পরিমাণটা হয়তো দুই গুণ, তিনগুণ, চার গুণ এভাবে বহুগুণ বৃদ্ধি পেত। এই বাড়তি মানুষের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে পৃথিবীতে বিদ্যমান সম্পদ খুব দ্রুত নিঃশেষ হয়ে যেত এবং পৃথিবীতে বেকারত্বের সমস্যা প্রবল হয়ে উঠতো । কেননা আমাদের প্রত্যেকেরই বেঁচে থাকার জন্য বাসস্থান এবং খাবারের প্রয়োজন।
তাহলে ভাবুন তো একবার, যেখানে পৃথিবীর বর্তমান জনসংখ্যার মধ্যে অনেক দেশের, অনেক জাতির মানুষ রয়েছে যারা ঠিক মতন খেতে পায় না। তাহলে ভাবুন তো, এত মানুষের জীবনযাপন কিভাবে সম্ভব হতো।
অপরাধ বেড়ে যাবে।
বর্তমান সময়ে, আমাদের দেশে বেকারত্বের হার অনেক বেশি। শুধুমাত্র আমাদের দেশেই নয়, পৃথিবীর এমন অনেক দেশ রয়েছে। যেখানে বেকারত্বের সংখ্যা ক্রমশই বেড়ে চলছে। যদি মানুষ মারা না যেত, তাহলে বেকারত্বের সংখ্যাও তো অনেক বেশি গুন হারে বাড়তে থাকতো ।
তখন দেখা যেত, মানুষ কোন কিছু করতে না পেরে জীবনের প্রয়োজনে অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে উথেছে । চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি ইত্যাদি বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িয়ে পড়তো। এর ফলে মানুষের জীবন হয়ে উঠতো নিরাপত্তাহীন। আপনার যতই অর্থ সম্পদ থাকুক না কেন, আপনি যদি নিরাপদে বসবাস না করতে পারেন। তাহলে ভাবুন তো, সেই সময়ের পরিস্থিতিটা কেমন হতো। সেই সময় মানুষের জীবন হয়ে উঠতো খুবই কষ্টকর এবং বেদনাদায়ক।
পরিবেশ দূষণ হবে।
বর্তমান সময়ে আমাদের পৃথিবীতে, যে পরিমাণে জনসংখ্যা রয়েছে। তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার জন্য অনেক মিল, ফ্যাক্টরি,,কারখানা স্থাপন করতে হয়েছে । এতে করে অনেক বেশি পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। এই পরিবেশ দূষণের কারণে, প্রতি বছর অনেক মানুষ মারা ও যাচ্ছে।
এখন ভাবুন আমি, আপনি আমরা কেউ যদি মারা না যেতাম তাহলে পৃথিবীর এত জনসংখ্যার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার জন্য। অনেক বেশি পরিমাণে মিল, ফ্যাক্টরি ও কারখানার স্থাপন করতে হতো। এতে করে পৃথিবীর পরিবেশ দূষণ অনেক অংশে বেড়ে যেত, অন্যদিকে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পেত। যার কারনে মানুষের রোগ ব্যাধিও ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেত। ধরুন আপনার এরকম একটি সমস্যা হল, আপনি খুব অসুস্থতার মধ্যে আছেন, বিছানা থেকে উঠে হাঁটতে পারছেন না, ঠিক মতন খেতে পারছেন না, শরীরে প্রচন্ড পরিমাণে যন্ত্রণা কিন্তু আপনি মরছেন না । এমন হলে ব্যাপারটা আসলেই খুব বেদনাদায়ক ।তাহলে বুঝতেই পারছেন মানুষের মৃত্যু না হলে কি হত?
মানুষের জীবন যন্ত্রণাদায়ক হয়ে উঠবে।
আমরা ধরে নিয়েছিলাম, কেউই মারা যাবো না। আপনি যদি মারা না যান, তাহলে আপনার ভিতরে ভয় কাজ করবে না। আপনি পাপাচারে লিপ্ত হবেন, বিভিন্ন ধরনের অন্যায় অপকর্ম করতে থাকবেন। বেঁচে থাকার জন্য যুদ্ধ করতে হবে, কেননা কারো ভিতরেই তো মৃত্যুর ভয় নেই। এগুলো করতে করতে পৃথিবী এক প্রকার নরকের যন্ত্রণায় দগ্ধ হতে থাকবে। তখন মানুষের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি চাইবে, পৃথিবী থেকে বেঁচে থাকার ইচ্ছে হারিয়ে যাবে। তবে আপনি চাইলেই কিন্তু মরতে পারবেন না, ওই যে আগেই ধরে নিয়েছিলাম,আমাদের মৃত্যু হবে না।
আবার পৃথিবীতে মানুষের মৃত্যু না হলে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ সমূহের মধ্যে, স্বার্থের দ্বন্দ্ব বেড়ে যাবে। সবাই চাবে সামরিক ভাবে শক্তিশালী হতে, এদের মধ্যে প্রভাবশালী যে দেশগুলো রয়েছে তারা যে কোন উপায়ে বছরের পর বছর তাদের প্রভাব ধরে রাখার জন্য সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করতো । এর ফলে পৃথিবীতে সৃষ্টি হতে থাকবে ভয়ঙ্কর মরণাস্ত্র। বর্তমান সময়ের থেকে কয়েকগুন শক্তিশালী হাইড্রোজেন বোমা, পারমাণবিক বোমা,যা একটা দেশে মুহূর্তের মধ্যে ধ্বংস করে দিতে পারে।
একটা সময় পৃথিবীটাই নরক হয়ে উঠবে।
আমাদের পৃথিবীতে বর্তমান সময়ে, কতজন মানুষই বা সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারে। বিভিন্ন সমস্যার কারণে, অনেক মানুষ অনেক সময় বেঁচে থাকার ইচ্ছে হারিয়ে, সুইসাইড এর মত পথ বেছে নেয়। আমাদের গড় আয়ু কতই বা, তাতেই বেঁচে থাকার ইচ্ছে হারিয়ে ফেলে। আর যদি, পৃথিবীর মানুষ মারা না যেত, বছরের পর বছর বেঁচে থাকত তাহলে কতইনা সমস্যার সম্মুখীন হতে হত।
বর্তমান সময়ে মানুষের তৈরি যে ধরনের প্রযুক্তি রয়েছে, এর থেকেও বেশি পরিমাণে প্রযুক্তির ব্যবহার হত। একটা সময় এমনও হতে পারতো, মানুষের তৈরি প্রযুক্তি ই পৃথিবী ধ্বংস করে ফেলছে। সব থেকে বড় কথা মানুষের ভিতরে মৃত্যুর ভয় না থাকলে পৃথিবী হয়ে উঠতো আমাদের জন্য নরক।
উপসংহার।
উপরে আমরা, মানুষের মৃত্যু না হলে পৃথিবীতে কি হতে পারে। এ ব্যাপারে অনেক কিছুই জানতে পারলাম, যদি আমাদের মৃত্যু না হয় তাহলে, আসলে খুশি হওয়ার তেমন কিছু নই। পৃথিবীতে কোন শাসন ব্যবস্থা থাকত না, কোন মানুষ কাউকেই ভয় পেত না। যে যার মত নিজের প্রভাব খাটিয়ে রাজত্ব করতে চাইতো। যেটা আমাদের সমাজ, দেশ ও পৃথিবীর জন্য অমঙ্গল বয়ে আনত।
মানুষ মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে, মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের যেমন জীবন দিয়েছে ঠিক তেমনি মৃত্যু দিয়েছে। জন্ম মৃত্যু আমাদের জীবনের একটি অংশ, যেটা অনন্য সত্য আমাদের মানতেই হবে। জন্ম যার হবে, তার অবশ্যই মৃত্যুর স্বাদ নিতে হবে। মহান সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীতে মানুষের আসা-যাওয়ার যে বিধান করে দিয়েছে, সেটাকে সর্বোত্তম বিধান মেনে তার উপর সন্তুষ্টি আদায় করা আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত।
অনেক কথাই বলে ফেললাম আপনাদের সাথে। ভুলত্রুটি হলে ক্ষমা করে দিবেন। এবং, মনোযোগ সহকারে আমাদের এই পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ, সবাই ভাল থাকবেন,সুস্থ থাকবেন।
( খোদা হাফেজ )
ভদ্রতা বজায় রেখে কমেন্ট করুন! কারন,প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url